চট্টগ্রাম এমনিতেই সৌভাগ্যের ভেন্যু। গতকাল সেই চট্টগ্রাম আরও বেশি সৌভাগ্যের বার্তা বর্ষণ করল। বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ সাধারণত আরও দশটি ম্যাচের মতো ছিল না। ছিল বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণের। ছিল মাশরাফি বিন মর্তুজা ও সাকিব আল হাসানের ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নেওয়ার। অতীতের মতো কালও চট্টগ্রাম ভরিয়ে দিয়েছে দুহাত উজাড় করে। স্বপ্নপূরণ করেছে দেশের ১৬ কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর। স্বপ্নপূরণ করেছে টাইগারদের। ইতিহাসের সোনালি পাতায় জায়গা দিয়েছে মাশরাফি ও সাকিবকে। দুজনে গতকাল সদস্য হয়েছেন ‘টু হান্ড্রেড’ ক্লাবের। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডে ক্রিকেটে টু হান্ড্রেড ক্লাবের সদস্য হয়েছিলেন আবদুর রাজ্জাক রাজ। রাজ্জাকের সঙ্গী হলেন সাকিব ও মাশরাফি। প্রথমে নাম লিখেন সাকিব ও পরে মাশরাফি। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের উইকেট ২০১ ও টাইগার অধিনায়কের উইকেট কাঁটায় কাঁটায় ২০০।
আমলাকে শিকার করেই সাকিব দুটি মাইলফলক স্পর্শ করলেন। দ্বিতীয় বাংলাদেশি বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে ২০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করলেন তিনি। এরপর মিলারকে সাজঘরে পাঠিয়ে ২০০ উইকেট পুরন করেন মাশরাফি। এর আগে কেবল আবদুর রাজ্জাকই (২০৭) দেশের হয়ে ওয়ানডেতে ২০০ উইকেট শিকার করেছেন। পাশাপাশি ষষ্ঠ অলরাউন্ডার হিসেবে সাকিব আল হাসান ওয়ানডেতে ৪ হাজার রানের পাশাপাশি নিলেন ২০০ উইকেট। এই কৃতিত্ব এর আগে কেবল শ্রীলঙ্কান গ্রেট সনাৎ জয়সুরিয়া (১৩৪৩০ ও ৩২৩), প্রোটিয়া কিংবদন্তি জ্যাক ক্যালিস (১১৫৭৯ ও ২৭৩), পাকিস্তানের শহিদ আফ্রিদি (৮০৬৪ ও ৩৯৫), নিউজিল্যান্ডের ক্রিস কেয়ার্নস (৪৯৫০ ও ২০১) ও ক্রিস হ্যারিসেরই (৪৩৭৯ ও ২০৩) আছে। সাকিব বল হাতে ২০০ উইকেট শিকারের পাশাপাশি ব্যাট হাতে করেছেন ৪৩৮২ রানও। আগের দুই ওয়ানডেতে সাকিব ছিলেন উইকেটশূন্য।
কেবল সাকিবই নন, গত কয়েক ম্যাচে বাংলাদেশের স্পিনাররা নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। পেসারদের দাপটে অনেকেই বাংলাদেশের স্পিন ম্যাজিকের সমাপ্তি বলে মন্তব্য করছিলেন বিষয়টাকে। গত কয়েক ম্যাচে বাংলাদেশের পেস বোলাররাই দলকে পথ দেখিয়েছেন। সাকিব অবশ্য এসব ব্যাপারে মোটেও চিন্তিত ছিলেন না। দলের প্রয়োজনে ভালো বোলিং করাটাই ছিল তার কাছে মুখ্য। ওই কাজটা তিনি ভালোভাবেই আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছিলেন। ধৈর্য ধরে অপেক্ষায় ছিলেন শিকারের। অবশেষে সেই শিকার ধরা দিল। তাও ডু প্লেসিস এবং আমলা নামে বর্তমান ক্রিকেটের দুই মহারথী! সাকিবের শিকারির ভূমিকায় প্রত্যাবর্তনটা হলো দারুণ। আর তার এ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশকে সিরিজ জয়ের অগ্রিম শুভেচ্ছা হয়েই দেখা দিল। যার বদৌলতে বাংলাদেশ প্রোটিয়াসদের বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব পেল। ২০ নম্বর সিরিজ জয়ের উৎসবে মাতাল পুরো দেশকে। কি অভাবনীয় একটা ম্যাচ হতে পারত! ৫০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা খুঁড়িয়ে চলতে শুরু করেছে। টাইগারের থাবায় বিধ্বস্ত আফ্রিকান সিংহ। কালো মেঘের হুমকি-ধমকি আর চোখ রাঙানি সত্ত্বেও যে ম্যাচের সম্ভাবনা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন না দর্শকরা তা সত্যিই ভাসিয়ে নিয়ে গেল বৃষ্টি! বিকাল সাড়ে চারটা থেকে বৃষ্টির সূচনা। সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে আসতে আসতে সেই বৃষ্টি থামলেও কাটছাঁট ম্যাচের সম্ভাবনাটা বাতিল করতে পারেনি। বৃষ্টির এই আশীর্বাদ দক্ষিণ আফ্রিকার উপর বর্ষিত না হলে এই সময়ের মধ্যে তারা হয়তো ড্রেসিং রুমের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেত বাংলাদেশের বোলিং তোপে। শেষ পর্যন্ত ৪০ ওভারে ম্যাচ নির্ধারিত হলেও দক্ষিণ আফ্রিকা বড় স্কোরের চ্যালেঞ্জ দিতে পারেনি। একসময় বাংলাদেশের ভক্তরা বৃষ্টির কামনা করতেন ম্যাচে। এখন তারাই বৃষ্টির বিদায়ে উচ্ছ্বাস করেন। গতকাল যেমন বৃষ্টি থামার পর প্রবল উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছিলেন জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের দর্শকরা। আর এই উল্লাস চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল পিছিয়ে থেকেও মাশরাফিদের সিরিজ জয়ে।