মান্যবর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগ দারুণ জমে উঠেছে। কে যে শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হবে বলা মুশকিল। শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র ও শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব বিগ বাজেটে দল গড়েছে। দুই দলে তারকার ছড়াছড়ি। শক্তির বিচারে শিরোপা লড়াই তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার কথা। শেখ জামাল ১০ ম্যাচে ২৩ পয়েন্ট নিয়ে প্রথম পর্বে শীর্ষে রয়েছে। তাই বলে তারা কোনোভাবেই সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। কেননা ঢাকা মোহামেডান, ব্রাদার্স ও শেখ রাসেল ১০ ম্যাচে সমান ভাবে ২০ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে। কিন্তু গোল ব্যবধানে মোহামেডান দ্বিতীয়, ব্রাদার্স তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। সেক্ষেত্রে ফেবারিট শেখ রাসেলের অবস্থান এখন চারে। মুক্তিযোদ্ধা ১৯ ও ঢাকা আবাহনী ১৭ পয়েন্ট নিয়ে ৬ষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে। দ্বিতীয় পর্বে প্রতিটি দলকে আরও ১০টি করে ম্যাচ খেলতে হবে। সুতরাং দলগুলোর অবস্থান যে ওলট-পালট হবে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। শেখ জামাল, শেখ রাসেলের পাশাপাশি ঢাকা ও আবাহনীও শক্তিশালী দল গড়েছে। কিন্তু তারা সেভাবে খেলতে পারছে না। কোচ কোর্টাল এখনো শিরোপা জেতার ব্যাপারে আশাবাদী।
আসলেও তাই এবার লিগে যে অবস্থা তাতে আবাহনী কেন, শেখ জামাল, শেখ রাসেলতো আছেই। মোহামেডান, ব্রাদার্স এমনকি মুক্তিযোদ্ধার শিরোপা জেতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিশেষ করে ঢাকা মোহামেডান লিগে বেশ আলোড়ন ফেলে দিয়েছে। একেবারে নবীন খেলোয়াড়দের নিয়ে তারা দল গড়ে। কোচ কাজী জসিম উদ্দিন জোসি বলেছিলেন, শিরোপা নয় তাদের লক্ষ্য মাঠে ভালো খেলা উপহার দেওয়া। অথচ এই মোহামেডানই কিনা গতিময় খেলা খেলে দর্শকদের বাহবা পাচ্ছে। গোপীবাগের ব্রাদার্স ইউনিয়নও অনেক দিন পর ভালো খেলছে। শেখ জামাল ২৩ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকলেও দ্বিতীয় পর্বে পয়েন্ট হারালেই তাদের নিচে নেমে যেতে হবে। অনেক দিন পর লিগ জমে উঠেছে। ৫/৬ টি দল শিরোপার দাবিদার। যা আগে দেখা যায়নি। দ্বিতীয় পর্বে এই দলগুলো মরিয়া হয়ে লড়বে। কেউ কেউ আবার খেলোয়াড়ও পাল্টাবে। জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলাররা বলছেন, এটা ভালো লক্ষণ। যত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে লিগের আকর্ষণও বাড়বে। এ থেকে নতুন নতুন খেলোয়াড়ের সন্ধান মিলবে।
লিগ জমে উঠুক এটা সবারই কাম্য। কিন্তু এ নিয়ে আবার জটিলতা সৃষ্টি হবে কিনা তা বাফুফেকে লক্ষ্য রাখতে হবে। দ্বিতীয় পর্বে তিন দল সমানভাবে ২০ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে। গোল পার্থক্যে তাদের অবস্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে তাতে লিগ শেষে শীর্ষে থাকা দুই দলের পয়েন্টও সমান হতে পারে। তখন শিরোপা নির্ধারণ করা হবে কীভাবে? গোল পার্থক্য না প্লে অফ ম্যাচের আয়োজন করা হবে? বাইলজে কি উল্লেখ আছে? এ ব্যাপারে লিগ কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান অভিজ্ঞ সংগঠক আবদুর রহিম বলেন, এক্ষেত্রে আমরা কে বেশি জিতল বা গোল পার্থক্যের নিয়মটি রেখেছি। তাহলে পয়েন্ট সমান হলে কোনটা বেছে নেবেন? এ ব্যাপারে রহিম বলেন, যদি শীর্ষে থাকা দুই দলের পয়েন্ট সমান হয় তখন আমরা আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেব? তখন কি দলগুলো মেনে নেবে? আগে থেকে বাইলজে একটা নিয়ম থাকলে ভালো হতো না। এ ব্যাপারে রহিম বলেন, কেন মানবে না, এখানে লিগ কমিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। না, রহিম এ কথা বললেও জটিলতা দেখা দেবেই। তাছাড়া অনেক ক্লাবই জানে না শেষ পর্যন্ত শীর্ষে থাকা দুই দলের পয়েন্ট সমান হলে কীভাবে শিরোপা নির্ধারণ হবে। ১৯৮৭ সালে এক পর্বে লিগের শেষ ম্যাচে আবাহনীকে হারায় মোহামেডান। এতে দুই দল সমান পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকে। বাইলজে কিছু উল্লেখ ছিল না বলে নিজেদের যৌথ চ্যাম্পিয়ন ভেবে দুই দলের অধিনায়ক আসলাম ও রণজিত মাঠ প্রদক্ষিণ করেন। বাইলজে কিছু উল্লেখ না থাকার পরও আইন ভাঙার অপরাধে দুজনকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে। পরে আবার প্লে-অফ ম্যাচের আয়োজন হলে আবাহনীকে হারিয়ে মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হয়। অতীতে এত বড় ঘটনার পরও বাফুফে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। তা না হলে বাইলজে কি আছে তা পরিষ্কারভাবে জানাতে পারলেন না কেন আবদুর রহিম।