বৃহস্পতিবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিশ্ব কাঁপানো শিশু-কিশোর

সাইফ ইমন

বিশ্ব কাঁপানো শিশু-কিশোর

আইকিউর মান দিয়েই জানা যায় কার মেধা কতখানি। আইকিউতে অনেক শিশু অ্যালবার্ট আইনস্টাইন কিংবা স্টিফেন হকিংকেও হারিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া বিজ্ঞান, খেলাধুলা, প্রযুক্তি কিংবা শারীরিক কসরতেও কিছু শিশু তাক লাগিয়ে দিয়েছে বিশ্বকে। যেমন ধরুন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সুবর্ণ আইজ্যাক। বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এমআইটির ফিজিক্সের ডক্টরেটদের সঙ্গে সে সমানে আলোচনা করে যায় বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের জটিল সব বিষয় নিয়ে। এমন আরও কিছু শিশু-কিশোর নিয়ে আজকের রকমারি-

 

বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত

সুবর্ণ আইজ্যাক

২০১৩ সালের একদিন। এক বছর বয়সী সুবর্ণ আইজ্যাক বারী নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালের বেডে জ্বরে কাতরাচ্ছিল। তার বাবা রাশীদুল বারী বললেন, ‘আই লাভ ইউ মোর দ্যান অ্যানিথিং ইন দি ইউনিভার্স।’ সুবর্ণ বলল, ‘ইউনিভার্স অর মাল্টিভার্স?’ এই হলো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সুবর্ণ আইজ্যাক। সে মাত্র পাঁচ বছর বয়সে অঙ্ক, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নে দক্ষতা দেখিয়ে সারা পৃথিবীকে নাড়িয়ে দিয়েছে। দেড় বছর বয়সে রসায়নের পর্যায় সারণি মুখস্থ করে ফেলে। দুই বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের কলেজে ইন্টারভিউ দেয়। ভয়েস অব আমেরিকায় সাক্ষাৎকার দেয়। তিন বছর বয়সে লেবুর সাহায্যে ব্যাটারি এক্সপেরিমেন্ট করে সে। সাড়ে তিন বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্টে বারাক ওবামার চিঠি পায় সুবর্ণ আইজ্যাক।

 

 

 

মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকেই মাঠ কাঁপাচ্ছে

মোন ডেভিস

মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকেই খেলার মাঠ কাঁপাচ্ছে মোন ডেভিস। বিশ্বের অন্যতম সেরা খুদে অ্যাথলেটদের একজন সে। বেসবল তারকা মোন ডেভিসকে নিয়ে বলছি। আগস্টে তাকে নিয়ে বিখ্যাত স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড তাদের ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ করেছিল। বড় বড় হরফে লিখেছিল ‘‘রিমেম্বার হার নেম’। সত্যিকার অর্থেই তার নামটি ভুলে যাওয়ার নয়। ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ হওয়ার পরের ম্যাচেই জাত চিনিয়েছিলেন তিনি। চার বছর আগের লিটল লিগ ওয়ার্ল্ড সিরিজে সেরা আকর্ষণ ছিলেন ডেভিস। মেয়েদের খেলায় তাকে ঘিরে অনেক আশার জন্ম দিয়েছে। তার দল ফিলাডেলফিয়ার হয়ে খেলায় মুগ্ধ করে যাচ্ছেন তিনি দর্শকদের। স্পোর্টস তারকা হিসেবে দিন দিন নিজেকে নিয়ে যাচ্ছেন অনন্য উচ্চতায়। এ বয়সেই তার খেলোয়াড়ী প্রতিভা বিস্ময়কর বটে।

 

 

দুই বছর বয়সেই ইংরেজি ও কোরিয়ান ভাষায় দক্ষতা!

জেরেমি শুলার

দুই বছর বয়সে শিশুরা হয়তো কেবল কথা বলা শেখে। কিন্তু জেরেমি শুলার নামের বিস্ময়বালক  দুই বছর বয়সে ইংরেজি ও কোরিয়ান ভাষা রপ্ত করেছিল। আর অতটুকুন বয়সেই রীতিমতো এ দুই ভাষার বইও পড়ত জেরেমি শুলার। এরপর বয়স বেড়ে যখন ছয় হলো তখন সে ক্যালকুলাসে জটিল সব সমাধান করতে শুরু করল। সেই জেরেমির বয়স এখন ১৩ বছর। এ বয়সেই সে ভর্তি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। স্নাতক বিষয় হিসেবে ইংরেজ বাবা ও কোরীয় মায়ের মতো জেরেমিও বেছে নিয়েছে মহাকাশ প্রকৌশল। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রকৌশল অনুষদের ডিন ল্যান্স কলিন্সের ভাষ্য, জেরেমি ১০ বছর বয়সেই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষা গ্রহণের জন্য যোগ্যতা যাচাইয়ের পরীক্ষায় দারুণ ফল করে।

 

 

 

বাস্তবের স্পাইডারম্যান এই ইরানি শিশু

আরাত হোসেইনি

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল এই ছোট্ট শিশু। ইনস্টাগ্রামে তার ফলোয়ারের সংখ্যা ৮ লাখ ৭ হাজারের বেশি। বয়স মাত্র সাড়ে তিন বছর। নাম আরাত হোসেইনি। ইরানের বাবোল শহরের বাসিন্দা। ইনস্টাগ্রামের ভিডিওতে আরাতের অদ্ভুত কীর্তি দেখলে স্বয়ং স্পাইডারম্যানও তাকে ফলো করতে বাধ্য হতো! সাড়ে তিন বছর বয়সে সে ১০ ফুট উচ্চতার দেয়াল বেয়ে উঠে পড়ে তরতর করে। এ ছাড়া জিমন্যাস্টিকসের নানা মুভ করে অবলীলায়। আরাতের বাবা মুহাম্মদ বাড়িতে নিজেই অল্পবিস্তর ট্রেনিং দিতে শুরু করেন তাকে। সেসব ভিডিও আপলোড করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। ৫০০-এর ওপর ভিডিও আছে এই শিশুর।

 

 

 

নয় বছর বয়সেই কলেজ স্টুডেন্ট কায়রান!

কায়রান

যুক্তরাষ্ট্রের কলেজগুলোয় শিক্ষার্থী ভর্তির গড় বয়স যেখানে ১৭ থেকে ১৯, খুব মেধাবী হলেও ১৫ বা ১৪ বছরের নিচে ভর্তির রেকর্ডও যৎসামান্য। সেখানে বাংলাদেশের কায়রান কলেজে ভর্তি হয়েছে মাত্র নয় বছর বয়সে! তাও যেনতেন কোনো বিষয় নয়, রীতিমতো গণিত ও রসায়ন নিয়ে পড়ছে সে। ক্যালিফোর্নিয়ার লাস পজিটাস কলেজে ভর্তি হওয়া কায়রানের এমন অভাবিত প্রতিভাকে প্রথম সবার সামনে তুলে ধরে হাফিংটন পোস্ট। জানা যায়, কায়রানের মা কাজী জুলিয়া চৌধুরী ও বাবা মোস্তাহিদ কাজী। তাদের পূর্বপুরুষ সিলেটের বাসিন্দা। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কায়রানকে নিয়ে এখন গোটা বিশ্ব হতবাক।

 

 

 

এই মেয়ের আইকিউ স্কোর ১৬২!

লিডিয়া সেবাস্তিয়ান

ভারতীয় বংশোদ্ভূত কিশোরী লিডিয়া সেবাস্তিয়ান  নিয়মিত স্কুলে যায়, বন্ধুদের সঙ্গে মজাও করে। কিন্তু তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই সে তার আশপাশের বাচ্চাদের থেকে একেবারেই ব্যতিক্রম। মেনসার অমন কঠিন আইকিউ যাচাইয়ের পরীক্ষায় ১৬২ স্কোর তুলে ফেলেছে এই লিডিয়া সেবাস্তিয়ান। লিডিয়া গণমাধ্যমে বলে, ‘প্রথম দিকে আমি খুবই নার্ভাস ছিলাম। তবে যখন আমি পরীক্ষাটি শুরু করি তারপর সবকিছু সহজ লাগতে শুরু করল। ভয় অনেকটাই কেটে গিয়েছিল।’ মজার বিষয়, অবসর সময়ে ইন্টারনেট ঘাঁটতে গিয়েই লিডিয়া মেনসার আইকিউ টেস্টের খোঁজ পায়। তারপর বাবাকে জানায় সে এই টেস্ট দিতে আগ্রহী। এরপর পরীক্ষায় বসা এবং ইতিহাস সৃষ্টি করা।

 

 

 

বিস্ময়কর ভারতীয় শিশু অর্ণব শর্মা

অর্ণব শর্মা

ভারতের আরেক শিশু অর্ণব শর্মা। এই শিশুটিও অসম্ভব প্রতিভাবান। সে বাস করে দক্ষিণ ইংল্যান্ডের রিডিং শহরে। পড়ে শহরেরই ক্রসফিল্ড স্কুলে। সেও মেনসার কঠিন আইকিউ টেস্ট দিতে বসেছিল। তবে সেটা ছিল নিছক আগ্রহ থেকেই। তার পরিবারেরও কেউ কখনো ধারণা করতে পারেনি যে কোনোরকম পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই এই বিস্ময়বালক ১১ বছর বয়সে আইকিউ টেস্টে স্কোর করবে ১৬২! প্রশ্নের ধরন সম্পর্কেও জানা ছিল না এই শিশুর। বিশ্বকে তাক লাগানোর মতো স্কোর ১৬২ করেছে সে! অর্ণব গণমাধ্যমে জানায়, ‘মেনসা টেস্ট বেশ কঠিন। আমি এ পরীক্ষায় পাস করার আশা করিনি। আমার পরীক্ষাটি শেষ করতে আড়াই ঘণ্টার মতো লেগেছিল।’

 

 

আইনস্টাইন থেকে ২ পয়েন্ট বেশি!

অওম আমিন

অওম আমিন। একজন ভারতীয়। তার পরিবারের আদিনিবাস ভারতের গুজরাটে। বর্তমানে সে তার পরিবারের সঙ্গে ইংল্যান্ডে থাকে। অওম আমিন আইনস্টাইন, হকিং কিংবা বিল গেটসের চেয়েও ২ পয়েন্ট বেশি পেয়েছে মেনসার আইকিউ টেস্ট পরীক্ষায়! ভারতীয় এই বিস্ময়বালক পড়াশোনা করে বার্নেটের কুইন এলিজাবেথ গ্রামার স্কুলে। মেনসার পরীক্ষায় অওমের স্কোর ছিল ১৬২! মাত্র ১১ বছর বয়সেই এই কীর্তি অর্জন করে সে। গণমাধ্যমে অওম আমিন জানায়, সে বড় হয়ে চিকিৎসাশাস্ত্র এবং প্রকৌশল নিয়ে পড়তে চায়। সার্জারিতে কাজে লাগবে এমন রোবট তৈরি করতে চায়। স্টার ওয়ার্স মুভি সিরিজের ফ্যান অওমের পছন্দের তালিকায় রয়েছে ক্রিকেট আর দাবা।

 

 

পৃথিবীর সবচেয়ে প্রতিভাধর ১% মানুষের একজন

নিকোলা বার

নিকোলা বার। বয়স ১২ বছর। বাবা-মায়ের সঙ্গে বাস করে ইংল্যান্ডের এসেক্সের হার্লোতে। বয়স কম হলে কী হবে- এই বয়সেই বুদ্ধির পরীক্ষায় নিকোলা ছাড়িয়ে গেছে মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইনকে। মেনসার পরীক্ষায় তারও স্কোর ১৬২! মেনসার মতে, সাধারণ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের গড় আইকিউ স্কোর ১০০। কারও আইকিউ স্কোর যদি ১৪০-এর বেশি হয় তবে সে জিনিয়াস। মেনসার একজন মুখপাত্র আনা ক্লার্কসন জানান, নিকোলা পৃথিবীর সবচেয়ে প্রতিভাধর ১% মানুষের একজন। নিকোলার কাছে এ স্কোর অর্জনের পর তার অনুভূতি জানতে চাইলে সে বলেছিল, ‘এটা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। আমি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম।’

 

 

 

মাত্র নয় বছর বয়সে পর্বতশৃঙ্গ জয়!

টেইলর আর্মস্ট্রং

২০১৩ সালে আর্জেন্টিনার আকোনকাগুয়া পর্বতশৃঙ্গ জয় করে যুক্তরাষ্ট্রের নয় বছরের এই শিশু। এর মধ্য দিয়ে সে হলো দুই আমেরিকা মহাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গটি জয় করা সবচেয়ে কম বয়সী মানুষ। টেইলর আর্মস্ট্রং নামের ওই শিশু তার বাবা কেভিন আর্মস্ট্রং ও সহযোগী শেরপা লহাওয়াং ধনদুপের সঙ্গে আন্দিজ পর্বতের আর্জেন্টিনার অংশে অবস্থিত ওই শৃঙ্গে আরোহণ করে। বড়দিনের আগের দিন পর্বতশৃঙ্গে আরোহণের পর সে বলে, ‘যে কোনো শিশুই এটা করতে পারে। এর জন্য যা করতে হবে, তা হলো চেষ্টা। তাদের মনকে লক্ষ্যে স্থির করতে হবে।’ আগের বছর আফ্রিকার সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কিলিমানজারোয় আরোহণ করেছিল টেইলর।

সর্বশেষ খবর