রবিবার, ২৬ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা
টমাস আলভা এডিসন

টেলিগ্রাফ অপারেটর থেকে বিশ্বখ্যাত আবিষ্কারক

সাইফ ইমন

টেলিগ্রাফ অপারেটর থেকে বিশ্বখ্যাত আবিষ্কারক

টমাস আলভা এডিসন। বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী। বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কার করে গোটা পৃথিবী আলোকিত করেছিলেন। এ ছাড়া সফল বিজ্ঞানী হিসেবে গ্রামোফোন,

ভিডিও ক্যামেরাসহ আরও অনেক যন্ত্র আবিষ্কার করেছিলেন তিনি। ১৯৩১ সালে মারা যাওয়ার আগে হাজারখানেক প্যাটেন্ট ছিল তার নামে। মায়ের প্রভাব অনেক বেশি ছিল এডিসনের ওপর। আধুনিক শিল্পায়নের যুগান্তকারী উন্নতি ঘটেছিল তার হাত ধরেই। অসামান্য এ মানুষটির জীবনের নানা দিক নিয়ে আজকের রকমারি-

 

পৃথিবীকে আলোকিত করেছিলেন

টমাস আলভা এডিসন ছিলেন একজন মার্কিন উদ্ভাবক এবং সফল ব্যবসায়ী। ১৮৪৭ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যুুক্তরাষ্ট্রের ওহিওর মিলান শহরে জন্ম নেন এডিসন। তার বাবার নাম স্যামুয়েল এডিসন ও মায়ের নাম ন্যান্সি এডিসন। তাদের সবচেয়ে ছোট এবং সপ্তম সন্তান ছিলেন এডিসন। বাবা স্যামুয়েল ছিলেন কানাডা থেকে নির্বাসিত একজন রাজনৈতিক কর্মী। টমাস এডিসন গ্রামোফোন, ভিডিও ক্যামেরা এবং বৈদ্যুতিক বাল্বসহ বহু যন্ত্র আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি তার জীবনের শুরুর দিকে একজন টেলিগ্রাফ অপারেটর হিসেবে কাজ করেছেন। ১৮৬৬ সালে ১৯ বছর বয়সে বার্তা সংস্থা ‘এপি’ বা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস-এ টেলিগ্রাফ অপারেটর হিসেবে চাকরি নিয়েছিলেন। নাইট শিফটের চাকরির পাশাপাশি টমাস আলভা এডিসন দিনের বাকি সময়টুকু গবেষণা ও পড়াশোনার কাজে লাগাতেন। তার গবেষণা যেমন ছিল থিউরিটিক্যাল আবার তেমনি ব্যবহারিক। বিভিন্ন জিনিস নিয়ে সব সময়ে এক্সপেরিমেন্ট বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেন তিনি। তার মধ্যে একটা বিষয় ছিল যে তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেই থেমে যেতেন না। বরং তার জানাকে কাজে লাগিয়ে নতুন চিন্তা করার একটা স্বভাব গড়ে উঠেছিল। সারাক্ষণ নিত্যনতুন উদ্ভাবন মাথায় ঘুরপাক খেত। ১৮৬৯ সালে ২২ বছর বয়সী টমাস এডিসন নিউইয়র্ক শহরে পাড়ি জমান। সেখানেও তার গবেষণার কাজ সমানভাবে চলছিল। প্রথম সফল আবিষ্কারটি সেখানেই করেন। এটি ছিল একটি স্টক টিকার প্রিন্টার। যেটির নামকরণ করা হয়েছিল ‘ইউনিভার্সাল স্টক প্রিন্টার’। স্টক টিকার হলো শেয়ার বা স্টক মার্কেটের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বা স্টকের মূল্য ওঠা-নামা করার সংকেত। টমাসের আবিষ্কারের ফলে কখন কোনটির দাম উঠছে বা নামছে তা খুব সহজে দেখা যেত এবং একই সঙ্গে টমাসের প্রিন্টার অনেকগুলো স্টক একসঙ্গে দেখাতে পারত। ‘গোল্ড অ্যান্ড স্টক টেলিগ্রাফ কোম্পানি’ তার কাজে দারুণ মুগ্ধ হয়ে তাকে ৪০ হাজার ডলার দিয়ে যন্ত্রটির স্বত্ব কিনে নেয়। ১৮৭০ এর দশকে ৪০ হাজার ডলার মানে বিশাল অঙ্ক।

এ সাফল্যের পর টমাস টেলিগ্রাফ অপারেটরের চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি আবিষ্কারক হয়ে যাবেন বলে ঠিক করেন। ১৮৭০ সালে আমেরিকার নিউজার্সিতে তিনি প্রথম তার নিজস্ব ল্যাব স্থাপন করেন। সেখানে কয়েকজন মেশিন অপারেটরও নিয়োগ দেন। তার ল্যাবটি আসলে ছিল তার ব্যবসায়িক কারখানা। সেখানে তিনি নতুন নতুন যন্ত্র তৈরি করতেন এবং সবচেয়ে বেশি দাম যে দিতে পারত তার কাছে বিক্রি করতেন। যে টেলিগ্রাফ দিয়ে তার কর্মজীবনের শুরু সেই যন্ত্রের উন্নতিও তিনি করেছিলেন। প্রথম ল্যাব থেকেই তিনি ‘কোয়ার্ডার প্লেক্স’ টেলিগ্রাফ আবিষ্কার করলেন, যা একটি তারের মধ্যদিয়ে দুটি আলাদা জায়গায় সিগন্যাল পাঠাতে পারত। ধনকুবের জে-গোউল্ডের কোম্পানি টমাস আলভা এডিসনের কাছ থেকে যন্ত্রটির স্বত্ব ১ লাখ ডলারেরও বেশি মূল্য দিয়ে কিনে নেয়। যা বর্তমানে ২ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। আবিষ্কার করেছিলেন অডিও রেকর্ডারও। ১৮৭৬ সালে টমাস তার কার্যক্রম নিউজার্সির মেনলো পার্ক নামক জায়গায় স্থানান্তর করেন। যদিও এ ফোনোগ্রাফ সাধারণ মানুষের কাছে আসতে আরও ১০ বছরের মতো লেগেছিল, কিন্তু এ যন্ত্রের মাধ্যমেই এডিসন প্রথমবারের মতো সারা বিশ্বে বিখ্যাত হন। তিনি এক সময় শুধু বাল্বের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিলেন। এরপর সমগ্র বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি সাধনে তৎপর হয়েছিলেন। তৈরি করলেন নতুন এক ধরনের ডাইনামো, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার জেনারেটর থেকে শুরু করে ল্যাম্প তৈরি করা প্রভৃতি। নিউইয়র্কে প্রথম বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র গড়ে উঠল, যার অগ্রনায়ক ছিলেন বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন।

 

নিজের নাম ভুলে গিয়েছিলেন!

টমাস আলভা এডিসন তখন বেশ ছোট। হঠাৎ একদিন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না তাকে। সবাই তাকে খুঁজে খুঁজে যখন হন্যে হয়ে উঠেছিল তখন তাকে পাওয়া গিয়েছিল এক নির্জন জায়গায় কয়েকটি মুরগির ডিমের ওপর উপুর শোয়া অবস্থায়। এ দৃশ্য দেখে সবাই অবাক। জিজ্ঞেস করার পর টমাস বললেন, তিনি নাকি ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা বের করতে চেয়েছিলেন। তার অকাট্য যুক্তি ছিল, মুরগির নিচে ডিম রাখলে তা থেকে বাচ্চা বেরোলে আমার পেটের নিচে শরীরের তাপে কেন বাচ্চা হবে না? এটা তো ছিল ছোটবেলার কথা। বড় হয়েও টমাস যখন অনেক জনপ্রিয় এবং টাকাওয়ালা মানুষ তখন একদিন তিনি গিয়েছেন ট্যাক্স অফিসে রিটার্ন জমা দিতে। সেখানে ফর্মে নিজের নাম লিখতে গিয়ে পড়ে যান বিরাট ফ্যাসাদে। কারণ তিনি কিছুতেই নিজের নাম মনে করতে পারছেন না। দিব্যি নিজের নামটাই ভুলে বসে আছেন। সেদিন এক প্রতিবেশী তাকে উদ্ধার করেছিল। সেই প্রতিবেশী তাকে দেখে জানতে চেয়েছিলেন, ‘কী ব্যাপার টমাস কী করো এখানে?’ মুহূর্তেই মনে পড়ে যায় টমাসের নিজের নামখানি।  এমন আরও মজার ঘটনা আছে। একদিন তিনি কাজ করছিলেন ল্যাবরেটরিতে, খেয়াল চাপলো হেলিকপ্টার বানাবেন। আর জ্বালানি হিসেবে থাকবে বারুদ, আগ পিছ না ভেবে যেই চিন্তা সেই কাজ, একটা নমুনা বানিয়ে যেই চালাতে গেলেন, সঙ্গে সঙ্গে বুম! পুরো ল্যাবরেটরিতে আগুন ধরে গেল। অন্য একটি ঘটনা হলো, একদিন এডিসন লক্ষ করলেন একটি ছেলে রেল লাইনের ওপর খেলা করছে। দূরে একটি ওয়াগন এগিয়ে আসছে। ছেলেটির সেদিকে নজর নেই। বিপদ আসন্ন বুঝতে পেরে হাতের কাগজ ফেলে দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে রক্ষা করেছিলেন ছেলেটিকে। সেই ছেলেটি ছিল স্টেশন মাস্টারের একমাত্র ছেলে।

 

মায়ের প্রেরণায় বিশ্বখ্যাত এডিসন

একজন মায়ের ভালোবাসা ও শিক্ষা তার সন্তানকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে। স্কুলশিক্ষিকা মায়ের প্রভাব অনেক বেশি ছিল এডিসনের প্রতি। বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন তখন স্কুলছাত্র। একদিন এডিসন স্কুল থেকে বাড়ি এলেন। একটা কাগজ দিলেন মায়ের হাতে। বললেন, ‘আমার শিক্ষক এ কাগজটা একমাত্র তোমারই হাতে দিতে বলেছেন।’ কাগজটা পড়লেন মা। তার চোখে পানি এলো। ছেলেকে শুনিয়ে তিনি জোরে জোরে পড়লেন, ‘আপনার ছেলে খুবই প্রতিভাবান। আমাদের স্কুল খুবই ছোট। তাকে শিক্ষাদানের মতো কোনো শিক্ষক এখানে নেই। দয়া করে তাকে আপনি নিজেই শিক্ষা দিন।’ অনেক দিন পরের কথা। এরই মধ্যে এডিসনের মা মারা গেছেন। এডিসন শতাব্দীর সেরা বিজ্ঞানী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। একদিন তিনি তাদের পুরনো ঘরে একটা ভাঁজ করা কাগজ পেলেন। এটিই সেই কাগজ যেটা বহুদিন আগে ছেলেবেলায় শিক্ষক দিয়েছিলেন তার মাকে দিতে। তিনি কাগজটা খুললেন। সেই চিঠিতে লেখা- ‘আপনার সন্তান মানসিকভাবে অসুস্থ। তাকে আমরা আর কোনোমতেই স্কুলে রাখতে পারছি না। তাকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হলো।’ চিঠি পড়ে এডিসন আবেগে কাতর হয়ে পড়েন। তারপর তার ডায়েরিতে লিখলেন, ‘টমাস আলভা এডিসন মানসিক অসুস্থ এক শিশু ছিলেন কিন্তু তার মা তাকে শতাব্দীর সেরা প্রতিভাবান মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছেন।’

 

স্কুল জীবন শেষ করতে পারেননি

চিরস্মরণীয় এ বিজ্ঞানী তার স্কুল জীবন শেষ করতে পারেননি। অল্প বয়সেই জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার কারণে শ্রবণ প্রতিবন্ধী ছিলেন টমাস এডিসন। বড় হতে হতে একরকম বধির হয়ে যান তিনি। ১৮৫৪ সালে এডিসনের পরিবার চলে যায় মিশিগানের পোর্ট হুরনে। সেখানেই স্কুলে যোগ দেন এডিসন। কিন্তু তার স্কুল জীবন তিন মাসের বেশি ছিল না। তিনি অসম্ভব মেধার অধিকারী ছিলেন। স্কুলের গণ্ডিবাঁধা পড়াশোনা তার কাছে একঘেঁয়েমি মনে হতো। তাই পড়াশোনায় কোনো মনোযোগ ছিল না তার। আবার শিক্ষকদের পড়াশোনা করানোর পক্রিয়াও পছন্দ করতেন না তিনি। শিক্ষকদের অভিযোগ শুনে ক্ষুব্ধ হতেন। স্কুলের শিক্ষকরাও তার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতেন না। রেভেরেন্ড অ্যাঙ্গল নামের এক শিক্ষককে একদিন পেছন থেকে ‘বোকা’ বলেছিলেন এডিসন। এতে ভীষণ ক্ষেপে গিয়েছিলেন সেই শিক্ষক। ফলস্বরূপ মাত্র তিন মাসের মাথায়ই স্কুলজীবনের সমাপ্তি ঘটেছিল এডিসনের। এর পর আর কোনোদিন স্কুলে যাননি এডিসন। শিক্ষকদের এ বিরূপ আচরণ ছোট্ট এডিসনের মনে যেন খারাপ প্রভাব না ফেলে সে জন্য স্কুল থেকে ছাড়িয়ে আনেন এডিসনের মা। তারপর থেকে মা-ই তার শিক্ষিকা হিসেবে কাজ করে গেছেন। তিনি বাসায় বসেই তাকে পড়ানো শুরু করেছিলেন। মাত্র ১১ বছর বয়সেই বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রচুর বই পড়ে ফেলেন এডিসন। ফলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার চেয়ে অধিক প্রয়োজনীয় স্বশিক্ষায় আর জ্ঞানচর্চায় তার আগ্রহ বাড়ে ব্যাপকভাবে। এভাবেই ধীরে ধীরে তিনি পরিণত হয়ে ওঠেন বিশ্বসেরা আবিষ্কারক হিসেবে।

 

হয়ে উঠেছিলেন সেরা উদ্যোক্তা

বিশ্বখ্যাত আবিষ্কারক টমাস আলভা এডিসনের একটা নতুন পরিচয় তৈরি হতে থাকে। তিনি ধীরে ধীরে একজন দক্ষ ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট ও বিজনেস ম্যাগনেট হয়ে উঠতে থাকেন। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে তার একের পর এক আবিষ্কার আর ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি আমেরিকার অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিল। আজকের আমেরিকান অর্থনীতি যে প্রযুক্তিনির্ভর তার শুরুটা হয়েছিল টমাস আলভা এডিসনের হাত ধরে। প্রথম দিকে করপোরেট পরিবেশে ঠিক মানিয়ে নিতে পারছিলেন না টমাস। তবে ধীরে ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন বিজনেস ম্যাগনেট। ১৮৯৬ সালের ২৩ এপ্রিল নিউইয়র্ক শহরের ‘কোস্টার অ্যান্ড বিয়াল’স মিউজিক হল’-এ, ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে এডিসন চলচ্চিত্র প্রদর্শন করেছিলেন। গত শতকের শুরুর দিকে যখন মোটরগাড়ির ব্যবহার শুরু হচ্ছিল, এডিসন ইলেকট্রিক কার নিয়ে গবেষণা শুরু করলেন। তিনি এমন একটি ব্যাটারি বানাতে চাইছিলেন যা একটি গাড়িকে যথেষ্ট সময় চালানোর মতো এনার্জি ধরে রাখতে পারে। কিন্তু তখন ইলেকট্রিক গাড়ির প্রচলন ঘটেনি। কারণ ছিল তেলের সহজলভ্যতা। টমাস আলভা এডিসনের সাহায্যেই ফোর্ড মোটরসের প্রতিষ্ঠাতা হেনরি ফোর্ডের জন্য গাড়ির যন্ত্রাংশ বানিয়ে দিয়েছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে আমেরিকান সরকার তাকে ‘ন্যাভাল কনসালটিং বোর্ড’-এর প্রধান হতে অনুরোধ করে। এ বোর্ডটি সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর অস্ত্র পরীক্ষা ও তার উন্নয়ন করত। দেশপ্রেমের জায়গা থেকে তিনি কাজটি করতে রাজি হয়েছিলেন কিন্তু নীতিগত দিক থেকে তিনি ছিলেন সচেতন, তাই কখনো কোনো অস্ত্র বানানোর প্রজেক্টে তিনি কাজ করেননি।

 

পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন রয়েছে হাজারখানেক পেটেন্ট

টমাস এডিসনের নানা উদ্ভাবন বিংশ শতাব্দীর জীবনযাত্রায় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল এবং এখনো সারা পৃথিবীতে প্রতিদিন লাখো কোটিবার তার আবিষ্কৃত জিনিস ব্যবহার করা হয়। এডিসন ইতিহাসের অতিপ্রাজ্ঞ বিজ্ঞানীদের অন্যতম একজন বলে বিবেচিত হন। তার নিজের নামে ১ হাজার ৯৩টি মার্কিন পেটেন্টসহ যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানির পেটেন্ট রয়েছে। টেলিযোগাযোগ খাতসহ বহু উদ্ভাবনের মাধ্যমে তার অবদানের জন্য তিনি সর্বস্বীকৃত। তার আবিষ্কারগুলোর মধ্যে রয়েছে স্টক টিকার, ভোট ধারণকারী যন্ত্র, বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি, বৈদ্যুতিক শক্তি, ধারণযোগ্য সংগীত এবং ছবি। সে সময় নতুন আবিষ্কার হওয়া টেলিগ্রাফ যন্ত্রের একটা ত্রুটি ছিল। বহু দূরের দুই টেলিগ্রাফ কেন্দ্রের মাঝখানে যে কেন্দ্রগুলো ছিল সেগুলো অন্য দিক থেকে পাঠানো খবর গ্রহণ করতে ও তাতে পরিবর্তন করতে পারত। ফলে গোপনীয়তা বলতে কিছু থাকত না। এডিসন এ ত্রুটি ঠিক করে দিয়েছিলেন। সেকালে টেলিগ্রাফ যন্ত্রের একটি তার দিয়ে একটি খবরই পাঠানো যেত। এডিসন একসঙ্গে অনেকগুলো খবর বিকৃতি ছাড়া পাঠানোর পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন। একবার স্থির করলেন ইলেকট্রিক কারেন্টকে কাজে লাগিয়ে আলো জ্বালাবেন। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর তৈরি করলেন কার্বন ফিলামেন্ট। তিনি শুধু বাল্বের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিলেন। এরপর সমগ্র বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি সাধনে তৎপর হলেন। তিনি তৈরি করলেন নতুন এক ধরনের ডাইনামো, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার জেনারেটর থেকে শুরু করে ল্যাম্প তৈরি করা প্রভৃতি। কিশোর বয়সেই এক অসাধ্য সাধন করেছিলেন টমাস এডিসন। বাবা-মায়ের কাছে অনুমতি চাইলেন বাড়ির কাছে গ্র্যান্ড ট্র্যাঙ্ক রেইল রোড লাইনে পত্রিকার হকার হিসেবে কাজ করার। হকার হিসেবে কিছুদিন কাজ করার পর এক সময় এডিসন জানতে পেলেন একটি ছোট ছাপাখানা যন্ত্র কম দামে বিক্রি হবে। তিনি জমানো অর্থ দিয়ে ছাপাখানার যন্ত্রপাতি কিনে ফেললেন। এরপর নিজেই ‘গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক হেরাল্ড’ নামের ছোট একটি পত্রিকা বের করা শুরু করেন। সংবাদ সংগ্রহ করা, সম্পাদনা করা, ছাপানো, বিক্রি করাসহ সব কাজ একাই করতেন টমাস আলভা এডিসন।

 

সর্বশেষ খবর