মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বহুতল পার্কিংয়ের চাহিদা বাড়ছে

জয়শ্রী ভাদুড়ী

বহুতল পার্কিংয়ের চাহিদা বাড়ছে

রাজধানীতে বহুতল কার পার্কিংয়ের চাহিদা বাড়ছে। সৃষ্টি হচ্ছে পার্কিং সুবিধাও । রবিবার সেগুনবাগিচায় মৎস্য অধিদফতরে বহুতল কার পার্কিং ছবি : রোহেত রাজীব

রাস্তার একপাশে গাড়ি রেখে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পুরো মাসের বাজার করতে গিয়েছিলেন খোরশেদ ইসলাম। এসে দেখেন অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং করায় মামলা দিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। তিনি বলেন, আশপাশে পার্কিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। পার্কিং খরচ দিয়ে নিরাপদে গাড়ি রাখতে পারলে মামলার ঝামেলায় পড়তে হতো না।

রাস্তা দখল করে গাড়ি পার্ক করার চিত্র শুধু কারওয়ান বাজার নয় বাংলামোটর, শাহবাগ, মতিঝিল, পল্টনসহ পুরো রাজধানীরই। এ জন্য তৈরি হয় যানজটও। অবৈধ পার্কিং ঠেকাতে জরিমানা, মামলা দিয়ে থাকে ট্রাফিক পুলিশ। কিন্তু অনেক গাড়ির মালিক পার্কিং খরচ দিয়ে গাড়ি রাখতে চাইলেও সব জায়গায় সেই ব্যবস্থা থাকে না। অনেকে ইচ্ছা করে রাস্তায় গাড়ি পার্ক করেন অনেকে করেন উপায় না পেয়ে। পার্কিংয়ের সুবিধা বাড়াতে রাজধানীতে বহুতল কার পার্কিং সুবিধা বাড়ছে। নামমাত্র খরচে এসব পার্কিংয়ে গাড়ি রাখতে পারছেন নগরবাসী। এ ছাড়া বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমেও বাসা, কর্মক্ষেত্রে কিংবা বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে পার্কিং সুবিধা মিলছে। ব্যাপকভাবে কার পার্কিংয়ে এ ব্যবস্থা করা গেলে অফিস থেকে শপিং কমপ্লেক্স, জনসমাগম হয় এমন কোনো স্থানে গাড়ি রাখা নিয়ে ভাবতে হবে না আর। ভবনের সামনে সারি সারি গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখে যানজটের যন্ত্রণা পোহাতে হবে না। গাড়িটি নিরাপদ থাকবে কি-না এ দুশ্চিন্তাও কমিয়ে দেবে কার পার্কিংয়ের এ ব্যবস্থা।

প্রায় ছয় বছর আগে সেগুনবাগিচায় মৎস্য অধিদফতরে পরীক্ষামূলকভাবে দেশে প্রথমবারের মতো বহুতল ডিজিটাল গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করেছিল। সাত বছর ধরে চলছে এই পার্কিং ব্যবস্থাপনা। মৎস্য ভবনের সামনে ডিজিটাল কার পার্কিংয়ের কাছে গিয়ে দেখা যায়, ধাতব তৈরি পাঁচতলা ভবনে ২১টি গাড়ি রাখার জায়গা আছে। পাঁচতলা ভবনে পাঁচটি স্তর আছে। একেবারে উপরের তলায় পাঁচটি গাড়ি রাখার জায়গা আছে। বাকি চারতলায় চারটি করে গাড়ি রাখা হয়। প্রথম থেকে চারতলা পর্যন্ত একটি সারি ফাঁকা রাখা হয়েছে। যাতে করে সুবিধামতো গাড়ি আড়াআড়ি বা উপর-নিচ করে সরানো বা ওঠা-নামা করা যায়। তবে মৎস্য অধিদফতর থেকে প্রতিটি স্তরে প্রতিটি গাড়ির জন্য আলাদা নম্বর দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী গাড়ির জন্য আলাদা নম্বরবিশিষ্ট পাঞ্চ কার্ড দেওয়া হয়েছে। তিনতলার প্রথম গাড়িটি উঠানো বা নামানোর প্রয়োজন হলে ৩০১ নম্বর কার্ড দিয়ে নির্দেশ দিলেই গাড়িটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে উঠবে বা নামবে। একটি গাড়ি ওঠা-নামার জন্য মাত্র এক থেকে দেড় মিনিট সময় নেয়।

মৎস্য অধিদফতরের ভবনটি উচ্চতা ৪৩ ফুট,  দৈর্ঘ্য ৪৭ ফুট এবং প্রস্থে ২২ ফুট। এটি তৈরিতে জাপানি প্রযুক্তিতে চীনে উৎপাদিত যন্ত্রাংশ ব্যবহৃত হয়েছে। এটি হাইড্রোলিক ও বৈদ্যুতিক ক্ষমতায় চলে। ফলে বিদ্যুৎ খরচ একেবারে কম। পার্কিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মী বলেন, বিদ্যুৎ চলে গেলে অটোমেটিকভাবে জেনারেটর চালু হয়। ফলে গাড়ি নামাতে কোনো সমস্যা হয় না। ডিজিটাল কার পার্কিংয়ের সুবিধা জানতে চাইলে এক সরকারি কর্মকর্তার গাড়ি চালক শরীফ উদ্দিন বলেন, আগে গাড়ি রাখার জন্য প্রতিযোগিতা করতে হতো। জায়গা না পেলে রাস্তার পাশে রাখতাম। ফলে যানজট সৃষ্টি হতো। একবার দুই পক্ষের সংঘর্ষে গাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। গাড়ি রাখা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হতো। ডিজিটাল কার পার্কিংয়ের ফলে গাড়ি রাখার নির্দিষ্ট জায়গা হয়েছে। যখন গাড়ি নামানোর দরকার হয়, অপারেটরকে শুধু নম্বর বললেই গাড়ি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই নেমে আসে।

গত বছর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সেন্ট্রাল কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার ভবনে আটতলা ডিজিটাল গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলিশের সদর দফতরের উন্নয়ন শাখা-১ ডিজিটাল গাড়ি পার্কিংয়ের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। যেখানে ছয়টি গাড়ি পার্ক করে রাখা যেত এখন সেখানে ৩৪টি গাড়ি রাখা যাচ্ছে। পরীক্ষামূলকভাবে চলছে বহুতল কার পার্কিংয়ের এই প্রকল্প। তবে রাজধানীর বেশকিছু স্থানে বহুতল কার পার্কিং নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে হাতিরঝিল এলাকায় একটি বহুতল পার্কিং ভবন উদ্বোধনের অপেক্ষায়।

রাজধানীর প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলের নিত্যদিনের যানজট ও পার্কিং সংকট নিরসনে ঢাকা সিটি করপোরেশন তৈরি করেছিল বহুতল কার পার্কিং ভবন। আশা ছিল, কার পার্কিং তৈরি হলে কেউ আর রাস্তায় যত্রতত্র গাড়ি রাখবেন না। নামমাত্র পার্কিং ফি দিয়ে পার্কিং সেন্টারেই গাড়িগুলো রাখবেন গাড়ির মালিকরা। কিন্তু সাততলা পার্কিং সেন্টার তেমন একটা কাজে আসছে না। পার্কিং সেন্টারে না রেখে এর আশপাশে রাস্তায় গাড়ি রাখা হচ্ছে।

বহুতল ডিজিটাল কার পার্কিংয়ের সঙ্গে জনপ্রিয় হচ্ছে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে নির্বিঘ্নে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা। গাড়ি পার্কিংয়ে বেশ জনপ্রিয় একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ‘পার্কিং কই’। এর মাধ্যমে অফিসে, মার্কেটে কিংবা বাসায় গ্যারেজ না থাকলে গাড়ি পার্কের ব্যবস্থা করা হয়। প্রতিষ্ঠানের পাবলিক রিলেশন অফিসার মুহাইমিনুল ইসলাম বলেন, রাস্তায় গাড়ি পার্ক করলে যানজটের সঙ্গে রয়েছে ঝুঁকিও। ২০১৮ সালে আমরা রাজধানীবাসীকে গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা দিতে এই অ্যাপ চালু করি। কারও অফিস মতিঝিল এলাকায় হলে তার ২৪ ঘণ্টা পার্কিং, কিংবা অফিস সময়ের পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করে দেই। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট কিংবা বাণিজ্যিক এলাকাতে আমাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় গাড়ি রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। গাড়ি কোথায় রাখবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে হবে না।

সর্বশেষ খবর