অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতকে ১৭৭ রানে গুটিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। ফলে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস গড়ার জন্য বাংলাদেশের দরকার ১৭৮ রান। এমন স্পল্প রানে ভারতের মতো একটি ব্যাটিং নির্ভরতার একটি দলকে আটকে দেওয়ায় বাংলাদেশের বোলিংয়ের প্রশংসা করেছে ভারতের জনপ্রিয় বাংলা গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে বিপক্ষের সামনে বড় রানের লক্ষ্য টাঙিয়ে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ ছিল ভারতের সামনে। অধিনায়ক প্রিয়ম গর্গ টস হেরে যাওয়ার পরও বলেছিলেন যে, তারা রীতিমতো আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু শুরু থেকেই বাংলাদেশের পেসারদের দাপটের সামনে অসহায় দেখাল ভারতীয়দের। ৪৭.২ ওভারেই দাঁড়ি পড়ল ইনিংসে। পুরো ৫০ ওভারও খেলতে পারলেন না ব্যাটসম্যানরা।
শুরুতেই প্রথম দুই ওভার মেডেন নিয়েছিলেন বাংলাদেশের পেসাররা। প্রথম ছয় ওভারে উঠেছিল ৮ রান। সপ্তম ওভারেই পড়ল প্রথম উইকেট। দিব্যাংশ সাক্সেনা ফিরলেন মাত্র ২ রানে। অভিষেক দাসের বলে ক্যাচ দিলেন তিনি। সেই পরিস্থিতি থেকেই যশস্বী জয়সওয়াল টানলেন দলকে। ৮৯ বলে পূর্ণ করলেন হাফ-সেঞ্চুরি। প্রতিযোগিতায় এই নিয়ে চার বার পঞ্চাশের গণ্ডি টপকালেন তিনি।
যশস্বীর পঞ্চাশের পরই আউট হলেন তিলক (৬৫ বলে ৩৮)। মারতে গিয়ে সীমানায় ক্যাচ দিলেন তিনি। দ্বিতীয় উইকেটে যশস্বী-তিলক যোগ করেছিলেন ৯৪ রান। বেশি ক্ষণ থাকলেন না অধিনায়ক প্রিয়ম গর্গও (নয় বলে ৭)। ৩১.৩ ওভারে ১১৪ রানে পড়েছিল তৃতীয় উইকেট। যখন মনে হয়েছিল যশস্বীর ব্যাটের দাপটে ঘুরে দাঁড়াবে ভারত, ডেথ ওভারে উঠবে ঝড়, তখনই এল ধাক্কা। পর পর দুই বলে আউট হলেন যশস্বী ও সিদ্ধেশ ভির।
ভারতীয় ইনিংস কখনই গতি পেল না। প্রথম পঞ্চাশ এসেছিল ১৬.১ ওভারে। পরের পঞ্চাশের জন্য লেগেছিল ৭৩ বল। ১০০ থেকে ১৫০ রানে পৌঁছতে লাগল ৬২ বল। দেড়শো পেরিয়ে যাওয়ার পর শরিফুল ইসলামকে শর্ট আর্ম পুল মারতে গিয়ে আউট হলেন যশস্বী। তাঁর ১২১ বলে ৮৮ রানের ইনিংস সাজানো আটটি চার ও একটি ছয়ে। ভারতীয় শিবির চাইছিল শেষ পর্যন্ত তিনি যেন ক্রিজে থাকেন। কিন্তু তা হল না। শরিফুলের পরের বলেই এলবিডব্লিউ হলেন সিদ্ধেশ (এক বলে ০)।
বাংলাদেশের ফিল্ডিং এদিন আগাগোড়াই দুর্দান্ত হচ্ছিল। মন্থর উইকেটে শট নিতে সমস্যার পাশাপাশি বঙ্গ-বিগ্রেডের ফিল্ডিং চাপে ফেলে দিয়েছিল ভারতকে। ইনিংসের শেষের দিকে পর পর দুটি রান আউট তারই প্রমাণ। ধ্রুব জুড়েল ও অথর্ব আনকোলেকর তো ভুল বোঝাবুঝিতে দু’জনেই একপ্রান্তে পৌঁছে গেলেন। আউট হলেন ধ্রুব (৩৮ বলে ২২)। এরপর রান আউট হলেন রবি বিষ্ণোই (ছয় বলে ২)। অভিষেক দাসের বলে ব্যাটে লাগিয়ে বোল্ড হলেন অথর্ব (সাত বলে ৩)। কার্তিক ত্যাগীও (পাঁচ বলে ০) শিকার হলেন অভিষেকের। সুশান্ত মিশ্র (আট বলে ৩) উইকেট দিলেন তানজিম হাসান শাকিবকে। ১ রানে অপরাজিত থাকলেন আকাশ সিংহ।
হাসান মুরাদের পরিবর্তে ফাইনালে বাংলাদেশ দলে এসেছিলেন অভিষেক দাস। সেই তিনিই নজর কাড়লেন পেস বোলিংয়ে। নয় ওভারে ৪০ রানে তিন উইকেট নিলেন তিনি। বাঁ-হাতি পেসার শরিফুল ইসলামও প্রশংসিত হলেন। তাঁর ১০ ওভারে উঠল মাত্র ৩১ রান। দুই উইকেটও নিলেন তিনি। বাঁ-হাতি স্পিনার রাকিবুল ইসলামের ১০ ওভারে উঠল আরও কম, মাত্র ২৯ রান। তিনি নিলেন এক উইকেট। তানজিম হাসান সাকিব ২৮ রানে নিলেন দুই উইকেট। ১৫৬ রানে চতুর্থ উইকেট পড়েছিল ভারতের। সেখানে থেকে ১৭৭ রানে দাঁড়ি পড়ল ইনিংসে। শেষ সাত উইকেট পড়ল মাত্র ২১ রানে।
ভারতীয় দলে এদিন কোনও পরিবর্তন হয়নি। সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে হারানোর দলই অপরিবর্তিত রাখা হয়েছিল। বাংলাদেশ দলে অবশ্য একটি পরিবর্তন হয়েছিল। এসেছিলেন অভিষেক দাস। বাতাসের আর্দ্রতাকে কাজে লাগানোই টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের উদ্দেশ্য বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক আকবর আলি। আর সেটাই কাজে লাগালেন তাঁর বোলাররা। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের কখনই স্বস্তিতে থাকতে দিলেন না পদ্মা পারের বোলাররা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভারতীয় দল এর আগে চার বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে যুব বিশ্বকাপে। এদিন সুযোগ ছিল পঞ্চমবারের জন্য চ্যাম্পিয়ন হওয়ার। এই রেকর্ড কোনও দলের নেই। বাংলাদেশ আবার প্রথম বার উঠেছিল ফাইনালে। তাই আকবর আলিদের সামনে ইতিহাস গড়ার সুযোগ ছিল।
ফাইনালের আগে ভারতীয় দলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে টুইট করেছিলেন সিনিয়র দলের অধিনায়ক বিরাট কোহালি থেকে শুরু করে লোকেশ রাহুল, শুভমন গিলের মতো ক্রিকেটাররা। যা দলের উৎসাহ বাড়িয়েছিল। নিউজিল্যান্ড থেকে কোহালিরা টিভিতে চোখও রেখেছিলেন ফাইনালের খেলায়। কিন্তু ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিংয়ে সেই উৎসাহ আর মরিয়া লড়াই অনুপস্থিতই থাকল।
বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব