'কী আনন্দ! আমরা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠেছি। লক্ষ্য আমাদের এক... শিরোপা জয়!'
-ফেসবুকে লিখেছেন লিওনেল মেসি।
'শাবাশ! আমাদের দলই সেরা! এখন আমরা শিরোপার শেষ প্রান্তে! আহা, কি আনন্দ!
-টুইটারে লুইস সুয়ারেজের স্ট্যাটাস।
'এখন ফাইনালে প্রতিপক্ষ কে হয় হোক, কাউকে তোয়াক্কা করি না। আমি প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে খেলব। ভাবতেই অবাক লাগছে! কী মজা!'
-নেইমারের মন্তব্য!
বার্সার তিন বর্শা-মেসি, সুয়ারেজ ও নেইমার! সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিন সুপারস্টারের মন্তব্য দেখেই বোঝা যায় ম্যাচের ফল কী! সত্যিই কী বোঝা গেল! ম্যাচে কিন্তু বার্সেলোনা জিততে পারেনি। সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে হেরেছে ৩-২ গোলে। কিন্তু দুই লেগ মিলে ৫-৩ গোলে এগিয়ে থেকে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল নিশ্চিত করেছে কাতালানরা। তিন বছর পর ফাইনালেও ওঠায় তাই উচ্ছ্বসিত বার্সেলোনার তিন কাণ্ডারী। সেমির প্রথম লেগেই বার্সার ফাইনাল অনেকটা নিশ্চিত করে রেখেছিলেন মেসি-সুয়ারেজ-নেইমার। ঘরের মাঠে ৩-০ গোলের জয়ের পর দ্বিতীয় লেগটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। কেননা ফাইনালে যেতে হলে বায়ার্নকে জিততে হতো কমপক্ষে ৪-০ গোলে। তারপরেও অ্যালিয়েঞ্জ অ্যারেনায় ম্যাচ বলে ভয় তো ছিলই। কিন্তু দাপুটে পারফরম্যান্স দেখিয়ে সেই ভয়ও দূর করলেন মেসিরা। এখন কাতালানদের দৃষ্টি ৬ জুন ফাইনালের দিকে। প্রতিপক্ষ হবে রিয়াল মাদ্রিদ কিংবা জুভেন্টাস। তা অবশ্য এতোক্ষণে পাঠকরা জেনেই গেছেন।
বার্সেলোনা ম্যাচের শুরুতেই গোল হজম করায় অবশ্য কিছুটা শঙ্কায় পড়েছিল তাদের সমর্থকরা। খেলার ৭ মিনিটে বেনাটিয়ার গোলে এগিয়ে যায় জার্মান জায়ান্টরা। এরপর শুরু হয় মেসি-সুয়ারেজ-নেইমার জাদু। ত্রি-বর্শার সফল আক্রমণে ১৫ মিনিটেই গোল পরিশোধ করে বার্সা। তিন তারকার জোরালো আক্রমণে ২৯ মিনিটে এগিয়েও যায় স্প্যানিশ জায়ান্টরা। কিন্তু বিরতির পর ৫৯ ও ৭৪ মিনিটে লেবানডস্কি ও মুলারের গোলে শেষ পর্যন্ত জিতে যায় বায়ার্নই।
তবে জয়টা হয়ে থাকল শুধুই সান্ত্বনার। কেননা দুই লেগের ফলাফলে এগিয়ে থেকে ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যায় বার্সেলোনার। প্রথম লেগে মেসি তার সাবেক গুরু পেপ গার্ডিওলার সব পরিকল্পনা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেও দ্বিতীয় লেগে জিততে পারেননি। তবে গার্ডিওলার বায়ার্নকে সারাক্ষণ আতঙ্কে রেখেছিলেন মেসি। যদিও রেকর্ডের খাতায় ম্যাচের গোল দুটি লেখা হয়ে গেছে নেইমারের নামে। তবে দুই গোলেরই যোগানদাতা মেসিই।
প্রথম গোলটিতে বার্সা সুপারস্টার ঠিক মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে কারিকুড়ি করে দেন এক ডিফেন্স চেরা পাস। বায়ার্নের ডি-বঙ্ েবল ধরে সুয়ারেজ বাড়িয়ে দেন নেইমারের উদ্দেশ্যে। দ্বিতীয় গোলের চিত্রনাট্য একই হলেও সেবার ম্যাচের সেরা ঝলক দেখিয়েছেন আর্জেন্টিনার ক্ষুদে জাদুকর। বায়ার্নের ফুটবলারদের বোকা বানিয়ে মেসি বল বাড়িয়ে দেন সুয়ারেজের উদ্দেশ্যে, সুয়ারেজ থেকে নেইমার, অতঃপর বল প্রতিপক্ষের জালে।
বায়ার্ন মিউনিখ ফাইনালে যেতে পারায় কোচ পেপ গার্ডিওলার খারাপ লাগা অস্বাভাবিক নয়, হয়তো ভালোও লাগছে তার! কেননা সাবেক শিষ্যই যে তার দলকে থামিয়ে দিয়েছে! নিজের শিষ্যের কাছে হেরে যাওয়ার চেয়ে আনন্দের আর কিছু কী আছে কোনো গুরুর কাছে! তাই ম্যাচ শেষে গার্ডিওলা বুক ফুলিয়ে বলেছেন, 'আমার বুকটা গর্বে ভরে যায়, আমি এক সময় মেসিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি।'
মেসির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে গার্ডিওলা মন্তব্য, 'মেসি সর্বকালের সেরা ফুটবলার। আমি তাকে পেলের সঙ্গে তুলনা করি।'