বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই দুঃসময়ে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে যোগাসন ও দমচর্চাই হতে পারে বড় সহায়। করোনায় আক্রান্তদের দ্রুত নিরাময়ের ক্ষেত্রে ফুসফুস সংক্রমণের বিষয়টি বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়ানো এবং ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর ইমিউনিটি গড়ে তুলতে করোনাকালে বিশ্বব্যাপী যোগব্যায়াম চর্চার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, ফুসফুস সুরক্ষিত থাকলে করোনাভাইরাস সহজে কাবু করতে পারে না। এই বাস্তবতা নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও গতকাল সপ্তম বারের মতো পালিত হলো আন্তর্জাতিক যোগ দিবস।
যোগচর্চা এই উপমহাদেশের কয়েক হাজার বছরের পুরনো বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি। অধিকাংশ অভিজ্ঞ ডাক্তার এখন ওষুধের নিরাপদ বিকল্প হিসেবে যোগব্যায়াম, প্রাণায়াম ও মেডিটেশনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যোগব্যায়াম দেহ কোষের মধ্যে এক অভাবনীয় অভ্যন্তরীণ প্রশান্তি ও সমন্বয়ের সৃষ্টি করে। আমাদের মন ও শরীরকে তরতাজা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যোগব্যায়াম শুধু শরীর ও মানসিক স্বস্তি প্রদান করে না এটা আমাদের শক্তি ও সহনশীলতাকে বাড়ায়। যোগের নানাবিধ উপযোগিতার কারণে সারা বিশ্বের মানুষ একে দৈনিক অভ্যাসে পরিণত করে নিয়েছেন। বিশেষ করে এই মহামারীর সময় যখন মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য অত্যন্ত চাপের মধ্যে রয়েছে। করোনা সংক্রমণ মানসিক যন্ত্রণা এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে, সুস্থ থাকার জন্য এবং বিচ্ছিন্নতা ও হতাশার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কোটি কোটি মানুষ যোগাসনকে বেছে নিয়েছেন। করোনায় কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেট থাকার সময় এই যোগাসন শারীরিক ও মানসিক শক্তিকে বাড়িয়ে তুলছে বলে প্রমাণিত হয়েছে। যোগব্যায়াম আত্মাকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নতুন উপলব্ধি এনে দেয়। এটি মনকে প্রশান্ত করে এবং মনোযোগ এবং ধৈর্যকে উন্নত করে। নিয়মিতভাবে বিভিন্ন আসন ও প্রাণায়াম দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ভিতরকার পদ্ধতিকে শুদ্ধ করে তোলে। নিয়মমাফিক যোগব্যায়াম নিয়মিত করলে শরীর থাকবে সুস্থ, মন থাকবে ফুরফুরে, দুশ্চিন্তামুক্ত। করোনার কারণে অনেকেই মানসিক ও শারীরিকভাবে অত্যন্ত চাপের মধ্যে রয়েছেন এবং এ সময় যোগই এই চাপ থেকে উদ্ধার করতে সহায়তা করতে পারে। নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের মাধ্যমে দমচর্চা ফুসফুসকে সুস্থ রাখে। বিশেষত হাঁপানি বা ক্রনিক ব্রংকাইটিসের রোগীদের ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়াতে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম উপকারী। এ ছাড়া এতে শিথিলায়ন হয় বা মানসিক চাপ কমে। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পুরনো এই যোগাসন চিকিৎসা পদ্ধতি। কিন্তু চর্চার সঠিক পথ না জানায় যোগব্যায়ামের পরিপূর্ণ সুফল নিতে পারছেন না সবাই। এই অভাব পূরণের লক্ষ্য নিয়ে নব্বইয়ের দশকে যোগ ফাউন্ডেশন দেশে যোগাভ্যাস চর্চার সূচনা করে। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন সমাজের সব স্তরে যোগব্যায়াম, প্রাণায়াম ও মেডিটেশনের মাধ্যমে সুস্থ-সফল নীরোগ জীবনাচরণের দীক্ষা দিচ্ছে। সংস্থাটি সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণকালে প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের ব্যায়াম -প্রাণায়ামের মাধ্যমে সুস্থ জীবনচর্চার প্রশিক্ষণ দেয়। আন্তর্জাতিক ইয়োগা বিশেষজ্ঞ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের ইয়োগা কার্যক্রমের চিফ ইন্সট্রাক্টর আহমেদ শরীফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মহামারী মোকাবিলায় ইমিউনিটি বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। আর এই ইমিউনিটি বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রাণায়াম, যোগচর্চা ও মেডিটেশন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। আপনার ইমিউন সিস্টেম যত শক্তিশালী হবে ততই আপনি সুস্থ থাকবেন। ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস আপনার কাছ থেকে দূরে থাকবে। এই যোগচর্চার মধ্য দিয়ে আপনার জীবনে ইতিবাচক বিষয়গুলোর সংযুক্তি ঘটবে। নেতিবাচক বিষয়গুলো আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যাবে। আপনি সবসময় থাকবেন নিরোগ, প্রফুল্ল ও প্রাণবন্ত।