মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

রাজধানীর ১৪ ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটে ব্যবসা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

রাজধানীর ১৪ ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটে ব্যবসা

রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর কিছু ভেঙে ফেলা এবং কিছু ভবন সংস্কারের সুপারিশ করে বুয়েট। কিন্তু সে সুপারিশ গ্রাহ্য হচ্ছে না। মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট ও কারওয়ান বাজার মার্কেটের ছবি -জয়ীতা রায়

দালানের ইটগুলো আধভাঙা, খসে পড়েছে পলেস্তারা। প্রায় প্রতিটি দোকানের পিলার-ছাদে ফাটলের কারণে স্পষ্ট দেখা যায় লোহার রড। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) কারওয়ান বাজারের ১ ও ২ নম্বর ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করলেও এখান থেকে সরছেন না ব্যবসায়ীরা। এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নবনির্মিত মার্কেটগুলো নিয়ে ব্যবসায়ীদের দাবি নিষ্পত্তি না হওয়ায় ঝুঁকির মধ্যে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ডিএনসিসি এলাকার মার্কেট ভবনগুলো পরীক্ষা করে। ডিএনসিসির ৩৬টি মার্কেট ভবনের মধ্যে ১৪টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে ডিএনসিসিকে প্রতিবেদন দেয়। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর মধ্যে কিছু ভবন পুরোপুরি ভেঙে ফেলার এবং কিছু ভবন ‘রেট্রোফিটিং’ (কাঠামো অক্ষত রেখে সংস্কার) করার সুপারিশ করে বুয়েট। জরুরি ভিত্তিতে ভবনগুলোর ভার কমাতে বলা হয়।

ঝুঁকিপূর্ণ অন্য ভবনগুলো হচ্ছে- গুলশান (উত্তর) পাকা মার্কেট, গুলশান (দক্ষিণ) পাকা মার্কেট, গুলশান (দক্ষিণ) কাঁচা মার্কেট, খিলগাঁও তালতলা সুপার মার্কেট, খিলগাঁও তালতলা কাঁচা মার্কেট, কারওয়ান বাজার ১ নম্বর ভবন, কারওয়ান বাজার ২ নম্বর ভবন, কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেট, কারওয়ান বাজার কাঁচামালের আড়ত, মোহাম্মদপুর টাউন হল পাকা মার্কেট, মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচা মার্কেট, প্রান্তিক সুপার মার্কেট (গাবতলী), বিজয় সরণির কলমিলতা মার্কেট ও গুলশান ১ নম্বরের ডিএনসিসির কাঁচা মার্কেট। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ২ জানুয়ারি রাতে আগুনে গুলশান ১ নম্বরের ডিএনসিসির কাঁচা মার্কেটটি ধসে পড়ে। এ মার্কেটটিও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় ছিল। বুয়েটের ওই প্রতিবেদনে গুলশান-১ কাঁচা মার্কেট সম্পর্কে বলা হয়েছিল, অপরিকল্পিতভাবে মার্কেটটির তৃতীয় ও চতুর্থ তলা বানানো হয়েছে। মার্কেটের দোতলার দোকানগুলোতে ভার অনেক বেশি। জরুরি ভিত্তিতে মার্কেটের তৃতীয় ও চতুর্থ তলা ভেঙে ভার কমাতে হবে। এর কোনোটিই মানেননি ব্যবসায়ীরা। আগুনে চারতলা ভবনের পুরোটাই ধসে পড়ে। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, গাবতলীতে মার্কেটের নির্মাণ কাজ শেষ হলেও তা চালুর উপযোগী নয়। মহাখালী মার্কেটকে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য বরাদ্দ করা হয়। এরপর এটাকে নগর হাসপাতালে রূপান্তরের ঘোষণা দিয়েছেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। তাহলে এই মার্কেটে বরাদ্দ দিতে চাওয়া ব্যবসায়ীদের কোথায় স্থানান্তর করা হবে তা নিয়ে নেই কোনো পরিকল্পনা। গাবতলী মার্কেটে আমিনবাজারের সঙ্গে দুটি সংযোগ সড়ক তৈরির দাবি তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া কারওয়ান বাজারে পাওয়া দোকানের মতো বড় দোকান চান তারা। কারওয়ান বাজারে দোকান ছেড়ে নতুন মার্কেটে দোকান নিতে জামানতের অর্থ বা সেলামি দিতে রাজি নন ব্যবসায়ীরা। কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান বলেন, আমরা এখানে ৪০০ বর্গফুটের দোকানে ব্যবসা করছি অথচ নতুন মার্কেটে আমাদের দেওয়া হচ্ছে ১২০ বর্গফুটের দোকান। এত ছোট দোকানে পাইকারি মাল কীভাবে রাখব আমরা?

ডিএনসিসি সূত্র জানায়, সাদেক হোসেন খোকা মেয়র থাকাকালে করপোরেশন বেশ কয়েকটি মার্কেট ভেঙে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন করার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু ব্যবসায়ীরা নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিকে অসম আখ্যা দেন। তারা নতুন ভবন নির্মাণের সময় পুনর্বাসনের নিশ্চয়তা এবং নতুন ভবনে চাহিদা মতো জায়গা পাওয়ার দাবিতে একাধিক মামলা করেন। অন্যদিকে কাজ করতে পারার নিশ্চয়তা চেয়ে ঠিকাদাররাও মামলা করেন। মার্কেট ভবন নিয়ে ১১টি মামলা চলছে। সব কটি মামলাই সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে এবং এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ‘ঢাকা শহরের তিনটি পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণ প্রকল্প’ অনুমোদন করে ২০০৬ সালে। কৃষিপণ্যের বাজার ও সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নয়নের পাশাপাশি কারওয়ান বাজারে যানজট কমাতে প্রকল্পটি নেওয়া হয়। মহাখালী, আমিনবাজার ও যাত্রাবাড়ীতে তিনটি পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণের জন্য প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির মেয়াদ তিন দফা বাড়িয়ে শেষ হয় ২০১৫ সালের জুনে। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক ডিএনসিসির দায়িত্ব পাওয়ার পর বেগবান হয় এই প্রকল্প। কাঁচাবাজার সরাতে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে একাধিক মিটিং করেন তিনি। তাদের চাহিদা মতো দোকানের আকার এবং অন্যান্য সুবিধা সংযোজনও করা হয়। তার মৃত্যুর পর ঝিমিয়ে পড়ে এ প্রকল্প। এত দিনেও কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের স্থানান্তর করতে পারেনি    সিটি করপোরেশন।

সর্বশেষ খবর