রবিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে বন্ধ নয়টি আইসোলেশন সেন্টার

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে বন্ধ নয়টি আইসোলেশন সেন্টার

হাসপাতালে করোনা রোগীকে নিয়ে যাচ্ছেন স্বজনরা

চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসাসেবায় সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র দুটি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ৩০টি শয্যা এবং জেনারেল হাসপাতালে ১৫০ শয্যা। এর সঙ্গে আছে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানোলা ও অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা। কিন্তু করোনা সংক্রমণের প্রথম প্রকোপে স্বাস্থ্য খাতের বিপর্যস্ত পরিস্থিতি বিবেচনায় বর্তমান প্রস্তুতি নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাছাড়া সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে চালু হওয়া নয়টি আইসোলেশন সেন্টার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শঙ্কা-সংশয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতিমধ্যে আইসিইউ শয্যা সংকটের ঘটনাও ঘটে বলে জানা যায়। জানা যায়, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় চমেক হাসপাতালে প্রস্তুত করা হয়েছে ৩০০টি শয্যা। এর সঙ্গে আছে ১০ শয্যার আইসিইউ, এইচডিইউ ১০টি, করোনা আক্রান্ত কিডনি রোগীর ডায়ালাইসিস শয্যা তিনটি, হাই ফ্লো নেজাল ক্যানোলা ৬৬টি, ২০০টি অক্সিজেন সরবরাহে পোর্ট এবং আরও ১০০টি পোর্ট প্রস্তুত আছে। করোনা ওয়ার্ডে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছেন ৩২ জন চিকিৎসক এবং রুটিন দায়িত্ব (বিভিন্ন ওয়ার্ডসহ) পালন করেন আরও ৩০ জন।  অন্যদিকে জেনারেল হাসপাতালে ১০টি আইসিইউসহ মোট শয্যা আছে ১৫০টি, হাই ফ্লো নেজাল ক্যানোলা আছে ৩০টি, অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে ৪০০টি, ২৫ জন মেডিকেল অফিসারসহ মোট ১৩৬ জন চিকিৎসক এবং তিন শিফটে দায়িত্ব পালন করছেন ১০৮ জন নার্স। আছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা।  চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। গতকালও বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে সামগ্রিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এই মুহূর্তে করোনা রোগীর চিকিৎসায় ৩০০টি শয্যা প্রস্তুত। এর সঙ্গে অক্সিজেন সরবরাহ ও হাই ফ্লো নেজাল ক্যানোলা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসক-নার্সও আছে।’ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার নাথ বলেন, ‘চট্টগ্রামে করোনা রোগীর প্রথম চিকিৎসা দেওয়া হয় জেনারেল হাসপাতালে। এখানে ১৫০টি শয্যা সব সেবা নিয়ে প্রস্তুত।’ চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া আছে। আশা করি কোনো সমস্যা হবে না। বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা আইসোলেশন সেন্টার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কোনো সমস্যা হবে বলে আমরা মনে করি না।’  জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটি চট্টগ্রামের সদস্য সচিব ডা. সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, ‘করোনার প্রথম ধাপে আমাদের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা হয়েছে। এখন প্রথম অভিজ্ঞতাকে দ্বিতীয় সংক্রমণ মোকাবিলায় কাজে লাগানোর সময়। কিন্তু প্রশ্ন প্রথম অভিজ্ঞতাকে কতটুকু প্রয়োগ করা হচ্ছে। অতীত অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখে চিকিৎসা উপকরণ প্রস্তুতি, যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্তকরণ, জনবল প্রস্তুত রাখা, সক্ষমতা অনুযায়ী সেবার পরিসর বৃদ্ধি করা- এসব কতটুকু করা হয়েছে সেটা বড় বিষয়। অথচ নভেম্বরেই একাধিক রোগীর আইসিইউ শয্যা না পাওয়ার কথা শুনেছি। তাই শঙ্কা বাড়ছে।’ জানা যায়, চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর (এপ্রিল-জুন) স্বাস্থ্যসেবায় চরম বিপর্যস্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ওই সময় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু, হাসপাতালের সামনে মৃত্যু, হাসপাতালে সাধারণ ও আইসিইউ শয্যা সংকটে মৃত্যু, অক্সিজেন সংকট, চিকিৎসকের অবহেলায় মৃত্যু, রোগী পরিবহন  সংকটসহ নানা কারণে বহুমাত্রিক সংকট ও দুর্বিষহ পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। সঙ্গে ছিল নমুনা প্রদান কেন্দ্র সংকটে চরম ভোগান্তি। তখনকার দুর্বিষহ পরিবেশে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠে নয়টি আইসোলেশন সেন্টার। পরে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে প্রকোপ তুলনামূলক কমে আসে। এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে যায় বেসরকারি আইসোলেশন সেন্টারগুলো। কিন্তু সরকারি সেবা অপ্রতুল এবং  বেসরকারি কেন্দ্রগুলো বন্ধ হওয়ায় আগের পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। সঙ্গে আছে নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্র সংকট। কারণ আগামী ৬ ডিসেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে অস্থায়ী ছয়টি নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্র।

সর্বশেষ খবর