শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ক্রিকেটে লজ্জার যত রেকর্ড

ক্রিকেটে লজ্জার যত রেকর্ড

শুক্রবার ইডেন গার্ডেনে ঐতিহাসিক টেস্ট খেলতে নেমেছে ভারত-বাংলাদেশ। নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দিবারাত্রির টেস্টে মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১০৬ রানে অলআউট হয়ে গেছে বাংলাদেশ। যেটি টেস্টে বাংলাদেশের ত্রয়োদশ সর্বনিম্ন স্কোর। দুর্দান্ত বৈচিত্র্যের খেলায় রেকর্ডের কোনো কমতি নেই। কিন্তু সব রেকর্ড গৌরবের হয় না। কিছু কিছু রেকর্ড লজ্জার ও গ্লানির। এই রেকর্ডগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভুলে যেতে চাইবেন সংশ্লিষ্ট দল ও খেলোয়াড়রা। কিন্তু ইতিহাস সব কিছু মনে রাখে। ক্রিকেট ইতিহাসের এমন কিছু রেকর্ড পাঠকের জন্য তুলে এনেছেন-  রণক ইকরাম ও জামশেদ আলম রনি

 

ওডিআইতে ৩৮ রানে অলআউট জিম্বাবুয়ে, স্বল্পস্থায়ী ইনিংসও তাদের

ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ দিনটি মুছে দিতে পারলে তা-ই করত জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট। আফগানিস্তানের কাছে সিরিজ হারের লজ্জা এড়াতে নয়, এ দিন যে লজ্জার একটি রেকর্ড সঙ্গী হয়েছে তাদের। আফগানিস্তানের কাছে মাত্র ৮৩ বলে অলআউট হয়েছে জিম্বাবুয়ে। এর আগে ওয়ানডেতে এত কম বলে অলআউট হয়নি আর কোনো দল। ২০০১ সালে কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৯৪ বলে মাত্র ৩৮ রানে অলআউট হয়েছিল জিম্বাবুয়ে। সবচেয়ে কম বল আর কম রানের দুটি রেকর্ডই সে সময় নিজেদের করে নেয় তারা। ২০০৩ সালে জিম্বাবুয়েকে সবচেয়ে কম বলে অলআউট হওয়ার লজ্জা থেকে মুক্তি দিয়েছিল নামিবিয়া। ২০০৩ বিশ্বকাপে পোচেফস্ট্রমে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৮৪ বলে অলআউট হয়েছিল তারা। সেই বিশ্বকাপেই ওয়ানডেতে সবচেয়ে কম রানে অলআউট হওয়ার রেকর্ডটি হয়ে যায় কানাডার। পার্লে শ্রীলঙ্কার কাছে ৩৬ রানে অলআউট হয়েছিল তারা। কানাডার কাছ থেকে সর্বনিম্ন রানের রেকর্ডটা আবারও জিম্বাবুয়ের কাছে চলে আসে ২০০৪ সালে। সেবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৫ রানে অলআউট হয়েছিল জিম্বাবুয়ে। যেটি ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বনিম্ন রানের  স্কোর।

 

দুর্ভাগা শচিন

তাকে বলা হয় ক্রিকেট ঈশ্বর। কারণ ক্রিকেট ব্যাটিংয়ের অধিকাংশ রেকর্ডই শচিন টেন্ডুলকারের দখলে। আবার অভাগা রেকর্ডের তালিকায়ও রয়েছে শচিনের নাম।   টেন্ডুলকার! ৪৬৩ ম্যাচের ক্যারিয়ারে ‘মাত্র’ ১৮ বার নব্বইয়ের ঘরে আটকে গেছেন তিনি। এর মধ্যে একবার ৯৬ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। তিনবার আউট হয়েছেন ৯৯ রানে। আর বাকিগুলো সবই নার্ভাস নাইনটিজের শিকার।

 

টেস্টে সর্বনিম্ন দলীয় রান

টেস্টে সর্বনিম্ন স্কোরের কথা এলে বাংলাদেশের মতো র‌্যাংকিংয়ের তলানিতে থাকা দলগুলোর কথাই মাথায় আসে। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বনিম্ন ২৬ রানে অলআউটের লজ্জার রেকর্ডটি এ রকম কারও নয়। রেকর্ডটি নিউজিল্যান্ডের। এটি ঘটেছিল তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে। ২৭ ওভারে ২৬ রান করে অলআউট হয়ে যায় দলটি। যেখানে সর্বোচ্চ রান ছিল ১১। বাকিরা এক অঙ্কের রানের ঘর পেরোতে পারেনি।

 

টানা শূন্য!

ক্রিকেটের অনাকাক্সিক্ষত রেকর্ডগুলোর ‘সেরা’ এটি! ওয়ানডে ম্যাচে সবচেয়ে বেশি টানা ৪ বার শূন্য রানের রেকর্ড ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার অগাস্টিন ল্যুরেন্সলজির। অগাস্টিন সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেন ১৯৯৩ সালে। তিনি পাকিস্তানের বিপক্ষে পরপর চার ইনিংসে শূন্য রানে আউট হন। অগাস্টিনের সঙ্গে এই রেকর্ডে ভাগ আছে আরও চারজনের! তারা হলেন লঙ্কান ক্রিকেটার প্রমদ্ম বিক্রমসিংহে ও লাসিথ মালিঙ্গা, জিম্বাবুয়ান হেনরি ওলোঙ্গা এবং ইংলিশ ক্রিকেটার ক্রেইগ হোয়াইট। তবে সবার আগে ‘কৃতিত্ব’ গড়েন অগাস্টিনই।

 

এত এক্সট্রা!

এক্সট্রা রান ক্রিকেটের বহুল আলোচিত একটি বিষয়। কিছু এক্সট্রা রানের কারণেই ম্যাচ হেরে যাওয়া-জিতে যাওয়ার ঘটনা অহরহ ঘটে। ইনিংসে সবচেয়ে বেশি এক্সট্রা রান দেওয়ার রেকর্ড ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ১৯৮৯ সালের ৭ জানুয়ারি পাকিস্তানের সঙ্গে এক ওয়ানডে ম্যাচে ৫৯ রান এক্সট্রা দেয় তারা। এই এক্সট্রা রান সেদিন পাকিস্তানের ইনিংসে ছিল তৃতীয় সর্বোচ্চ রান। প্রথম সর্বোচ্চ ৭৫ রান ছিল আমের মালিকের। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৭ রান ছিল ইমরান খানের। ম্যাচটিতে ৫৫ রানে হেরে যায় ক্যারিবিয়ানরা।

 

এক্সট্রাই সর্বোচ্চ!

এই রেকর্ডের সঙ্গেও জড়িয়ে আছে মি. এক্সট্রা। দুই যুগেরও বেশি সময় আগের ঘটনা। ইতিহাসের মাত্র ১৮০ নম্বর ওয়ানডে ম্যাচ সেটি। প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে অস্ট্রেলিয়া ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে রান করে ১৯১। ইনিংসে সর্বোচ্চ ৩৫ রান আসে মি. এক্সট্রার ‘ব্যাট’ থেকে! এরপরও অনেকবার এক্সট্রা রানই ইনিংসের সর্বোচ্চ হয়েছে। তবে এটিই প্রথম।

 

ওডিআইতে সবচেয়ে খরুচে বোলার মিক লুইস

ক্রিকেটের বনেদি তালিকায় অস্ট্রেলিয়ানদের নাম সবার ওপরেই থাকবে। কিন্তু মিক লুইসের এই রেকর্ডটা একদমই ভুলে যেতে চাইবেন অস্ট্রেলিয়ানরা। কারণ ওয়ানডে ক্রিকেটের সবচেয়ে খরুচে বোলারটি যে তিনিই! ১০ ওভার বল করে ১১৩ রান দেওয়ার রেকর্ড গড়েন অস্ট্রেলিয়ার মিক লুইস। যার ইকোনমি ১১.৩ রান। ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৩৮ রান তাড়া করে।

 

বিশ্বকাপের সবচেয়ে খরুচে বোলার

টি-টোয়েন্টির সবচেয়ে সেরা বোলার রশিদ খান। গত বিশ্বকাপে ইংলিশদের বিপক্ষে তো রীতিমতো খাবি খেলেন। গড়লেন এক ‘লজ্জার রেকর্ড’। বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে খরুচে বোলার এখন তিনিই। ওল্ড ট্রাফোর্ডে বল হাতে ৯ ওভারে মোট ১১০ রান খরচ করেছেন রশিদ, যা বিশ্বকাপের সবচেয়ে খরুচে বোলিং। এর আগে তার সর্বোচ্চ রান খরচ হয়েছিল ৬৮ রান।

এর আগে এই রেকর্ডের মালিক ছিলেন নিউজিল্যান্ডের মার্টিন স্নেডার। ১৯৮৩ বিশ্বকাপে ১২ ওভারে ১০৫ রান দিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের এই বোলার। ২০১৫ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১০ ওভারে মোট ১০৪ রান খরচ করেছিলেন উইন্ডিজ পেসার জেসন হোল্ডার।

সামির লজ্জার রেকর্ড

ক্রিকেট মানেই রেকর্ড ভাঙা-গড়া। কখনো সেই রেকর্ড হয় গর্বের। আবার কখনো এমন কিছু রেকর্ড তৈরি হয়, যেটা কখনই কাক্সিক্ষত নয়। তেমনি এক রেকর্ডের মালিক পাকিস্তানের পেসার মোহাম্মদ সামি। মাত্র ৬ বলে এক ওভার। কিন্তু কাউকে দেখেছেন ১৭ বলে ওভার সম্পূর্ণ করতে? শুনতে অবাক লাগলেও এমনটাই হয়েছিল ২০০৪ এশিয়া কাপের ম্যাচে। ওডিআই ক্রিকেটে দীর্ঘতম এই ওভারের রেকর্ড আছে মোহাম্মদ সামির দখলে। এশিয়া কাপের ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৭ বলে একটি ওভার শেষ করেছিলেন সামি। তার ওভারে ছিল ৭টি ওয়াইড এবং ৪টি নো বল। নিজের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অনেক সাফল্য আছে মোহাম্মদ সামির। কিন্তু নিশ্চিত করেই এই রেকর্ডটাকে ভুলে যেতে চাইবেন সামি।

 

তারকা ব্যাটসম্যানদের লজ্জা

বিশ্বের এমন অনেক ব্যাটসম্যান আছে যারা বাঘা বাঘা বোলারদের রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছেন। এসব ব্যাটসম্যানরা নিজের সময়ে অনেক রেকর্ড গড়েছেন আবার অনেক রেকর্ড ভেঙেছেনও। কিন্তু সেসব ব্যাটসম্যানরাই আবার আছেন লজ্জার রেকর্ডের অংশীদারও। একদিকে যেমন রান করে চমকে দিয়েছেন অপরদিকে তেমনি শূন্য রানে আউট হওয়ার নজিরও গড়েছেন। ক্রিকেটে ব্যাটিং গ্রেটদের অনেকেই জায়গা করে নিয়েছেন শূন্য রানে আউট হওয়ার লজ্জার রেকর্ডে।

 

সনাথ জয়সুরিয়া

১৯৮৯ সালে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন শ্রীলঙ্কার এই ব্যাটিং কিংবদন্তি। ১৯৯৬ সালে শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপ জয়ে তার অবদানের কথা শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট অনেক দিন মনে রাখবে। কিন্তু ওয়ানডেতে ৪৪৫টি ম্যাচ খেলা এই বাঁহাতি ব্যাটিং অলরাউন্ডার তার অসাধারণ ব্যাটিং প্রদর্শনের পাশাপাশি আছেন একটি লজ্জার রেকর্ডের শীর্ষে। ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশিবার শূন্য রানে আউট হওয়া ক্রিকেটারদের সবার ওপরে আছেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ওয়ানডেতে ৩৪ বার শূন্য রানে আউট হয়েছেন ২৮টি সেঞ্চুরি ও ৬৮টি হাফ সেঞ্চুরি করা এই ক্রিকেটার।

 

শহীদ আফ্রিদি

সর্বমোট ৩০ বার শূন্য রানে আউট হয়েছেন এই স্পিনিং অলরাউন্ডার। ১৯৯৬ সালে ওয়ানডে দিয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসেন শহীদ আফ্রিদি। এরপর তার ধুন্ধুমার ব্যাটিং ও বোলিং দিয়ে তারকা অলরাউন্ডারদের তালিকায় উঠে আসা। ৩৯৮টি ওয়ানডে খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়েছেন কিছুদিন আগে। ৮ হাজার ৬৪ রান করা এই পাকিস্তানি ক্রিকেটার আছেন ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশিবার শূন্য রানে আউট হওয়াদের তালিকার দ্বিতীয় নম্বরে। সর্বমোট ৩০ বার শূন্য রানে আউট হয়েছেন এই স্পিনিং অলরাউন্ডার। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৬টি সেঞ্চুরি ও ৩৯টি হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে তার দখলে।

 

মাহেলা জয়াবর্ধনে

শ্রীলঙ্কার যে কজন ক্রিকেটারের নাম মানুষের মুখে মুখে ঘুরে ফিরে তাদের মধ্যে মাহেলা জয়াবর্ধনে অন্যতম। ১৯৯৮ সালে ওয়ানডেতে অভিষেক হওয়া এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান ৪৪৮টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ১৯টি সেঞ্চুরি এবং ৭৭টি হাফ সেঞ্চুরি  করে ২০১৫ সালে অবসর নেন। শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তিদের তালিকায় যেমন তার নাম আছে তেমনি আছে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশিবার শূন্য রানে আউট হওয়া ক্রিকেটারদের তালিকায়ও। ওয়ানডেতে মোট ২৮ বার তিনি শূন্য রানে আউট হয়েছেন।

 

ক্রিস গেইল

বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সবচেয়ে মারকুটে ব্যাটসম্যান বলা হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইলকে। টি-টোয়েন্টিতে ধারালো গেইল ১৯৯৯ সালে ওয়ানডে দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষিক্ত হয়েছিলেন। এরপর একে একে করেন ২৫টি সেঞ্চুরি ও ৫৪ হাফ সেঞ্চুরি। কিন্তু দারুণ এই মারকুটে ব্যাটসম্যানের লজ্জার এক রেকর্ড আছে। ৩০১ ওডিআই খেলা এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান সর্বমোট ২৫ বার শূন্য রানে আউট হয়েছেন।

 

রিকি পন্টিং

অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ক্রিকেটার সাবেক অধিনায়ক রিকি পন্টিং। একমাত্র অধিনায়ক হিসেবে তার হাতেই তিনবার বিশ্বকাপের শিরোপা উঠেছে। ১৯৯৫ সালে ওয়ানডেতে অভিষেক হওয়া এই ডানহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান ওয়ানডেতে ৩০টি সেঞ্চুরি ও ৮২টি হাফ সেঞ্চুরির মালিক। তার সর্বমোট রান ১৭ হাজার ৪৬। ৩৭৫টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলা এই ক্রিকেটার তার ক্যারিয়ারে মোট ২০ বার শূন্য রানে আউট হয়েছেন।

 

 

সর্বশেষ খবর