বুধবার, ৮ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিশ্বজয়ী নারী

বিশ্বজয়ী নারী

নারী পিছিয়ে নেই আর। কর্মক্ষেত্রে পুরুষের সঙ্গে সমানতালে পা চালিয়ে নারী হয়েছেন প্রশংসনীয়। রাজনীতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা, খেলাধুলা সর্বত্রই তারা নিজেদের প্রমাণ করেছেন। বিশ্বের এমন সব জয়ী নারীদের নিয়ে লিখেছেন—    তানিয়া জামান

 

বিশ্ব চমকে শেখ হাসিনা

বিশ্বের সবচেয়ে প্রবীণতম রাজনীতিবিদদের একজন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি তিন-তিনবার প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৮১ সাল থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে রেখেছেন সাফল্যের সুদীর্ঘ স্বাক্ষর। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দশম জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেত্রী। তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রথম রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় মেয়ে। এত দীর্ঘ সময় একটি দলের দায়িত্ব এবং বার বার প্রধানমন্ত্রী ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে বিশ্বে চমক সৃষ্টি করেছেন। জিডিপির বর্ধমান ধারা অব্যাহত রাখা ও অর্থনীতিতে দৃঢ় অবস্থান তৈরিতে তার ভূমিকা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশংসিত। নারী অধিকার নিশ্চিত করা, মাতৃ মৃত্যুহার ও শিশু মৃত্যুহার রোধ করে তিনি বিশ্বব্যাপী সুনাম কুড়িয়েছেন। পরিবেশ রক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে তিনি বিশ্বনেতাদের দৃষ্টিতে অগ্রগামীদের একজন। শেখ হাসিনা ২০১০ সালে নিউইয়র্ক টাইমস সাময়িকীর অনলাইন জরিপে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০ নারীর মধ্যে ষষ্ঠ স্থানে ছিলেন। এ ছাড়া ২০১১ সালে বিশ্বের সেরা প্রভাবশালী নারী নেতাদের তালিকায় সপ্তম স্থানে, ফোর্বসের করা ২০১৬ সালে বিশ্বের ক্ষমতাধর নারীদের তালিকায় ৩৬তম স্থানে আছেন তিনি। ২০১০ সালের ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবসের শতবর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা সিএনএন ক্ষমতাধর ৮ এশীয় নারীর তালিকা প্রকাশ করেছিল। সেই তালিকায় ষষ্ঠ অবস্থানে ছিলেন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালে সমুদ্রসীমা জয়ের জন্য তিনি সাউথ সাউথ পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ ৭০তম অধিবেশনে পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ লাভ করেন। এ ছাড়া তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের জন্য আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার লাভ করেন। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করা, নারী অধিকার, সুশাসন নিশ্চিতকরণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ধারাবাহিকতা রক্ষায় তিনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সমাদৃত।

 

বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী

জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী হিসেবে স্বীকৃত। আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোর নানা জরিপে বরাবরই তার নাম থাকছে প্রভাবশালী নারী রাজনীতিবিদ হিসেবে। ২০১৫ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনের বিবেচনায় বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী তিনি। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতি ও সামরিক সুসজ্জিত দেশের চ্যান্সেলর হিসেবে তিনি বিশ্ব রাজনীতিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। বিশ্ব রাজনীতির পালাবদলে তার দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশংসা কুড়িয়েছে। ক্ষমতাধর রাজনীতিবিদ এই মানুষটি এখনো সাধারণ জীবন-যাপনে অভ্যস্ত।  এখনো সেলুনে গিয়ে অন্যদের মতো চুল কাটান, কোনো বিশেষ ছাড় তিনি নেন না। জামার্নির রাজধানী বার্লিনের ‘মিউজিয়াম আইল্যান্ড’-এর একটি জাদুঘরের কাছে নিজস্ব একটি পুরনো ফ্ল্যাটে থাকেন তিনি। শুধু নিরাপত্তার জন্য দুজন পুলিশ বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। এখনো চ্যান্সেলর মেরকেল সাধারণ সুপার মার্কেটেই বাজার করতে যান।

 

টেক বিশ্বে সেরা নারী উদ্যোক্তা

তাইওয়ানের স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট কম্পিউটার নির্মাতা হাইটেক কম্পিউটার (এইচটিসি) করপোরেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান শের ওয়াং। একাধারে তিনি প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাও। শের ওয়াংয়ের জন্ম ১৯৫৮ সালে তাইওয়ানের তাইপেতে। তথ্যপ্রযুক্তি দুনিয়ায় সফল নারী ব্যবসায়ী হিসেবে দারুণ সফল শের ওয়াং। ফোর্বসের দেওয়া তথ্যমতে ২০১৫ সালে কোম্পানির সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১.৬ বিলিয়ন ডলার। ক্যালিফোর্নিয়ার দ্য কলেজ প্রিপারেটরি স্কুল ইন অকল্যান্ডে পড়াশোনা শুরু। পরে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি নেন। শের ওয়াং তাইওয়ানের কম্পিউটার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট ইন্টারন্যাশনাল কম্পিউটারে ১৯৮২ সালে যোগ দিয়ে নিজের পেশা জীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালে মাদারবোর্ডের চিপ ও সার্কিট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভিআইএ টেকনোলজিস প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৯৭ সালে সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে চালু করেন এইচটিসি করপোরেশন।

 

যার গানে মাতোয়ারা

অ্যালিসিয়া আওজেলো কুক ভক্তদের কাছে পরিচিত অ্যালিসিয়া কিজ নামে। তিনি আমেরিকান গায়িকা, গীতিকার, চিত্রকর ও একাধারে অভিনেত্রী। ১৯৮১ সালে জন্মগ্রহণ করা এই গুণী নারীর রয়েছে বিশ্বজুড়ে দারুণ খ্যাতি। এ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী তার ৩০ মিলিয়নের বেশি রেকর্ড বিক্রয় হয়েছে। তিনি একক ও ডুয়েট গানে সমান জনপ্রিয়। তার দ্বিতীয় ডুয়েট মাই বো-এর জন্য ২০০৫ সালে জেতেন গ্রেমি অ্যাওয়ার্ড। এর পরের বছর তিনি প্রথম লাইভ অ্যালবাম ‘আনপ্লাগড’ বের করেন। ২০১৬ সালে রিলিজ পাওয়া অ্যালবাম ‘হেয়ার’ হিপহপ টপ লিস্টে সপ্তম হয়।

 

এভারেস্টকন্যা

এভারেস্টজয়ী অন্যান্য নারীর চেয়ে লাখপা শেরপা এগিয়ে। এ পর্যন্ত তিনি সাতবার মাউন্ট এভারেস্টকে জয় করেছেন। বিশ্বের আর কোনো নারী এতবার এভারেস্টের চূড়ায় নিজের পদচিহ্ন রাখতে পারেননি। তিনি প্রথম নেপালি নারী হিসেবে ২০০০ সালে প্রথম এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন এবং সফলতার সঙ্গে নেমে আসেন। ১১ ভাইবোনের মাঝে বেড়ে ওঠা লাখপার রয়েছে দুই মেয়ে ও এক ছেলে। ২০০০ সালে এশিয়ান ট্র্যাকিংয়ের স্পন্সরে তিনি পাহাড় অভিযানে নেতৃত্ব দেন। ২০১৬ সালে তিব্বত হয়ে মাউন্ট এভারেস্টে ওঠা ছিল সপ্তমবারের মতো।

 

অপেরাহ উইনফ্রে

 [অনুপ্রেরণীয় ব্যক্তিত্ব]

অপেরাহ গেইল উইনফ্রে একজন জনপ্রিয় মার্কিন টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব। টকশোর উপস্থাপিকা হিসেবে তিনি ১৯৮০-এর দশকের মধ্যভাগ  থেকে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তিনি অপেরাহ নামেই সমধিক পরিচিত। একই সঙ্গে তিনি একজন মানবহিতৈষী ও গণমাধ্যম ধনকুবের। বিস্তৃত টকশো ‘দ্য অপেরাহ উইনফ্রে শো’ তাকে একাধিক অ্যামি অ্যাওয়ার্ড এনে দিয়েছে। এই শো টেলিভিশনের ইতিহাসে আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে বেশি প্রচারিত বলে গণ্য। নিজে ম্যাগাজিন প্রকাশের পাশাপাশি একজন শক্তিমান সাহিত্য সমালোচক এবং একাডেমি অ্যাওয়ার্ড মনোনীত অভিনেত্রী।

 

আইরিন রোজেনফেল্ড

 [ধনী সিইও]

স্ন্যাকস ও চকোলেট উৎপাদক জায়ান্ট করপোরেশন মোন্ডেলেজ ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান ও সিইও আইরিন আইরেন রোজেনফেল্ড। গত ত্রিশ বছর ধরে তিনি ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্পের সঙ্গে আছেন। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফুড কোম্পানি ক্রাফটস ফুডসের চেয়ারম্যান ও সিইও হিসেবে আইরিন রোজেনফেল্ড তার কর্মদক্ষতা নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছেন। ২০০৯ সালে তিনি ক্রাফটকে পরিবর্তন করে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপে ডো জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়ালে পরিণত করেন। বর্তমানে রোজেনফেল্ডের বার্ষিক বেতন ১৯.৩ মিলিয়ন ডলার।

 

জিয়াং হুইহুয়া

 [সেরা অ্যাথলেট]

চীনের মেয়ে জিয়াং হুইহুয়া ২০১৫ সালে হোস্টন ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে ১৯৩ কেজি ভারোত্তোলন করে স্বর্ণপদক জয় করেন। ১৯৯৮ সালে জন্মগ্রহণ করা জিয়াং হুইহুয়া ২০১৬ সালে সর্বকনিষ্ঠদের মাঝেও বেশি ভারোত্তোলনের আসন দখলকারী। তার নিজের ওজন মাত্র ৪৮ কেজি। তিনি ২০১৩ সালে এশিয়ান ইয়ুথ গেমস, ২০১৪ সালে এশিয়ান ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নশিপ ও ইয়ুথ অলিম্পিক গেমস, ২০১৫ সালে ওয়ার্ল্ড জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ২০১৫ সালে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে বড় জয়গুলো পান। এ পর্যন্ত তার রেকর্ডই সেরা।

 

সাফিয়া ফিরোজি

 [নামকরা পাইলট]

আফগানিস্তানের ২৬ বছর বয়সী নারী সাফিয়া ফিরোজি। শৈশবে তিনি ছিলেন শরণার্থী, এখন পাইলট। তার স্বামী পদাতিক বাহিনীর জন্য পরিবহন বিমান চালান। তারা দুজনেই আফগানিস্তানের বিমান বাহিনীর অংশ। তালেবানদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। ফিরোজি চালান সি-২০৮ বিমান। ১৯৯০-এর দশকে ফিরোজি শিশু। ওই সময়ে আফগানিস্তানের যুদ্ধবাজ নেতারা গৃহযুদ্ধে লিপ্ত হন। এ সময় ফিরোজির পরিবার কাবুলের বাড়ি ছেড়ে পালায়। তারা চলে যান পাকিস্তানে।

 

যুদ্ধ সাংবাদিক

[মার্গারেট ব্রুক হোয়াইট]

পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম যুদ্ধের খবর সংগ্রহকারী নারী মার্গারেট ব্রুক হোয়াইট। তার সাহসিকতা প্রকাশের আগে ঝুঁকিপূর্ণ সংবাদ সংগ্রহে কেবল পুরুষদেরই যোগ্য মনে করা হতো। কিন্তু হোয়াইট মানুষের সেই বদ্ধমূল ধারণা গুঁড়িয়ে দেন। তিনিই ছিলেন প্রথম বিদেশি ফটোগ্রাফার, যাকে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভিতরকার ছবি তোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ইতিহাসে যে কজন সাংবাদিক এ উপমহাদেশ বিভাজনের সময়ে খবর ও ছবি সংগ্রহের কাজ করেছিলেন, হোয়াইট তাদের অন্যতম। পাক-ভারত বিভাজনের সময় তার তোলা অনেক বিখ্যাত ছবি এখনো রয়েছে।

 

ডাইন গ্রিন

[প্রযুক্তিবিদ]

ডাইন গ্রিন বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পরিচিত। তিনি গুগল ক্লাউড ব্যবসার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ডাইন গ্রিন গুগল এন্টারপ্রাইজ ব্যবসায় সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির বোর্ড সদস্য হিসেবেও আছেন। তিনি ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ভিএম ওয়্যারের সিইও ছিলেন। ডাইন গ্রিন গুগল ছাড়াও সাইবেস, ট্যানডেম কম্পিউটারস এবং সিলিকন গ্রাফিক্সের ইঞ্জিনিয়ার ও ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠানে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।

 

কাসান্দ্রা দে পেকল

[বেশি দেশ ভ্রমণকারী]

ওয়াশিংটনের মেয়ে ২৭ বছর বয়সী কাসান্দ্রা দে পেকল তিন বছর তিন মাসেরও কম সময়ে ১৯৬টি দেশ ভ্রমণের রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন। তরুণ ও নারী হিসেবে এই রেকর্ড প্রথম তারই। এরই মধ্যে তার ভ্রমণ করা দেশের সংখ্যা ১৮১টি। ২০০৯ সালে তার সফর শুরু হয়। প্রথমদিকে ভ্রমণে সঙ্গী ছিলেন কাসান্দ্রার ভাই। এরপর বাকি পথ ভাইকে ছাড়া একাই যেতে হয় কাসান্দ্রাকে। দুই বছর যাত্রাপথে তিনি কখনো ট্রেনে ঘুমিয়েছেন, কখনো স্টেশনের মেঝেতে থেকেছেন, কখনো পায়ে হেঁটেছেন। তার এই বিশ্ব ভ্রমণের নামকরণ করেছেন ‘এক্সপেডিশান ১৯৬’।

 

সাইকেল বিপ্লবী নারী

২০১৬ সালে আমনা সোলাইমান একাই গাজার নারী সাইকেলিং ক্লাবের নেতৃত্ব দেন। ফিলিস্তিনের জাবালিয়া রিফিউজি ক্যাম্পে থেকে এই শরণার্থী এলাকার নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও যাতায়াতের সুবিধার জন্য সাইকেলিংকে সমর্থন দিয়ে আসছেন। এলাকার নারী গ্রুপে সাইকেল চালানোর প্রশিক্ষণও দিয়ে আসছেন। তিনি যে অঞ্চলে অবস্থান করেন সেখানে সাইকেল চালানো দূরে থাক যে কোনো খেলায় অংশগ্রহণও নিষেধ ছিল। কিন্তু ক্ষমতা দখলের পর হামাসের সহায়তায় আমনা সোলাইমানের এই ক্লাব গঠন রীতিমতো একটি বিপ্লব সৃষ্টি করে সে দেশে।

 

তারকা কৌতুকাভিনেত্রী

বিশ্বের সেরা কৌতুকাভিনেত্রী আমেরিকান অ্যামি স্কিউমার। লেখিকা ও প্রযোজক হিসেবেও তিনি পরিচিত। তার ইনসাইডার অ্যামি স্কিউমার ২০১৩ সালের কমেডি সিরিয়াল হিসেবে পিবডি পুরস্কার লাভ করে। ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে একাধিক পুরস্কার লাভ করেছেন। অথচ এই অভিনেত্রীই ক্যারিয়ারের শুরুতে ছিলেন চরমভাবে বিফল। চৌদ্দটি সেশন পার করে তবে এনবিসি রিয়েলিটি টেলিভিশন ট্যালেন্ট শোতে চতুর্থ স্থান অধিকার করেন। কেউ কি তখন ভেবেছিলেন বার বার হেরে যাওয়া এই অভিনেত্রী মানুষ হাসাতে বিশ্বের সেরা ওস্তাদ হবেন?

 

জে কে রাউলিং

 [ধনী ও জনপ্রিয় লেখিকা]

পুরো নাম জোয়ান ক্যাথলিন রাউলিং। ব্রিটেনের এক্সিটার বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শেষ করেন। ছোট থেকে গল্প লেখার অভ্যাস রাউলিংয়ের। মূলত জীবিকার তাগিদেই উপন্যাস লেখা শুরু করেন তিনি। সাত খণ্ডের হ্যারি পটার লিখে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে যান। পঞ্চম খণ্ড হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ফিলসফারস স্টোন বের হতেই সারা বিশ্বে হৈচৈ পড়ে যায়। এ পর্যন্ত ৫৫টি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। ৪০ কোটি কপিরও বেশি বিক্রি হয়েছে তার বই। হ্যারি পটার লিখে জে কে রাউলিং এখন ব্রিটেনের সেরা ধনী। তার প্রথম জীবন কেটেছে দারিদ্র্য দুঃখ কষ্টের মাঝে।

 

সেরেনা উইলিয়ামস

[টেনিস তারকা]

সেরেনা উইলিয়ামস একজন আমেরিকান পেশাদার টেনিস খেলোয়াড়। তিনি সর্বমোট ২৫টি গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছেন। এর মধ্যে ১২টি একক, ১১টি নারী দ্বৈত, ২টি মিশ্র দ্বৈত। এ ছাড়া তিনি নারী দ্বৈতে দুবার অলিম্পিক স্বর্ণপদক লাভ করেছেন। বর্তমানে তিনি বেশি সংখ্যক গ্র্যান্ড স্লাম জয়ী ও বেশি প্রাইজমানি অর্জনকারী নারী। সেরেনা হলেন সাবেক ১ নম্বর পেশাদার নারী টেনিস খেলোয়াড় ভেনাস উইলিয়ামসের ছোট বোন। এই দুই বোন পরস্পরের বিরুদ্ধে ৮টি গ্র্যান্ড স্লাম ফাইনাল খেলেছেন অক্টোবর ২০০৯ পর্যন্ত। এর মধ্যে ৬টিতেই সেরেনা জিতেছেন।

 

ইয়াও ডিফেন

 [লম্বা নারী]

চীনের ইয়াও ডিফেন ৭ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতা নিয়ে বর্তমানে বিশ্বের সব থেকে লম্বা নারী। তিনি এখনো জীবিত। পিটুইটারি গ্ল্যান্ড এ টিউমারই তার এই অস্বাভাবিক উচ্চতার কারণ। ইয়াও ডিফেন জন্মেছিলেন খুব দরিদ্র পরিবারে। জন্মের সময় তার ওজন ছিল ২.৮ কেজি। তিন বছর বয়সে তিনি যে হারে খাওয়া শুরু করেছিলেন তা আর কোনো বাচ্চা খায় না। ১১ বছর বয়সেই তিনি ছয় ফুট দুই ইঞ্চি লম্বা হয়ে যান। ১৫ বছর বয়সে আরও সাত ইঞ্চি লম্বা হন।

 

ববি ব্রাউন

 [বিশ্বসেরা বিউটিশিয়ান]

নারীরা সাজতে পছন্দ করে। তাকে কেউ সাজিয়ে দিলে আরও খুশি। এই সাজিয়ে দেওয়াকে পেশা হিসেবে নিয়ে বিশ্বসেরা হয়েছেন ববি ব্রাউন। আমেরিকান প্রফেশনাল এই আর্টিস্ট নব্বইয়ের দশকে আসেন সাজগোজে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে। তিনিই প্রথম ন্যুড, ন্যাচারাল স্যাডো, গ্লোয়ি এবং ভারী সাজের ভিন্নতা স্পষ্ট করেন। তার নামের ব্র্যান্ডে বাজারে বর্তমানে অনেক কসমেটিকস আছে। বিউটি টিপসের বহু বই আছে তার লেখা। কাজের দক্ষতার জন্য তাকে সুপার ওমেন হিসেবেও ভূষিত করা হয়।

 

অন্যরকম

ডোনা সিম্পসন

 [খাদক নারী]

যুক্তরাষ্ট্রের ডোনা সিম্পসন চান মোটা হয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে। ৪২ বছর বয়সী এই নারী বাস করেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সির ওল্ডব্রিজে। তার বর্তমান ওজন ৬০০ পাউন্ড। কিন্তু তার লক্ষ্য এক হাজার পাউন্ড বা ৫০০ কেজি ওজনের অধিকারী হওয়া। ইতিমধ্যে তিনি সবচেয়ে মোটা ‘মা’ হিসেবে বিশ্ব রেকর্ডের অধিকারী। তার পরিবারে সাপ্তাহিক খাবারের ব্যয় ৭৫০ ডলার। এ ব্যয় মেটানোর জন্য তিনি একটি ওয়েবসাইট পরিচালনা করেন। সাইটে টাকার বিনিময়ে দর্শকরা ডোনার প্রতিদিনের কাজকর্ম, খাওয়া-দাওয়া বা গোসল করার দৃশ্য দেখতে পারেন।

 

হেট্টি গ্রিন

 [ধনী ও কৃপণ নারী]

বিশ্বের সবচেয়ে কৃপণ ব্যক্তি একজন নারী! তিনি একজন আমেরিকান। তার নাম হেট্টি গ্রিন। আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরের বাসিন্দা তিনি। বিপুল সম্পদশালী হয়েও সর্বকালের সেরা কৃপণ হিসেবে খ্যাতি আছে এ ব্যবসায়ী নারীর। তিনি এতটাই কৃপণ ছিলেন যে, শীতের সময় গরম পানি পর্যন্ত ব্যবহার করতেন না। খেতেন মাত্র ১৫ সেন্ট ব্যয় করে এক ধরনের ঠাণ্ডা পুডিং। একেবারে জরাজীর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি তার একমাত্র কালো পোশাকটি কখনো পরিবর্তন করতেন না। পানি খরচ হবে বলে হাত ধুতেন কম, গাড়িও চড়তেন একটি অতি পুরনো।

 

এলিজাবেথ টেইলর

[অপ্রতিদ্বন্দ্বী অভিনেত্রী]

এলিজাবেথ টেইলর ব্রিটিশ আমেরিকান অভিনেত্রী। অল্প বয়স থেকেই ভিন্নধর্মী স্টাইলের জন্য খুব বেশি জনপ্রিয় ছিলেন। তার বন্ধু-বান্ধবের কাছেও ছিলেন অনুকরণীয়। ১৯৪৪ সালে অল্প বয়সে শিশু অভিনেত্রী হিসেবে নাম লিখিয়ে তিনি তার গোড়াপত্তন করেছিলেন। তার অভিনীত চলচ্চিত্র যেমনভাবে সবার কাছে সমাদৃত হয়েছিল ঠিক তেমনি জনপ্রিয় হয়েছিল চিরসুন্দরী এলিজাবেথ টেইলরের স্টাইল। তার অভিনয় প্রতিভা ও সৌন্দর্যের জন্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সেই সঙ্গে তার হলিউড জীবন-পদ্ধতির জন্যও অনুসরণীয়। আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট টেইলরকে তাদের নারী কিংবদন্তি তালিকায় সপ্তম স্থানে রেখেছে। তাইতো চিরসুন্দরী হিসেবে তার নামটি এখন পর্যন্ত সবার সামনে আগেই আসে।

 

ভারতীয় মেয়ে

 [বেশি গয়নার মালিক]

সৌদি আরবের বাদশাহ আবদুল্লাহ মেয়ের বিয়েতে উপহার দিয়েছিলেন একটি সোনার বাথরুম ও তিন কোটি ডলারের বিয়ের পোশাক। কিন্তু পরিহিত গয়নার দিক থেকে ভারতীয় এক মিষ্টি ব্যবসায়ীর মেয়ে রয়েছেন এগিয়ে। মেয়ের বিয়ের সময় বাবা চার লাখ পাউন্ড মূল্যমানের (প্রায় ৪ কোটি রুপি) সোনার গয়নায় সাজিয়েছিলেন। তাই সবচেয়ে বেশি মূল্যমানের গয়নার মালিক হিসেবে ভারতীয় এই মেয়েকেই হয়তো ধরা যায়। মেয়ের বিয়েতে এত অর্থ-সম্পদ খরচ করায় পরিবারটির নিরাপত্তার স্বার্থে নাম-পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে। সূত্র- ডেইলি মেইল

 

আশা মেনডেলা

 [লম্বা চুলের নারী]

৫০ বছর বয়সী আশা মেনডেলা বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা চুলের অধিকারী। ২৫ বছর আগে তিনি সিদ্ধান্ত নেন আর চুল কাটবেন না। তাই এখন তাকে ব্ল্যাক রুপাঞ্জেল নামে আখ্যায়িত করা হয়। সবচেয়ে লম্বা চুলের লক-এর জন্য তার বিশ্ব রেকর্ড রয়েছে। বর্তমানে আশা মেনডেলার চুল ১৯ ফুট ও ৬ ইঞ্চি লম্বা। মেনডেলা আগে ন্যানির কাজ করতেন। ব্যস্ততার কারণে চুলের যত্ন নেওয়া হতো না। তাই চুলের লক বাড়ানো শুরু করলেন। তারপর দীর্ঘদিন চুল না কেটে বর্তমানে মেনডেলা হয়ে গেলেন লম্বা চুলের অধিকারী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর