ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের প্রবেশপথে ভোর থেকে লাইব্রেরির সামনে ব্যাগের সিরিয়াল দেখা যায়। কখনো তা পৌঁছে ১০০ মিটার দূরে ডাকসু ক্যাফেটেরিয়া পর্যন্ত। শিক্ষার্থীরা প্রবেশের পর গ্রন্থাগারের কোনো আসনই ফাঁকা থাকে না। তবে তারা কেউই নিয়মিত পাঠক নন। শিক্ষার্থীরা গ্রন্থাগারে ভিড় করেন বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে। ঢাবি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে বইয়ের সংগ্রহ ৭ লাখের বেশি। এ ছাড়া বিশ্বখ্যাত স্যাজ পাবলিকেশন, টেইলর অ্যান্ড ফ্রান্সিস, ¯িপ্রংগার, এলসেভিয়ের, পিয়ারসন, ম্যাকগ্রিউ হিল, ক্যামব্রিজ ই-বুক অনলাইনসহ ই-বুক সাবস্ক্রিপশন আছে ৫০ হাজারেরও বেশি। ৩৫ হাজারের বেশি অনলাইন জার্নালের সাবস্ক্রিপশন আছে। পাসওয়ার্ড নিয়ে পাঠকরা এগুলো ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়াও গ্রন্থাগারে বিভিন্ন ধরনের ডাটাবেস, দুর্লভ পান্ডুলিপি সংগ্রহ ও পুরনো পত্রিকাসহ নানা রিসোর্স রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্ভারে নানা ধরনের অনলাইন রিসোর্স থাকলেও কদাচিৎ শিক্ষার্থীরা সেসব ব্যবহার করেন। গ্রন্থাগারে নিয়মিত আসেন এমন শিক্ষার্থীরা জানান, বিসিএস প্রস্তুতি নিতে আসা শিক্ষার্থীদের অধিকাংশেরই ছাত্রত্ব নেই। তাদের ধারণা, গ্রন্থাগারের ধারণক্ষমতার পাঁচভাগের চারভাগই দখল করে বিসিএস প্রস্তুতি নেন ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাওয়া এসব শিক্ষার্থী। ফলে বর্তমান শিক্ষার্থীদের গ্রন্থাগারের বই নিয়ে পড়ার সুযোগ কম। লাইব্রেরিতে ‘আসন দখলে’র জন্য ভোর থেকে যে অপেক্ষা, সেটি বর্তমান শিক্ষার্থীরা অনেকেই করতে চান না। গ্রন্থাগারের ইস্যুকৃত বইয়ের তথ্য অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে এ বছরের এপ্রিলে ৬৩১ জন, মে মাসে ১ হাজার ৮৮৬ জন, জুনে ১ হাজার ৮১৮ জন, জুলাইয়ে ২ হাজার ১১৩ জন, আগস্টে ৩ হাজার ৮১৪ জন ও সেপ্টেম্বরে ৩ হাজার ৮৭০ জন বই নিয়েছেন। প্রতিদিন গড়ে ৯০০ আসনের বিপরীতে মাত্র ৮০ জন শিক্ষার্থী বই নিয়ে পড়েছেন। ঢাবি গ্রন্থাগার যেন এক ইতিহাসের অনন্য ভান্ডার। প্রায় ছয়শো বছরের ইতিহাস ধারণ করে রেখেছে এই গ্রন্থাগার। ১৯২১ সালে যাত্রা শুরু করা গ্রন্থাগারটিতে ৩২ হাজারের বেশি পান্ডুলিপি, ১০০ বছর আগের দ্য টাইমসের কপি, ঐতিহাসিক ১১ দফার কপি থেকে শুরু করে নানাবিধ সংগ্রহ রয়েছে। মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের আগে জ্ঞানচর্চার বাহন ছিল হাতে লেখা পান্ডুলিপি। ১৯২৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে পান্ডুলিপি শাখা এর যাত্রা শুরু হয়। পান্ডুলিপিগুলোর বেশিরভাগই ১৫ থেকে ১৯ শতকের মাঝে। এসব পান্ডুলিপিতে রয়েছে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অনেক মূল্যবান উপাদান। তালপাতা, তেরেটপাতা, কলাপাতা, গাছের বাকল, হাতে তৈরি তুলট কাগজের উপর পান্ডুলিপিগুলো লেখা হয়েছে। বাংলা, আরবি, ফারসি, মৈথিলি, উর্দু ও আসামী ভাষার পান্ডুলিপি রয়েছে। সর্বপ্রাচীন পান্ডুলিপিটি হলো ১৪৩৯ খ্রিস্টাব্দে গাছের বাকলে লেখা তন্ত্রশাস্ত্রের একটি গ্রন্থ ‘সারদাতিলক’। ২০০৭ সাল থেকে পান্ডুলিপিগুলো ডিজিটাল করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। পান্ডুলিপি সম্পাদনা করে প্রতি বছরই একাধিক বই প্রকাশ করা হয়। দেশি-বিদেশি গবেষকরা এখানে গবেষণা করতে আসেন। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, চায়না ও ভারত থেকে অনেক গবেষক এখানে গবেষণা করতে এসেছেন। ঢাবি গ্রন্থাগারে ২০১৫ সালে অনলাইন আর্কাইভ চালু করা হয়। মূল্যবান সংগ্রহগুলোর ডিজিটাল কপি থাকলে তা নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে না। কপিরাইটের আওতামুক্ত উপাদান ডিজিটাল করা হয়। আবার কিছু রেয়ার কালেকশন আছে যার কেবল একটাই কপি আছে, সেগুলোকে ডিজিটাল মাধ্যমে রূপান্তর করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে হওয়া ১৫০০-এর মতো এমফিল ও পিএইচডির থিসিসের কপি, ২৫০০-এর মতো বই, ঢাবির ৯৯টি বার্ষিক রিপোর্ট, ক্যালেন্ডার, সেনসাস, সাময়িকী, গ্যাজেটসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনার সব কিছু এখানে সংরক্ষণ করা হয়েছে। আছে ঢাকা প্রকাশের ১৮৬৪ সালের একটি কপি। এখানে দৈনিক আজাদ, অমৃতবাজার, ইত্তেফাক, নিউইয়র্ক টাইমস, স্টেসম্যান, দি ইংলিশম্যান, দৈনিক, মাসিক পত্রিকা হানাফির কপি সংরক্ষণ করা হয়েছে। আর্কাইভ ভবনের নিচতলায় পুরনো পত্রিকা আছে ১৯২৩ সালের দ্য টাইমসের একটি কপি। এখানে বাংলা পত্রিকা আছে ৪৪টি এবং ইংরেজি পেপার আছে ২৪টি। প্রতিদিন সংরক্ষণের জন্য ১৬টি পত্রিকা কেনা হয়। প্রতি মাসে গড়ে ৪০০ জনের বেশি পাঠক ও গবেষক এই পুরনো পত্রিকার স্থানটিতে আসেন। এত সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার থাকলেও পাঠক নেই বললেই চলে। গ্রন্থাগারিক অধ্যাপক নাসির উদ্দীন মুন্সী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নানান সীমাবদ্ধতা থাকলেও গ্রন্থাগারে নানান ধরনের রিসোর্স আছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের খুব কম সংখ্যকই সেগুলো ব্যবহার করে। লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে এসব রিসোর্স সংগ্রহ করা হলেও ব্যবহারকারী খুবই সীমিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ড. মুজিবুর রহমান বলেন, গ্রন্থাগার ও পাঠাগারের মধ্যে পার্থক্য আছে। গ্রন্থাগারে অনেক গ্রন্থ-জার্নাল থাকবে। আর পাঠাগারে কেবলই বসে পড়বে। দুঃখজনক হলেও সত্যি আমাদের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে একাডেমিক পড়াশোনা বাদ দিয়ে বিসিএস বা অন্য পড়াশোনা হচ্ছে। বর্তমানে গ্রন্থাগারের পরিবেশ একাডেমিক পড়াশোনাকে সাপোর্ট দিতে পারছে না। গণহারে সবাইকে সেখানে প্রবেশাধিকার দেওয়া উচিত হচ্ছে না। চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত কেউ হলেও থাকবে, লাইব্রেরিতে পড়বে, এটা হতে পারে না। বিসিএস পড়ার জায়গা বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে না।
শিরোনাম
- এসএসসিতে ফেল : বরিশালে পাঁচ ছাত্রীর আত্মহত্যার চেষ্টা, দুইজনের মৃত্যু
- এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস না পেয়ে বগুড়ায় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
- টানা বৃষ্টির প্রভাব রাজধানীর বাজারে
- এসএসসিতে অকৃতকার্য হওয়ায় গেন্ডারিয়ায় শিক্ষার্থীর 'আত্মহত্যা'
- সেই আলফি পাস করেছে
- এনবিআরের প্রথম সচিব তানজিনা বরখাস্ত
- ফ্যাসিবাদবিরোধীদের ঐক্য অটুট রাখার আহ্বান মামুনুল হকের
- দুদকের মামলায় জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারকাত গ্রেফতার
- মাকে মারধর করায় যুবককে পিটিয়ে হত্যা করল স্বজনরা
- ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা খাতে আরও বিনিয়োগে জেলেনস্কির আহ্বান
- আবারও ইসরায়েলি বিমানবন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হুথিদের
- কুয়ালালামপুরে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বিরল বৈঠক
- লঙ্কানদের ১৫৫ রানের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল টাইগাররা
- ট্রাম্পের লবিস্টদের লাখ লাখ ডলার দিচ্ছে দরিদ্র দেশগুলো
- নিরাপত্তা খাতে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও সহযোগিতার আহ্বান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার
- জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সম্প্রচার-ব্যবস্থা যুগোপযোগী করা হবে : তথ্য উপদেষ্টা
- ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলি বিমানবন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
- কারাগারে একক সেলে নেওয়া হলো সাবেক আইজিপি মামুনকে
- উন্নত ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা আবশ্যক : প্রধান উপদেষ্টা
- নারী কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ সম্বোধনের নির্দেশনা বাতিল
লাইব্রেরির আড্ডাটা আজ আর নেই...
গ্রন্থাগারে চাকরিপ্রার্থীদের ভিড়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
নাসিমুল হুদা ও আফরিদ সাররাফ আলী
প্রিন্ট ভার্সন

এই বিভাগের আরও খবর