পুজোর ছুটিতে ছোট্ট শহরটাতে উৎসবের আমেজ চারদিকে। পূজামন্ডপগুলো আলোকসজ্জায় সেজে উঠেছে, ঢাকের বাদ্যিতে মুখরিত প্রতিটি গলি। এই সময়টায় প্রতিটি বাচ্চার মন আনন্দে ভরে যায়, আর খেলাধুলার জন্য সময়টা যেন সেরা।
খুদে রাজু, তার বন্ধু মিঠু আর টুকাই মিলে ঠিক করলো, এ বছর পুজোর ছুটিতে একটা ঘুড়ি প্রতিযোগিতা করবে। সবাই মিলে নতুন নতুন ঘুড়ি বানাবে, তারপর পুজোর হাওয়ায় সেই ঘুড়িগুলো উড়াবে। ঘুড়ি প্রতিযোগিতা হবে পঞ্চমীর দিন দুপুরে। রাজু খুব খুশি, কারণ তার নতুন ঘুড়িটা দেখতে একেবারে ড্রাগনের মতো! তবে একটা সমস্যা হলো- ঘুড়ি উড়ানোতে রাজু তেমন দক্ষ নয়।
ঘুড়ি বানানোর দিনগুলোতে, রাজুর মা তাকে একটুও বিরক্ত করেননি। বরং তিনি মাঝে মাঝে রাজুকে ছোট ছোট পরামর্শ দিয়েছেন, যেন ঘুড়ি মজবুত হয়। পুজোর আনন্দে সব কাজের মাঝেও মা একটা কথা বলতে ভুলে যাননি- ‘খেলা যেমন আনন্দের, তেমনি বন্ধুত্বও গুরুত্বপূর্ণ।’
যথাসময়ে প্রতিযোগিতা শুরু হলো। সবাই মিলে ঘুড়ি উড়াতে লাগল কিন্তু রাজুর ঘুড়িটা একবারে ভালো করে উড়তে পারছিল না। হঠাৎ মিঠুর ঘুড়ি রাজুর ঘুড়ির সুতোর সঙ্গে জড়িয়ে গেল। রাজু রেগে গিয়ে মিঠুর দিকে চেঁচিয়ে উঠল। মিঠুও রাগ করল, আর ওদের ঝগড়া শুরু হলো। ঠিক তখনই মিঠুর বাবা এসে তাদের থামালেন। তিনি বললেন, ‘পুজোর সময় হলো আনন্দের সময়। তোমাদের বন্ধুত্বের মানে কি শুধু ঘুড়ি উড়ানোতে সেরা হওয়া?’ মিঠুর বাবার কথা শুনে ওরা একটু থামলো। তখন টুকাই বলল, ‘আমরা যদি একসঙ্গে চেষ্টা করি, তাহলে দুইটি ঘুড়িই উড়াতে পারব!’ রাজু আর মিঠু আবার নিজেদের ঘুড়িগুলো ঠিক করতে শুরু করল। এবার দুই বন্ধু মিলে একসঙ্গে ঘুড়ি উড়ানোর চেষ্টা করল। আর অবাক ব্যাপার, তাদের দুই ঘুড়িই আকাশে সগর্বে উড়তে লাগল! রাজু বুঝতে পারলো, শুধু জয়ী হওয়াই আসল নয়, বন্ধুত্ব এবং একসঙ্গে আনন্দ করা আরও বেশি মূল্যবান।
সেইদিন রাজু আর মিঠু শিখল, প্রতিযোগিতা করা মজার কিন্তু বন্ধুত্বের শক্তি আর সহযোগিতার মাধুর্য পুজোর আসল উপহার। পুজোর হাওয়ায় ঘুড়ি উড়লো, আর সঙ্গে উড়লো তাদের বন্ধুত্বের এক নতুন অধ্যায়।