শরতে মেঘে মেঘে হয় মিতালি, আকাশ হয় বর্ণালি, প্রকৃতি সাজে অপরূপ সাজে। নীলাকাশে পাল তুলে ভেসে বেড়ায় সাদা মেঘের ভেলা। শরৎকালে দিগন্তজুড়ে কাশফুল ফোটে। ভোরবেলায় ঘাসের ডগায় জমে শিশির, বনে বনে জলে জলে খুঁজে পাওয়া যায় শাপলা, পদ্ম, শিউলি ও মাধবীসহ বিচিত্র সব ফুলের সমাহার।
মেঘ রোদ্দুর খেলায় শরতের বাতাসে দেখা মিলছে কাশফুলের। সাদা মেঘের আনাগোনায় নীল আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে শুভ্র মেঘ। কখনো রাঙা রোদের সোনা আলোয় তপ্ত দুপুর হঠাৎ করেই ঝুম বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ছে গাছের পাতায় পাতায়। রূপে রঙে তাই শরতের জুড়ি মেলা ভার। তবে শরতের এই হঠাৎ পরিবর্তন শুধু প্রকৃতিতেই নয় পাশাপাশি আমাদের সাজ-পোশাকেও আসে পরিবর্তন। কেমন হবে শরতদিনের সাজ-পোশাক!
শরতের স্নিগ্ধতাতে থাকে রোদের আনাগোনা। দেশি পোশাক নকশাকারেরা সাধারণত শরতের জন্য বেছে নেন চারটি রং- সাদা, নীল, সবুজ আর সোনালি। নীল আকাশ, সাদা কাশফুল, সোনালি সূর্য আর সবুজ ফসল। শরত এলেই দল বেঁধে কাশবনে ঘুরতে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। শুধু শাড়ি বা কামিজে নয়, শরতের অন্যান্য পোশাকেও প্রাধান্য পায় শুভ্র সাদা আর আকাশের নীলাভ রং। গাঢ় নীল, হালকা নীল, আসমানি নীল, ময়ূরকণ্ঠী নীল, রয়েল ব্লু, নেভি ব্লু আরও কত শত রং ফুটিয়ে তুলেছে পোশাকের জমিনে। সঙ্গে সাদা কিংবা অফ হোয়াইটের মিশেল ও নকশার বৈচিত্র্য- এভাবেই অনেক ফ্যাশন হাউস সাজিয়েছে শরৎ-সংগ্রহ। এর বাইরেও পোশাকে ব্যবহার হয়েছে ফিরোজা, ছাই, সোনালি, খয়েরি, সবুজ, হলুদ, কমলা, বেগুনি, গোলাপি রঙের মিশেলে সব নান্দনিক ডিজাইন। আবার শরৎ মানেই কিন্তু শারদীয় আমেজের একটা ব্যাপার থাকে। এখন থেকে চারপাশে চলছে শারদ উৎসবের আয়োজন। আর পূজা মানেই লালের প্রাধান্য।
ভয়েল, মসলিন, তাঁত, জর্জেট, জয়সিল্ক, সিল্ক কাপড়ের লং কামিজ, গাউন ধাঁচের পোশাক এই সময়ের জন্য ফ্যাশনেবল ও আরামদায়ক।
কেমন হবে ফেব্রিক
শরতদিনে সুতি, অ্যান্ডি কটন, তাঁত, ভয়েলের বিকল্প নেই। রাতের দাওয়াতে ভালো লাগবে সিল্ক, জয়সিল্ক বা মসলিন। পোশাকের নকশায় গুরুত্ব পাচ্ছে হ্যান্ড ও মেশিন অ্যামব্র্রয়ডারি, ব্রাশ পেইন্ট, স্কিন পেইন্ট প্রভৃতি। এখন যেহতু বাইরে রোদ-বৃষ্টির খেলা, তাই সাজের ক্ষেত্রে উপকরণটি অবশ্যই যেন পানি নিরোধক হয়। দিনের বেলা গাঢ় সাজ এড়িয়ে চলুন। শরতের সাজসজ্জায় রাখুন স্নিগ্ধভাব। এ জন্য হালকা মেকআপ উত্তম।
শরতের ত্বকের পরিচর্যায়
এ ঋতুতে ত্বক ঘেমে যাওয়ার সমস্যা কম-বেশি সবার ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। এ ছাড়া ত্বকে র্যাশ, চামড়া ওঠা কিংবা লালচে ভাব এ সময়ে প্রায়ই চোখে পড়ে। তাই ত্বকের যত্নের ক্ষেত্রে সানক্রিম ব্যবহার করতে হবে। অনেকেই গরমে ঘামের জন্য সানক্রিম ব্যবহার করতে চান না। বরং এ সময় আরও বেশি সানক্রিম ব্যবহার করা প্রয়োজন। সানক্রিম ব্যবহার না করলে ত্বকে কালো দাগ আর তা থেকে ব্রণের মতোও সমস্যা তৈরি হয়ে থাকে। পাশাপাশি ফেসিয়ালও খুবই গুরুত্বপূর্ণ ত্বকের যত্নে। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে দিনে দুইবার ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে যাতে লোমকূপে ময়লা না জমতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে ন্যাচারাল ফেসিয়াল সবচেয়ে ভালো ত্বকের যত্নে। আপনি সেনসিটিভ স্কিনের হয়ে থাকলে মুলতানি মাটি সঙ্গে নিমপাতার গুঁড়া একসঙ্গে মিক্সড করে ফেসিয়াল হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া প্যাক হিসেবে মধুর সঙ্গে মুলতানি মাটি আর বেসন একসঙ্গে মিশিয়ে মাস্ক হিসেবে ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে শুধু মুখের ত্বকের পাশাপাশি হাতে এবং পায়ের ত্বকের ক্ষেত্রেও এ মিশ্রণটি ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া এ সময় ত্বকে লালচে ভাব এবং ব্রণের সমস্যা দেখা দিলে বরফ কিউব ব্যবহার করতে পারেন। বরফের টুকরা পাতলা একটা কাপড়ে জড়িয়ে ত্বকের সেই জায়গাতেই লালচে ভাব কিংবা ব্রণ আছে সেখানে আস্তে আস্তে ম্যাসাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আপনি চাইলে গোলাপ জল, শসার রস কিংবা পুদিনা পাতার রস ও বরফ করে ব্যবহার করতে পারেন। ঋতুভেদে চুলের ক্ষেত্রেও যত্ন আবশ্যক। চুলের যতেœ তেলের বিকল্প নেই। প্রতিবার শ্যাম্পু করার আগে পাঁচ মিনিট ওয়েল ম্যাসাজ করে নিতে হবে এতে চুলে পুষ্টি মিলে। চাইলে আপনি কন্ডিশনার করে নিতে পারেন।
লেখা : ফেরদৌস আরা