বুধবার, ১ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনাভাইরাস নিয়ে যত গবেষণা

তানভীর আহমেদ

করোনাভাইরাস নিয়ে যত গবেষণা

করোনাভাইরাসের তান্ডবে পুরো বিশ্ব এলোমেলো। দেশে দেশে চলছে কঠোর লকডাউন। ঘরবন্দী জীবন কাটছে সবার। করোনাভাইরাসকে ঠেকাতে বিশ্বজুড়ে চলছে ওষুধের খোঁজ। ভ্যাকসিন তৈরিতে শীর্ষ গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে এসেছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন তৈরি সম্ভব হয়েছে। এরই মধ্যে কমপক্ষে ২০টি ভ্যাকসিন পরীক্ষার নানা পর্যায়ে রয়েছে। কয়েকটি ভ্যাকসিন থেকে আশাজাগানিয়া ফলাফল পাওয়া গেছে। তবে মানুষের দেহে উপযোগী ভ্যাকসিন তৈরিতে আরও সময়ের প্রয়োজন।

 

বিশ্বজুড়ে গবেষণার জোয়ার

নতুন করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরিতে বিভিন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন পথে এগোচ্ছে। প্রায় ২০টি প্রতিষ্ঠান ও গবেষণা সংস্থা করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরিতে কাজ করছে।

 

ক্লোভার বায়োফার্মাসিউটিক্যালস : চীনের ক্লোভার বায়োফার্মাসিউটিক্যালস একটি ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু করতে যাচ্ছে।

 

গিলিয়াড : চীনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ শুরু করা গিলিয়াড নামের একটি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, ইবোলা ঠেকাতে তৈরি করা তাদের একটি ওষুধ নতুন করোনাভাইরাস ঠেকাতে কার্যকর হতে পারে বলে প্রমাণ মিলেছে। এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী গিলিয়াড।

 

মডার্না : যুক্তরাষ্ট্রের জৈবপ্রযুক্তি কোম্পানি মডার্নার সংক্রামক রোগ সম্পর্কিত একদল গবেষক ও মার্কিন জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের (এনআইএইচ) তৈরি করা এমআরএনএ-১২৭৩ নামের করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনটির প্রথম ডোজ গত ১৬ মার্চ এক স্বেচ্ছাসেবীর শরীরে প্রবেশ করানো হয়েছে।

 

ইনোভিও ফার্মাসিউটিক্যালস : যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান ইনোভিওর তৈরি ভ্যাকসিনটির নাম আইএনও-৪৮০০। গবেষণাটি বর্তমানে প্রি-ক্লিনিক্যাল পর্যায়ে রয়েছে। এ মাসেই এই ভ্যাকসিনের ইউএস ফেজ ওয়ান ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল দিতে পারবে বলে আশা করছে প্রতিষ্ঠানটি।

 

কিউরভ্যাক : জার্মান বায়োফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি কিউরভ্যাক আগামী জুনে তাদের তৈরি ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানোর বিষয়ে আশাবাদী।

 

ক্যানসিনো বায়োলজিকস : চীনের প্রতিষ্ঠান ক্যানসিনো বায়োলজিকস ও দেশটির একাডেমি অব মিলিটারি মেডিকেল সায়েন্সেসের গবেষকদের তৈরি একটি ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন পেয়েছে।

 

মিগাল : মিগাল গ্যালিলি রিসার্চ ইনস্টিটিউট ইসরায়েলভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান। আগামী আট থেকে দশ সপ্তাহের মধ্যে মুখে খাওয়ার উপযোগী ভ্যাকসিন মানুষের শরীরে পরীক্ষা করতে পারবে বলে তারা আশাবাদী।

 

বায়োএনটেক : জার্মান ইমিউনোথেরাপি কোম্পানি বায়োএনটেক ও আমেরিকান বড় ওষুধ কোম্পানি পিফিজার যৌথভাবে কাজ করার বিষয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এ মাসের শেষ দিকে তাদের তৈরি ভ্যাকসিন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর্যায়ে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

সেপ্টেম্বরে মানবদেহে ভ্যাকসিন পরীক্ষা

যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক কোম্পানি জনসন অ্যান্ড জনসন আগামী বছরেই বাজারে আনছে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন। এ ছাড়া এ বছরের সেপ্টেম্বরে তারা মানুষের শরীরে একটি ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালানোর ঘোষণা দিয়েছে। জানুয়ারি মাস থেকেই ভ্যাকসিন তৈরিতে কাজ শুরু করে তারা। এজন্য তারা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগের বায়োমেডিকেল অ্যাডভান্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে। এক্ষেত্রে গবেষণা ও পরীক্ষার জন্য তহবিল জোগাতে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার সরবরাহ করা হচ্ছে।

জনসন অ্যান্ড জনসন ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের বায়োটেক প্রতিষ্ঠান মডার্না গত ফেব্রুয়ারি মাসে ভ্যাকসিন পরীক্ষার জন্য সরকারি গবেষকদের কাছে পাঠিয়েছিল। মার্চের শুরুর দিকে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম ডোজ স্বেচ্ছাসেবকদের দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের জেনিফার হলারের ওপর করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে।

অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন পরীক্ষা প্রস্তুতি

গত বছরের শেষ দিনটিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কথা জানায় চীন। অক্সফোর্ড বিশ^বিদ্যালয়ের একদল গবেষক আঁচ করতে পেরেছিলেন এটি বৈশি^ক মহামারী হিসেবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তখন থেকেই এর ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন তারা। জেন্নার ইনস্টিটিউট ভাইরোলজি বিভাগের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করেন অধ্যাপক বিজ্ঞানী সারা গিলবার্ট, অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পোলার্ড, টেরেসা লাম্বে, ডক্টর স্যান্ডি ডগলাস ও অধ্যাপক অ্যাড্রিয়ান হিল। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী, গবেষকদের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় অবশেষে ভেক্টর ভ্যাকসিনটির ডিজাইন করা হয়েছে।

ভ্যাকসিনটি পরীক্ষার পর ফলাফল ইতিবাচক হলেই দ্রুত বাজারে আনার প্রস্তুতি রয়েছে। অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানী, গবেষকরা দাবি করছেন, তাদের ভেক্টর ভ্যাকসিন ইবোলার মতোই ধ্বংস করবে সার্স-কভিড-২-কে। দেহকোষের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে এই ভ্যাকসিন। ভেক্টর ভ্যাকসিন সাধারণত তৈরি করা হয় কোনো ভাইরাস দিয়ে, যার সারফেস প্রোটিনগুলোকে দেহকোষের মধ্যে ঢুকিয়ে কোষকে জাগিয়ে তোলার প্রক্রিয়া চলে। এই ভাইরাল প্রোটিনগুলো অ্যান্টিজেন কোডিং প্রোটিন হয়, এরা মানুষের শরীরে ঢুকে কোষকে তার স্বাভাবিক অ্যান্টিবডি তৈরির জন্য উদ্দীপিত করে। মানুষের ওপর এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্যও তৈরি অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা। কভিড-১৯ প্রতিরোধী এই ভ্যাকসিনের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল প্রায় শেষ। এখন চূড়ান্ত ট্রায়ালের জন্য সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ- মহিলার ওপরে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। এজন্য নাম নিবন্ধনের প্রক্রিয়া চলছে। ট্রায়ালে অন্তত ৫০০ জনের ওপরে প্রয়োগ করা হবে এই ভ্যাকসিন। ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সী এমন ৫১০ জনের স্ক্রিনিং চলছে। ইংল্যান্ডের থেমস ভ্যালিতে কয়েকদিনের মধ্যেই মানুষের ওপর ট্রায়াল চলবে এই ভ্যাকসিনের।

এই গবেষণার অন্যতম মুখ্য গবেষক অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পোলার্ড বলেছেন, ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়ে গেছে। সফল হলে এই ভ্যাকসিনের ডোজের মাত্রা ঠিক করা হবে। এই ভ্যাকসিন অনেক সুরক্ষিত ও নিরাপদ। মহামারী ঠেকাতে সার্বিকভাবে কাজে আসবে।

লড়বে জাপানের অ্যাভিগ্যান

করোনা চিকিৎসায় জাপানের তৈরি অ্যাভিগ্যান ওষুধটি চীনে ম্যাজিকের মতো কাজ করেছিল। সাধারণত ঠান্ডা-সর্দির চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যাভিগ্যান ওষুধকে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় ব্যবহারের দ্রুত অনুমতি দেওয়ার চেষ্টা করছে জাপান। বেশ কিছু করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় এই ওষুধের কার্যকারিতার লক্ষণ পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে অনেক দেশ এই ওষুধ নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এবার জাপানও ওষুধটির পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু করবে। জাপানি প্রতিষ্ঠান ফুজিফিল্ম হোল্ডিংস এই ওষুধ প্রস্তুুত করে থাকে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বলেছেন, ‘ফ্লুর বিরুদ্ধে ব্যবহৃত ওষুধ অ্যাভিগ্যান যেন করোনার চিকিৎসায় ব্যবহার করা যায়, সেজন্য সরকার এর পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু করবে। জাপান শিগগিরই অন্যান্য দেশের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে ক্লিনিক্যাল গবেষণা অব্যাহত রাখবে। শিগগিরই বড় আকারে এই ওষুধ উৎপাদন শুরু হবে।’ ফুজিফিল্ম তোয়ামা ২০১৪ সালে ওষুধটি তৈরি করেছিল। জাপানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হওয়ার পর গত ফেব্রুয়ারি থেকে এটি সেখানকার রোগীদের দেওয়া হচ্ছে। ওষুধটির সফলতার প্রমাণ পাওয়া যায় চীনের উহান এবং শেনজেনে। এই দুই শহরের হাসপাতালে ২০০ রোগীর ওপর এই ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করা হয়েছিল। ফলাফলে দেখা যায়, যাদের ওই ওষুধ দেওয়া হয়েছিল তারা অন্যদের তুলনায় দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন। ওষুধ নেওয়া রোগীরা চার দিনে ভাইরাসমুক্ত হয়েছেন যেখানে কন্ট্রোল গ্রুপের রোগী ভাইরাসমুক্ত হন ১১ দিনে।

ন্যানোম্যাটারিয়ালে চীনের সাফল্য

ভ্যাকসিন বা ওষুধ নয়, চীনের তৈরি একটি বিশেষ ন্যানোম্যাটারিয়াল করোনাভাইরাসকে আটকে দিতে সক্ষম। চীনের সংবাদ মাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের একটি রিপোর্টে এই চমকপ্রদ খবরটি বিশ্বব্যাপী আলোচিত। বলা হচ্ছে, ন্যানোম্যাটারিয়ালটি করোনার বিরুদ্ধে ৯৯.৯ ভাগ কার্যকর।

এটি করোনার জীবাণু শুষে ফেলতে পারে বা এর কার্যক্ষমতা ৯৬.৫-৯৯.৯% পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে। এটি দিয়ে প্যান্ট, ফিল্টার, ইনসুলেশনের মতো জিনিস তৈরি হতে পারে।

চীনের গবেষক দল বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কথা বলছে এ ন্যানোম্যাটারিয়াল দিয়ে মাস্ক ও চিকিৎসকদের জন্য পিপিই বানানোর জন্য।

 

যক্ষ্মার প্রতিষেধক নিয়ে আশার আলো

যক্ষ্মার প্রতিষেধক দিয়ে করোনা প্রতিরোধে আশার আলো পেয়েছেন গবেষকরা। বিভিন্ন দেশে করোনা যেভাবে প্রভাব ফেলেছে তা পরীক্ষা করে গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন ব্যাকিলাস ক্যালমেট-গেরিন (বিসিজি) যা যক্ষ্মা রোগের ভ্যাকসিন হিসেবে মূলত ব্যবহৃত, সেটি করোনার বিরুদ্ধে ভালো কাজ করতে পারে। প্রি-প্রিন্ট রিপোজিটরি মেডআরসিভে প্রকাশিত এই গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, এই বিসিজি টিকা করোনা মোকাবিলায় যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা নিতে সক্ষম। এই ভ্যাকসিন করোনায় শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে এ গবেষণায় দাবি করা হয়েছে।

আলোচনায় এক ভারতীয় গবেষক

কভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টায় আলোচনায় এসেছেন এক ভারতীয় গবেষক। হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রির অধ্যাপক ডা. সীমা মিশ্র এমন ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করছেন, যা করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে পারে।

তার তৈরি ‘ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট’ ভাইরাসের কোন কোন প্রোটিনগুলো বাহক  কোষকে উদ্দীপিত করতে পারে তা দেখায়। সেসব প্রোটিন যদি বিশেষ বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে মানুষের শরীরে ইনজেক্ট করা যায়, তাহলে কোষ তার বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করা শিখে যাবে। ফলে কোষের সহজাত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। তবে গবেষণা প্রাথমিক পর্যায়ে শুরু হয়েছে। ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট বানানোর প্রক্রিয়া শেষ। এবার পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করার পদ্ধতি বাকি।

 

সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তির অ্যান্টিবডিতে মহৌষধ

রোগীর প্লাজমা থেরাপির সাহায্যে চিকিৎসা করিয়ে দারুণ সফলতা পেয়েছেন গবেষকরা। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ইয়ান লিপকিনের দাবি, করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় ব্লাড প্লাজমা থেরাপি দারুণ সফল। কিছু ক্ষেত্রে এ রোগকে চিরতরে নির্মূল করতে পারে এই চিকিৎসা পদ্ধতি। করোনায় আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি সুস্থ হয়ে ওঠার পর তার শরীর থেকে অ্যান্টিবডি নিয়ে ১০ জন করোনা আক্রান্তের দেহে প্লাজমা থেরাপির মাধ্যমে তা প্রয়োগ করা হয়। দেখা যায়, ওই ১০ জনের প্রত্যেকেই সুস্থ হয়ে  গেছেন। কোনো এক ব্যক্তির কাছ থেকে সংগৃহীত প্লাজমা দিয়ে মোট তিনজন রোগীর চিকিৎসা সম্ভব। এই পদ্ধতি বেশ সহজ এবং ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত করোনা মোকাবিলায় একটি কার্যকর সমাধান এই থেরাপি। আমেরিকার বাল্টিমোরে জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিন, নিউইয়র্কের আলবার্ট আইনস্টাইন কলেজ অব মেডিসিন এ ব্যাপারে দুরন্ত গতিতে কাজ করছে। জাপানের এক নামি ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা এই থেরাপি বিশ্বময় ছড়িয়ে দেওয়ার পেটেন্টের জন্য আবেদন করেছে।

 

রেমডেসিভির প্রয়োগ করবে মালয়েশিয়া

করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় রেমডেসিভির প্রয়োগ করবে মালয়েশিয়া।  দেশটির জাতীয় সুরক্ষা কাউন্সিল (এনএসসি) জানিয়েছে, কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য রেমডেসিভির নামে একটি ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে পরীক্ষা চালানোর জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মালয়েশিয়াকে অন্যতম দেশ হিসেবে বেছে নিয়েছে। গত ২৯ মার্চ মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম এ তথ্য প্রকাশ করে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের নতুন ওষুধ রেমডেসিভির দিয়ে চিকিৎসা করবে মন্ত্রণালয় এবং সমস্ত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও এর কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করবে। এই গবেষণাটিতে দেশের হাজার হাজার রোগী অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। মালয়েশিয়ায় এটি যথাসম্ভব সহজ করে এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যাতে হাসপাতালে আসা কভিড-১৯ রোগীরা এতে অংশ নিতে পারে। মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্য মহাপরিচালক ডা. নূর হিশাম আবদুল্লাহ বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশেষ কিছু ওষুধের বিষয়ে চিকিৎসা ও পরীক্ষায় মনোযোগ দিতে বলেছে। রেমডেসিভির নামে একটি পরীক্ষামূলক অ্যান্টিভাইরাল যৌগ, ম্যালেরিয়ার ওষুধ ক্লোরোকুইন, হাইড্রোক্সাইক্লোরোকুইন, এইচআইভির দুটি ওষুধ লোপিনাভির, রিটোনাভির সংমিশ্রণ এবং একই সংমিশ্রণ ইন্টারফেরন-বিটা, যা এসবের প্রয়োগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে; এগুলো ভাইরাসকে পঙ্গু করতে সহায়তা করতে পারে।’

ভাইরোলজিস্ট মিনালের টেস্ট কিট

ভারতেই সস্তায় টেস্ট কিট আবিষ্কার করেন এক অন্তঃসত্ত্বা নারী। তিনি ভাইরোলজিস্ট মিনাল দখাবে ভোঁসলে। গত বৃহস্পতিবার প্রথম বাজারে আনা হয় ওই কিট। পুনে, মুম্বাই, দিল্লি, গোয়া ও বেঙ্গালুরুর ১৫০টি ল্যাবে ইতিমধ্যে এই কিট সরবরাহ করা হয়েছে। ভারতে করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর মাত্র ৬ সপ্তাহের মধ্যে এই আবিষ্কার করেছেন পুনের ভাইরোলজিস্ট মিনাল দখাবে ভোঁসলে। সম্প্রতি মা হয়েছেন তিনি। মা হওয়ার পর মিনাল জানান, ‘আমার এখন মনে হচ্ছে ২টি সন্তানের জন্ম দিয়েছি।’ গর্ভাবস্থায় এই কিট তৈরি করেছেন তিনি। পুনের মাইল্যাব ডিসকভারিতেই করোনা পরীক্ষার কিট তৈরি হয়েছে। এই আবিষ্কারে তাকে সাহায্য করেছেন আরও ১০ জন।

ভ্যাকসিন তৈরিতে লাগে দীর্ঘ সময়

করোনাভাইরাসকে ঠেকাতে প্রয়োজন ভ্যাকসিন ও ওষুধ। ওষুধ দিয়ে আক্রান্তকে সুস্থ করা হয় আর ভ্যাকসিন প্রয়োজন যেন রোগটি নতুন করে কাউকে আক্রান্ত করতে না পারে। ভ্যাকসিন বা টিকা তৈরির ক্ষেত্রে পুরো বিশ্ব একযোগে কাজ করছে। এমন দৃশ্য পৃথিবীতে বিরল। এ ছাড়া এবারই খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে একাধিক ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার শুরু হয়েছে। এর পেছনে দুটি অভিজ্ঞতা সাহায্য করেছে বিজ্ঞানীদের। প্রথমটি, পৃথিবী ঘুরে যাওয়া মহামারী হলো সার্স ও মার্স। করোনাভাইরাসের সঙ্গে মিল থাকায় সার্স ও মার্স মহামারীর সময় থেকে চলা একাধিক ভ্যাকসিন তৈরির গবেষণা বিজ্ঞানীদের সহায়তা করেছে। দ্বিতীয়টি হলো করোনার জিন বিশ্লেষণ করে চীন তা পুরো বিশে^র সামনে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। ভ্যাকসিন তৈরির প্রক্রিয়া বেশ সময়সাপেক্ষ। বিশ্লেষকরা বলছেন, যখন ল্যাবরেটরিতে একটি ভ্যাকসিন প্রাথমিকভাবে তৈরি করা হয়, তখন তা ওষুধের কারখানায় পাঠানো হয়। সেখানে আরেক ধাপে পরীক্ষা করে দেখা হয়, ওই ভ্যাকসিন দূষণমুক্ত ও প্রাণীদেহে প্রয়োগের উপযোগী কিনা। এজন্য কয়েক মাস সময় লেগে যেতে পারে। এরপর প্রয়োজনীয় অনুমোদন পেলে ওই উপযুক্ত ভ্যাকসিন প্রাণীদেহে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়। সাধারণত এক্ষেত্রে তিন মাসের মতো সময় প্রয়োজন হয়। পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পর আসে ফলাফল। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আশাব্যঞ্জক ফলাফল পাওয়া যায় না। কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োগের পর পাশর্^প্রতিক্রিয়া কমাতে আবার গোড়া থেকে কাজ শুরু করতে হয়। এসব বিবেচনায় মানুষের দেহে উপযোগী একটি ভ্যাকসিন আনতে ১৮ মাসের মতো সময় লাগতে পারে।

সর্বশেষ খবর