তারা সবাই ছিলেন এক সময়ের শীর্ষ ধনকুবের। অল্প সময়ে বহু অর্থকড়ির মালিক হয়েছিলেন। কেউ জালিয়াতির মাধ্যমে ধনকুবের হয়েছেন, কেউ বা অবৈধ পথে। কেউ কেবল সম্পদের সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে পারেননি বলেই সব হারিয়েছেন। অনেকেই আবার নানা বিতর্কে জড়িয়ে বরণ করেছেন কারাভোগ। সম্পদ হারিয়ে অনেকে আবার পথেও বসেছেন। অল্প সময়ের ব্যবধানে ধনকুবের থেকে নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার নজির রয়েছে অনেকের। এমন সব ধনীর নিঃস্ব হওয়ার গল্প নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।
আইক বাতিস্তা
‘অয়েল ব্যারন’ নামে পরিচিত ছিলেন আইক বাতিস্তা। কারণ বাতিস্তার বাবা ছিলেন ব্রাজিলের পূর্ববর্তী দুই সরকারের আমলে খনি ও জ্বালানি মন্ত্রী। সেই সুবাদে তার পরিবার বরাবরই তেল ও গ্যাস ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। ২০১২ সালে বিশ্বের সপ্তম শীর্ষ ধনকুবের ছিলেন তিনি। ধারণা করা হয়, সে সময় তার মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই বছরে ব্রাজিলে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বাতিস্তার আর্থিক সমস্যা প্রকট হতে থাকে। বছর না পেরোতেই বাতিস্তার ব্যবসায় ধস নামে। ২০১৩ সালে নিজের অয়েল কোম্পানি ‘ওজিএক্স’- এর মাধ্যমে তেল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারায় অর্থ হারাতে থাকেন। তবে এতে বাতিস্তার একার দোষ নয়। মূল্যবান ধাতু শিল্পে মন্দা, নিম্নমানের সম্পদ এবং দুর্বল সিদ্ধান্তের কারণে ভুক্তভোগী হয়েছেন তিনি। সে বছর ১৯ বিলিয়ন ডলার খুইয়েছিলেন তিনি। গ্যাস-সংক্রান্ত ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ায় ব্যাংককে বড় অঙ্কের দেনাও শোধ করতে হয় তাকে। শেষমেষ নিঃস্ব বনে যান বাতিস্তা। ২০১৭ সালে তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং এবং দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়। বাতিস্তার পতনের সবচেয়ে বড় কারণ- রিও ডি জেনেইরোর গভর্নরকে ঘুষ দেওয়ার অপরাধে ৩০ বছর জেলে কাটানো।
এলভিস প্রিসলি
এলভিস প্রিসলি ছিলেন জনপ্রিয় গায়ক এবং অভিনেতা। তিনি ছিলেন বহুল বিক্রীত অ্যালবামের সংগীতশিল্পীদের অন্যতম। তাকে বলা হয় বিংশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ সাংস্কৃতিক শক্তি। তাকে ‘কিং অব রক অ্যান্ড রোল’ বা সহজভাবে ‘দ্য কিং’ নামে অভিহিত করা হয়। তার সংগীতে ভীষণভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন মাইকেল জ্যাকসন, প্রিন্স এবং বিটলসসহ অসংখ্য সংগীতশিল্পী। নিজের চোখ ধাঁধানো ক্যারিয়ারে এলভিস প্রিসলি প্রচুর টাকা আয় করেছেন। কিন্তু তিনি জানতেন না কীভাবে এই টাকা পরিমিত উপায়ে ব্যয় করতে হবে। বিলাসী লাইফস্টাইল ও বন্ধুদের খাওয়ানোর পেছনে প্রচুর খরচ করতেন এই তারকা। যে হোটেলে থাকতেন, সেই হোটেল কক্ষ নিজের বাড়ির মতোই সাজানোর জন্য টাকা দিতেন তিনি! তিনি জীবনের শেষ দিকে এসে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন বলে জানা যায়। অনেকেই মাদকদ্রব্যকেই তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে অভিহিত করেন। এ ছাড়াও তিনি প্রচুর জাঙ্কফুড খেতেন। এদিকে তার ব্যক্তিগত জীবনও তেমন সুখকর ছিল না। স্ত্রী প্রিসিলার সঙ্গে নানা মনোমালিন্য লেগেই থাকত। ১৯৭৩ সালে এই দম্পতির বিচ্ছেদ ঘটে। জনপ্রিয় ‘দ্য কিং’ ১৯৭৭ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তৎকালীন গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, মৃত্যুর সময় তিনি প্রায় সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছিলেন।
শন কুইন
আয়ারল্যান্ডের ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শন কুইন। দেশটির অসংখ্য লাভজনক ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছিলেন এই আইরিশ ব্যবসায়ী। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, ২০০৮ সালে তিনি আর্থিক সংকটে পড়েন। ২০১১ সালে একেবারে নিঃস্ব হয়ে যান এই আইরিশ ব্যবসায়ী। শন কুইন অ্যাংলো আইরিশ ব্যাংকে ২৫% অংশীদারিত্বের অধিকারী ছিলেন। ২০০৮ সালে সানডে টাইমসের ধনী তালিকায় বলা হয়েছিল- শন কুইনের আনুমানিক মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৩.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০০৮ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকায় আয়ারল্যান্ডের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। সে সময় বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় ১৬৪তম স্থানে ছিলেন তিনি। তবে সে বছর শেয়ার কেনার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ব্যক্তিকে অনৈতিকভাবে অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়ার কারণে ব্যাংকটির অর্থ স্থানান্তর বন্ধ হয়ে যায়। সংকটকালে করদাতাদের অর্থ নিয়ে ব্যাংকটিকে জামিন দিতে হয়েছিল। যা পরবর্তীতে আইরিশ সরকার দখল করে নেয়। নিরুপায় শন তখন আর্থিক সংকটে পড়েন। সে সময় শন দাবি করেছিলেন, তার মোট সম্পদের পরিমাণ ৫০ হাজার পাউন্ডের কম (২.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। এ ছাড়া ২০১২ সালে আদালত অবমাননার অভিযোগে তাকে ‘নয় সপ্তাহে’র কারাভোগ করতে হয়।
অ্যালেন স্ট্যানফোর্ড
অ্যালেন স্ট্যানফোর্ড ছিলেন মার্কিন অর্থলগ্নিকারী ও পেশাদার ক্রীড়ার পৃষ্ঠপোষক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপ অব কোম্পানির চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। ব্যক্তিগত বিমান, ইয়টের মালিক স্ট্যানফোর্ডের সম্পদের পরিমাণ ছিল ২.২ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু ২০০৯ সালে ইতিহাসের দ্বিতীয় বৃহত্তম পঞ্জি স্কিমের মাধ্যমে এ বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছিলেন স্ট্যানফোর্ড। ফলে ১৮ হাজারের বেশি বিনিয়োগকারীর প্রায় ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়েছিল, যারা আজও ক্ষতিপূরণ পাননি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বিনিয়োগকারীদের অনেকে অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছিলেন। যাদের নিরাপদ বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। ২০১২ সালে সর্বমোট ১৩টি অপরাধের জন্য তিনি দোষী সাব্যস্ত হন। একই বছর বিশাল এই অর্থ কেলেঙ্কারির জন্য আদালত তাকে ১১০ বছরের কারাদন্ডাদেশ দেয়। বর্তমানে সব সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে কারাগারে আছেন এ ধনকুবের।
বিজয় মালিয়া
নব্বই দশকে ভারতের অন্যতম শীর্ষ ধনী ব্যক্তি ছিলেন বিজয় মালিয়া। বিজয়ের বাবাও ছিলেন একজন ভারতীয় ব্যবসায়ী। বিজয় ভারতীয় পানীয় (অ্যালকোহল) ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। পাশাপাশি তৎকালীন এয়ার কোম্পানি কিংফিশার এয়ারলাইনসের মালিকও ছিলেন তিনি। এমনকি ভারতের রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ক্রিকেট দলের সাবেক ফ্রাঞ্চাইজিও ছিলেন তিনি। সে সময় তার মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন বিজয়। বলা হয় বিলাসী জীবনের কারণে ধনী ব্যবসায়ী থেকে নিঃস্ব হন বিজয়। ২০১২ সালে কিংশিফার এয়ারলাইনস ব্যবসাকে সচল রাখতে ব্যাংক থেকে বেশ কয়েকটি ঋণ নিয়েছিলেন। মালিয়া বেশ কয়েকবার প্রয়োজনীয় অর্থ প্রদানে ব্যর্থ হন। ফলে তার বিমান পরিবহন সংস্থা এক বিলিয়ন ডলারের বেশি দেনার মুখে পড়ে। ভারতের বিভিন্ন ব্যাংকে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পাশাপাশি ব্যাংক জালিয়াতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত হন তিনি। এসব কেলেঙ্কারির পর ভারত ত্যাগ করেন বিজয়। পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিজয় মালিয়া রয়েছেন লন্ডনে। সেখান থেকেই নিজের ‘একস্ট্রাডিশন’ মামলা লড়ছেন সাবেক এ ধনকুবের।
প্যাট্রিসিয়া ক্লাজ
আমেরিকার ধনী ব্যবসায়ী জন ওয়ের্নার ক্লাজ। এক সময় আমেরিকার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিই ছিলেন তিনি। মানবসেবার তো বটেই, সেই সঙ্গে তার ছিল বিয়ে করার বাতিক! চারটি বিয়ে করেছিলেন এই ব্যবসায়ী ভদ্রলোক এবং তৃতীয় স্ত্রীই হলেন এই প্যাট্রিসিয়া। জন ক্লাজের সঙ্গে নয় বছরের বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন প্যাট্রিসিয়া। এই বিয়েই তাকে আলবেমারলে কাউন্টিতে নিয়ে আসে। যদিও ১৯৯০ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয় এবং ভার্জিনিয়ার চারলটসভিলে সাবেক স্বামীর আলবেমারলে এস্টেট নিজের কাছে রেখেন দেন প্যাট্রিসিয়া। ৪৫টি কক্ষবিশিষ্ট এই এস্টেটে ধনাঢ্য ব্যক্তিরা পার্টি করতেন। ওয়ের্নারের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর নতুন স্বামীর সঙ্গে ১৯৯৯ সালে সেখানে ‘ক্লাজ এস্টেট ওয়াইনারি’ খোলেন প্যাট্রিসিয়া। উদ্দেশ্য ছিল এখানে বিশ্বের সেরা ভিন্টেজ মদ বানানো। এই প্রকল্প শুরুর জন্য টাকাও ভালোই পুঁজি ছিল তাদের। কিন্তু দেখা গেল, যা পুঁজি ছিল দরকার তার চেয়ে অনেক বেশি। তখন ৬৫ মিলিয়ন ডলার ঋণ নেন প্যাট্রিসিয়া কিন্তু সেগুলো পরিশোধে ব্যর্থ হন। ২০০৮ সালে অর্থনৈতিক মন্দার সময় এস্টেট বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সেই এস্টেট কিনে নেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এখন এটি ট্রাম্প ওয়াইনারি নামে পরিচিত। নিজেকে দেউলিয়া থেকে বাঁচাতে তাকে তার সমস্ত গয়না এবং অন্যান্য জিনিসপত্র নিলাম করতে হয়েছিল। কথায় আছে, ধনী হওয়া সম্ভব কিন্তু তা ধরে রাখা কঠিন। প্যাট্রিসিয়া যেন সেই ফাঁদেই পা দিয়েছিলেন।
বার্নার্ড ম্যাডফ
বার্নার্ড এল. ম্যাডফকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় পঞ্জি স্কিম চালানো বিনিয়োগকারী বলে মনে করা হয়। ম্যাডফ ইনভেস্টমেন্ট সিকিউরিটিজের অংশ হিসেবে একজন আর্থিক পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে বিপুল ধনসম্পদের মালিক হন। ১৯৬০ সালে তিনি ইনভেস্টমেন্ট সিকিউরিটিজের ব্যবসা শুরু করেছিলেন। প্রায় দুই দশক ধরে একটি পঞ্জি স্কিম পরিচালনা করেছিলেন ম্যাডফ। এমনকি NASDAQ (স্টক এক্সচেঞ্জ)-এর চেয়ারম্যান হিসেবেও কাজ করেছিলেন ম্যাডফ। তার ব্যবসার দুটি মৌলিক ইউনিট ছিল- একটি স্টক ব্রোকারেজ এবং অন্যটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ব্যবসা। পঞ্জি স্কিমটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ব্যবসার কেন্দ্রীভূত ছিল। ম্যাডফ তার স্টক ব্রোকারেজ ব্যবসায় স্বচ্ছতা রাখলেও তার সম্পদ ব্যবস্থাপনা ব্যবসায় তিনি ছিলেন লো প্রোফাইল এবং একচেটিয়া ব্যবসার চেষ্টা করেছিলেন। ২০০৯ সালে তার বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে জালিয়াতি করার অভিযোগ প্রমাণিত হয়। আদালত তাকে কারাভোগের নির্দেশ দেন। ম্যাডফ কিডনি রোগে আক্রান্ত ছিলেন। কারাগারে তার চিকিৎসা চললেও তিনি জামিনের জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু আদালত তা প্রত্যাখ্যান করে। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে কারাভোগ করা অবস্থায় মারা যান তিনি।
বিয়রগলফার গডম্যান্ডসন
বিয়রগলফার গডম্যান্ডসন একসময় আইসল্যান্ডের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন সকার খেলোয়াড়ও। সেখান থেকে উপার্জিত অর্থ তিনি বিনিয়োগ করেন বেভারেজ ব্যবসায়। এরপর তার মাধ্যমে ৩.৫ বিলিয়ন ডলার সম্পদ গড়ে তোলেন তিনি। বিলিয়নিয়ার হওয়ার পর ইংলিশ সকার ক্লাব ওয়েস্টহ্যাম ইউনাইটেড ও আইসল্যান্ডের ব্যাংক ল্যান্ডসব্যাংকি ক্রয় করেন গডম্যান্ডসন। এমনকি আইসল্যান্ডের ল্যান্ডসব্যাঙ্কি নামের একটি ব্যাংকে একটি বড় অংশীদার ছিলেন তিনি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ২০০৮ সালে আইসল্যান্ডের ব্যাংকিং সংকটের অন্যতম ভুক্তভোগী হতে হয় তাকে। সে বছর আইসল্যান্ডের আর্থিক সংকটের সময় তার ব্যাংক ভেঙে পড়ে। পরবর্তীতে সরকার তার সম্পদ জব্দ করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। গডম্যান্ডসন সে সময় নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করেন। এ ছাড়াও তাকে তার মালিকানাধীন প্রিমিয়ার লিগ সকার দল (ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাব) বিক্রি করতে হয়েছিল। ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকায় তিনি ধনকুবের থেকে শূন্যে নেমে আসেন। মুহূর্তেই মোট সম্পদের মূল্য ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হারিয়ে পথে বসেন। এক সময়ের ধনী ব্যক্তি নিঃস্ব হয়ে পড়েন অল্প সময়েই।
ভিভ নিকোলসন
অনলাইন জুয়া খেলা আসার আগে ব্রিটেনের মানুষ ‘ফুটবল পুল’ নামক একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফুটবল ম্যাচের ওপর বাজি ধরতেন। পরদিন শনিবার যেসব ম্যাচ হবে, সেগুলোর ৮টির স্কোর যদি আগে থেকে বলতে পারেন, তাহলে প্রচুর টাকা লটারিতে জেতার সুযোগ ছিল। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই গর্ভবতী হয়েছিলেন ভিভ। ১৯৬১ সালে ভিভের দ্বিতীয় স্বামী কেইথ যখন ফুটবল পুল জেতেন, তখন তিনি চার সন্তানের জননী। লটারির পুরস্কার হিসেবে ১ লাখ ৫২ হাজার ৩১৯ মার্কিন ডলার (আজকের দিনে যা ৩ মিলিয়নের কাছাকাছি) জিতেছিলেন কেইথ। কেইথ দম্পতি বিখ্যাত হয়েছিলেন তৎকালীন পত্র-পত্রিকা এবং টেলিভিশন মিডিয়ার কারণে। লটারি জেতার পর যখন তাদের প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘এত টাকা দিয়ে কী করবেন? তখন তাদের উত্তর ছিল- ‘শুধু খরচ করব, খরচ করব আর অনেক খরচ করব!’ আসলে করেছিলেনও তাই। লটারির শেষ পয়সাটি পর্যন্ত তারা শেষ করেছিলেন। ভিভ ও কেইথ দম্পতি বহুকাল সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়েছিলেন। কারণ বিশাল অর্থ অর্জন, দিশাহারা ব্যয় এবং উচ্ছৃঙ্খল জীবন। পরবর্তীতে ভিভ জানিয়েছিলেন, এত টাকা একসঙ্গে পেয়ে দিশা হারিয়ে ফেলেছিলেন তারা। যদিও এই টাকা তাদের আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল।
জসলিন ওয়াইল্ডেনস্টেন
জসলিন ওয়াইল্ডেনস্টেন তার চেহারার জন্য ‘ক্যাটওম্যান’ হিসেবে বিখ্যাত ছিলেন। প্রয়াত বিলিয়নিয়ার আর্ট ডিলার অ্যালেক ওয়াইল্ডেনস্টেনের সঙ্গে ১৯৯৯ সালে বহুল আলোচিত বিচ্ছেদের সুবাদে ২.৫ বিলিয়ন ডলার সম্পদের মালিক হয়ে যান জসলিন ওয়াইল্ডেনস্টেন। যদিও সে বিচ্ছেদ তেমন সুখকর ছিল না। জসলিন তার স্বামীকে নিউইয়র্কের বাড়িতে ১৯ বছর বয়সী এক রাশিয়ান মডেলের সঙ্গে তার শয়নকক্ষে পেয়েছিলেন। সে সময় তিনি তাকে বন্দুক দিয়ে হুমকি দিয়েছিলেন। যে যাই হোক আলোচিত ওই বিচ্ছেদ তাকে ধনাঢ্য ব্যক্তির খেতাব এনে দেয়। এ ছাড়াও জসলিন ছিলেন আমেরিকার একজন বড় মাপের সমাজকর্মী। তবে এ সম্পদ বেশিদিন আগলে রাখতে পারেননি জসলিন। বলা হয়, উচ্চাভিলাসী জীবনযাপনের জন্য দ্রুত নিজের সম্পদ হারাতে থাকেন জসলিন। ফক্স নিউজের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, প্রতি মাসে কেনাকাটায় ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ফোনের বিলের জন্য ৫ হাজার মার্কিন ডলার খরচ করতেন। ২০১৮ সালে ফক্স নিউজ জানায়, মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার দেনার দায়ে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করেন। জসলিন দাবি করেন, তার ব্যাংক হিসাব শূন্যের কোটায়। নিজের দেউলিয়ার ঘটনায় নিজেই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেন তিনি।