টাঙ্গাইলের সখীপুরে সৌখিন মৎস্য শিকারীদের কাছে পিঁপড়ার ডিমের চাহিদা অনেক বেশি। বাজারে এক কেজি পিঁপড়ার ডিমের পাইকারি দাম প্রায় ১৮শ’ টাকা, খুচরা পর্যায়ে যা ২৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। উপজেলার বিভিন্ন শাল গজারির বনে ঘুরে সবুজ পাতার আড়ালে এই লাল পিঁপড়ার বাসা খুঁজতে ও ডিম সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পার করে সংঘবদ্ধ যুবক। তারা যেন বনের গহিনে গুপ্তধন খুঁজে বের করে।
সৌখিন মৎস্য শিকারীরা জানান, বড়শি দিয়ে মাছ শিকারের জন্য খুবই প্রয়োজন এই লাল পিঁপড়ার ডিম। এই ডিম দিয়ে মাছ শিকার করা খুব সহজ। তাই বাজারে এই ডিমের চাহিদা ও দাম খুব বেশি। প্রায় সারা বছরই এই লাল পিঁপড়ার ডিমের চাহিদা থাকায় এক ধরনের সংঘবদ্ধ যুবক ডিম সংগ্রহ করে থাকে। যা দিয়ে তাদের জীবনজীবিকা চলে বলে তারা জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সখীপুরের বিভিন্ন এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা অসংখ্য শাল গজারি বন রয়েছে। উঁচু-উঁচু গজারি গাছের ডালপালা থেকে লম্বা বাঁশ ও টুকরির মাধ্যমে লাল পিঁপড়ার বাসা ভাঙা হয়। সেই বাসার ভেতর থেকে সংগ্রহ করা হয় পিঁপড়ার সাদা ডিম। বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে সেই ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হয় বলে জানায় ডিম সংগ্রহকারীরা।
পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহকারী আবু তাহের বলেন, আমরা ১০/১২ জন লোক প্রতিদিন পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করি। বড় ধরনের একটি বাসা থেকে ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম পরিমাণ ডিম সংগ্রহ করা যায়। এভাবে প্রতিজনে সারা দিনে প্রায় দেড়-দুই কেজি করে ডিম সংগ্রহ করি। পাইকারী ১৫শ থেকে ১৮শ টাকা বিক্রি করি।
মাছ শিকারী মো. সুজন আহমেদ বলেন, আমরা খুচরা ২৫০ গ্রাম ডিম কিনি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দিয়ে। সে হিসেবে প্রতি কেজি ডিমের দাম পড়ে দুই হাজার থেকে ২৫শ টাকা।
এই পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করলে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয় কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক ও হাতিয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহিজ উদ্দিন মিয়া বলেন, নানা প্রজাতির পাখি বনের ভেতর পিঁপড়া ও কীটপতঙ্গ খেয়ে বেঁচে থাকে। তাই পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করলে পরিবেশের উপর অবশ্যই এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। ছোট্ট প্রাণি হলেও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পিঁপড়ারও ভূমিকা রয়েছে। এজন্য অবাধে পিঁপড়া নিধন করা উচিত নয়।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল