শীত তাড়াতে অন্য পোশাকের সঙ্গে দরকার পড়বে চাদরেরও। ফ্যাশনে চাদরের ব্যবহার কখনো পুরনো হয় না। একটা সময় মনে হতো চাদর বুঝি শুধু বয়স্কদের জন্যই। সে ধারণা বদলেছে। এখন তরুণ-তরুণীদের পছন্দে জায়গা করে নিয়েছে স্টাইলিশ চাদর।
শীত মৌসুম ফ্যাশনপ্রিয় মানুষের কাছে পছন্দের একটি ঋতু। যদিও খুব ভারী পোশাক বা চাদরে জবুথবু হয়ে থাকার মতো শীত এখন নেই বললেই চলে। বিশেষত শহরাঞ্চলে। শীতের সময়টা শহরে পাতলা, হালকা-ভারী পোশাকের মিশেলেই পার করে দেওয়া যায়।
পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে পাতলা চাদর পরার প্রচলন দেখা যাচ্ছে এখন। কখনো রং মিলে যায়। আবার বিপরীত রং হিসেবে নজর কাড়ে। তবে পাতলা কাপড়ের ওড়নার ওপরও ভারী কাজের নকশা এখন নজর কাড়ছে। দিনের বেলায় এটি ওড়না ও চাদর দুটোর কাজই করে দিচ্ছে।
আগের দিনে শীতের উষ্ণতায় সবাই বেছে নিত শাল-চাদর। আরেকটু পেছনে তাকালেই মিলবে সাম্রাজ্যে রাজা-মহারাজারা আভিজাত্যের উপঢৌকন হিসেবে কাঁধে ঝুলিয়ে নিতেন বাহারি কারুকাজ করা শাল। সেকেলে বণিকরা এমনকি গ্রামের মাতবররা কাঁধে শাল বা চাদর ঝুলিয়ে নিতেন পারিবারিক ঐতিহ্য বা আভিজাত্য হিসেবেই।
বর্তমান সময়ে চাদরে রকমফের এসেছে অনেক। এক রং, প্রিন্ট, কারুকাজ করা, একই সঙ্গে অনেক রঙের ব্যবহার করা চাদর পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। বাহারি রঙের চাদরের সুবিধা হলো- তা যে কোনো পোশাকের সঙ্গে পরা যায়। মেয়েরা টি-শার্ট থেকে শুরু করে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ সবকিছুর সঙ্গেই চাদর পরতে পারে, তৈরি করে নিতে পারে নিজের মতো স্টাইল। এক রঙের সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে ভালো লাগবে প্রিন্টেড চাদর বা কাজ করা চাদর। অভিজাত শ্রেণির মানুষের কাছে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য হলো কাশ্মীরি শাল। মিহি সুতার কাজ করা শাল। যেমন- পশ্চিমা খাদি উলের চাদর, সিলেট, রাঙামাটি, বান্দরবানের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের চাদর।
তরুণরা আজকাল চাদরকে তাদের ফ্যাশনের অনুষঙ্গ হিসেবে গ্রহণ করেছে। একটু বয়স্করা কাশ্মীরি শাল জড়িয়ে নিজের স্টাইলে নিয়ে আসেন আভিজাত্য। নবাব আমল থেকে চাদরের প্রচলন ছিল উপমহাদেশে। কালের বিবর্তনে রকমফের এলেও হারিয়ে যায়নি এর মূল বৈশিষ্ট্য। এক টুকরো কাপড় জড়িয়ে আরাম খোঁজার সঙ্গে সঙ্গে হয় ফ্যাশন।
খাদি বা সুতি তন্তুর চাদরে স্টিক্রন প্রিন্টের প্রচলন সর্বাধিক ছিল এ বছর। বিখ্যাত চিত্রশিল্পীদের চিত্র থেকে শুরু করে কবির কবিতা সব প্রিন্টের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে চাদরে। ডিজাইনাররা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছেন ক্রেতাদের নতুন কিছু উপহার দিতে। ভ্যানগগের বিখ্যাত চিত্রশিল্প, ফ্রিদা কাহলোর অবয়ব, এমনকি ঢাকা শহরের চিত্র ওঠে এসেছে। রঙিন ফুলেল মোটিফ, কবিতা, গানের লাইনও মোটিফ হিসেবে ব্যবহার হয়েছে। চাদরে ব্লক প্রিন্ট, হাতের কাজ বা এক রঙের চাদর যে কোনোটি পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে পরা যায়। অনেক সময় চাদরের সঙ্গে মিলিয়েও পোশাক নির্বাচন করা যেতে পারে।
এ বছর শাল-চাদরের রঙের ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে নীল, খয়েরি, কফি, ম্যাজেন্টা, বাদামি, অফ হোয়াইট ইত্যাদি। বাজার ঘুরে শালের খবর নিয়ে দেখা গেছে, রুচিশীলতার তাগিদে বৈচিত্র্য এসেছে শীতের চমৎকার ডিজাইন প্যাটার্নের ডাবল কিংবা সিঙ্গেল শালে। চমৎকার বুনন আর ডিজাইনে তৈরি করা হচ্ছে নজরকাড়া সব চাদর বা শাল। নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য তৈরি এসব শাল-চাদর। নারীদের তুলনায় পুরুষের শাল-চাদর একটু বড় হয়। ছেলেদের শালগুলো কিছুটা সাদামাটা। তবে নান্দনিকতা রয়েছে মেয়েদের শালে।
পাওয়া যাবে
আড়ং, রঙ বাংলাদেশ, বিশ্ব রঙ, প্রবর্তনা, দেশী দশ শোরুম, সপুরা সিল্ক, দেশালসহ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে এসব পাওয়া যাবে।
লেখা : ফেরদৌস আরা