প্রথমবারের মতো অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতেছে বাংলাদেশ। আর সেটা সম্ভব হয়েছে আকবর আলীর ঠান্ডা মাথার ব্যাটিংয়ে। তার অসাধারণ নেতৃত্বগুণে। ছেলের এমন সাফল্যে যারপরনাই খুশি আকবর আলীর বাবা মোহাম্মদ মোস্তফা ও মা সাহিদা বেগম। আকবরের বাবা ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিকেএসপিকে। যারা আকবর আলীকে ফ্রি পড়াশুনা করার সুযোগ দিয়েছে। ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও।
আকবরের বাবা বলেছেন, ‘আকবর আলীর বিকেএসপিতে লেখাপড়ার খরচ চালানোর মত সামর্থ্য ছিল না আমার। ক্লাস সেভেনে বিকেএসপিতে ভর্তি হয় আকবর। সেভেনেই ভাল ফলাফল করে। তখন বিকেএসপি তার লেখাপড়ার খরচ ফ্রি করে দেয়। সেখান থেকে বিনা পয়সায় ইন্টার মিডিয়েট পাশ করে। আকবর খুব কষ্ট করে এত দূর এগিয়েছে। আমার কাছে টাকা পয়সার জন্য কখনো আবদার করেনি। নিজের খরচ নিজে চালিয়েছে।’ তিনি বিএকএসপি’র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘বিকেএসপি যদি সহায়তা না করতো তাহলে আকবর আজ ক্রিকেটার হতে পারত না।’
এসএসসিতে ‘এ’ প্লাস নিয়ে পাশ করার পর বিকেএসপি কর্তৃপক্ষ ধন্যবাদ জানায় পিতা গোলাম মোস্তফাকে।
সোমবার দুপুরে রংপুর নগরীর নিউ জুম্মাপাড়ার নিজ বাসভবনে সাক্ষাৎকারে আকবর আলীর বাবা এসব কথা বলেন। তিনি আরো জানান, তাদের পরিবারের জন্য সবচেয়ে দুঃখের বিষয় ছিল গত ২২ জানুয়ারি আকবর আলীর বড় বোন রানীর মৃত্যু। সন্তান প্রসবের সময় মারা যান। এ খবর পরিবারের পক্ষ থেকে না জানালেও আকবর আলী সুদূর আফ্রিকায় বসে ২৪ জানুয়ারি জানতে পারেন। বোনের মত্যুর খবরে ভেঙে না পড়ে দেশের স্বার্থে খেলা চালিয়ে গেছেন।
আকবরের পিতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার পৃষ্ঠপোষক। আশা করছি বিশ্বকাপ জয়ী এই ছেলেদের প্রধানমন্ত্রী দেখবেন। আমার ছেলে একদিন জাতীয় ও টেস্ট দলে সুযোগ পাবে এবং দেশের জন্য আরো সুনাম বয়ে আনবে এটা আমার বিশ্বাস।’
আকবর আলীর মা সাহিদা বেগম এখনো মেয়ে হারানোর দুঃখ ভুলতে পারেননি। জমজ সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় আকবরের বোন রানী এই পৃথিবী ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে যান। বর্তমানে জমজ মেয়ে দুটি নানা বাড়িতেই আছে। এত বড় দুঃখের পরেও আকবর আলীর মা সাহিদা বেগম ছেলের সাফল্যে আনন্দিত। তিনি বলেন, ‘আমার বড় ছেলে মুরাদ ক্রিকেট খেলত। কিন্তু সে বেশিদূর এগোতে পারেনি। ছোট ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম সে যাতে বড় ক্রিকেটার হয়। আল্লাহ আমার স্বপ্ন পূরণ করেছে। দেশের জন্য সন্মান এনে দিয়েছে। এ জন্য আমি গর্বিত।’
অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কাঙ্খিত জয়ে আনন্দে উদ্বেলিত আকবরের এক সময়ের কোচ ক্রিকেটার অঞ্জন সরকার। হাতেখড়ি থেকে আজ তার অধিনায়কত্বে দলের শিরোপা জয়ে ভীষণ খুশি তিনি।
ক্রিকেটার অঞ্জন সরকার জানান, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন দল বাংলাদেশের নেতৃত্বে ছিল রংপুরের ছেলে আকবর আলী। আকবর তার তত্ত্বাবধানে ২০১২ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত রংপুর জিলা স্কুল মাঠে ক্রিকেট অনুশীলন করেন অসিম মেমোরিয়াল ক্রিকেট একাডেমিতে। পরে ঢাকায় বিকেএসপিতে ভর্তি হন। এক সময় বাংলাদেশ যুব দলের দায়িত্ব পান। আর রবিবার রাতে তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ প্রথমবার বৈশ্বিক কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন