রংপুর জেলার ৮ উপজেলায় ৭৬টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। এসব ইউনিয়নের অধিকাংশ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ সমর্থিত। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামীপন্থি অধিকাংশ চেয়ারম্যানই গা ঢাকা দিয়েছেন। তারা এলাকায় নেই। কেউ থাকলেও তারা সতর্কভাবে চলাফেরা করছেন। একাধিক চেয়ারম্যান গ্রেপ্তারও হয়েছেন।
ফলে ইউনিয়ন পরিষদের স্বাভাবিক কাজকর্ম বাধাগ্রস্ত এবং নাগরিক সেবা ব্যাহত হচ্ছে। এনিয়ে সাধারণ জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ চেয়ে এলাকাবাসী আন্দোলনও শুরু করেছেন। তবে রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেন, তিনটি ইউনিয়নে এসিল্যান্ডকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অন্যগুলোতে প্যানেল চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করছেন। মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ এলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুরের পীরগঞ্জে ১৫টি ইউনিয়ন রয়েছে। এই উপজেলার সব ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ সমর্থিত। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা গা ঢাকা দিয়েছেন। এর মধ্যে কুমেদপুর ইউনিয়নসহ কয়েকটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের পদত্যাগ চেয়ে স্থানীয়রা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। মিঠাপুকুর উপজেলা ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এই উপজেলায় সাতজন জামায়াত সমর্থক চেয়ারম্যান রয়েছেন। তারা বাদে প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের সমর্থিত। এরা এখন কেউ আর এলাকায় নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। কাউনিয়া উপজেলায় ৫টি ইউনিয়ন। এর মধ্যে চারজনই আওয়ামী লীগ সমর্থিত। তারা এলাকায় আত্মগোপন করে রয়েছেন।
গঙ্গাচড়া উপজেলায় ৯টি ইউনিয়ন। এর মধ্যে পাঁচজন আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী সমর্থিত চেয়ারম্যান রয়েছেন। তারাও আত্মগোপনে রয়েছেন। এর মধ্যে গঙ্গাচড়ার বেতগাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাইমিন ইসলাম মারুফ গ্রেপ্তার হয়েছেন। বদরগঞ্জ উপজেলায় ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচজন রয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত। সরকার পরিবর্তনের পর থেকে তাদের এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের পদত্যাগ চেয়ে স্থানীয়রা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। পীরগাছা উপজেলায় ৯টি ইউনিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের চারজন চেয়ারম্যান পলাতক অবস্থায় রয়েছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। তারাগঞ্জ উপজেলায় ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত একজন চেয়ারম্যান রয়েছে। এখন তাকেও এলাকায় দেখা যাচ্ছে না বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
রংপুর সদরে ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে তিনজন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তারা এলাকায় থাকলেও সতর্কভাবে চলাফেরা করছেন।
এদিকে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামীপন্থি চেয়ারম্যানদের অনুপস্থিতির কারণে নাগরিক সেবা মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। জনগণ প্রয়োজনের সময় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে পাচ্ছেন না। ফলে ভোগান্তির মাত্রা বাড়ছে।