শিরোনাম
শনিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা

ব্যাংক ডাকাতিতে দুর্ধর্ষ জঙ্গিরা

মোটরসাইকেল বোমার সরঞ্জামসহ গ্রেফতার দুই

আশুলিয়ায় কমার্স ব্যাংকে সাত খুনসহ লুটের ঘটনায় দুর্ধর্ষ জঙ্গিরা জড়িত। দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার পাশাপাশি তাদের সংগঠনের অর্থ সংগ্রহে ব্যাংকে হামলার পরিকল্পনা নেয় জঙ্গিরা। পরিকল্পনা মতে, বিদেশ থেকে আনা গ্রেনেড ও অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রসহ হামলার জন্য পাঠানো হয় বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত জঙ্গি সদস্যদের। ফিল্মি স্টাইলে ব্যাংকে ওই হামলার ঘটনায় সরাসরি জড়িত দুই জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতারের পর পুলিশ এমন তথ্য পেয়েছে।
পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এস এম মাহফুজুল হক নূরুজ্জামান গতকাল বলেন, চাঞ্চল্যকর ডাকাতির ঘটনায় বাবুল সরদার (৩২) ও মিন্টু প্রধান (২৮) নামে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা এক সময় ইসলামী ছাত্রশিবির করলেও বর্তমানে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর পার্শ্ববর্তী টঙ্গীর সাতনগর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তারা দুজনই ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এর আগে ঘটনার দিন সাইফুল ইসলাম ও বোরহান উদ্দিন নামে আরও দুজনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তাদের মধ্যে বোরহান উদ্দিন জঙ্গি সদস্য বলে পুলিশ জানিয়েছে।
গতকাল দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি আরও বলেন, গ্রেফতার এই দুজনের কাছ থেকে দুটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। ডাকাতির কাজে এই মোটরসাইকেলগুলো ব্যবহার হয়েছে কিনা তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া     আরও উদ্ধার হয়েছে বোমা তৈরির কাজে ব্যবহৃত আধুনিক মেশিন, গানপাউডার, ওমেগা ওয়েট মেশিন, স্পি­ন্টার, ৪টি চাপাতি, ৮টি ডেগার, একটি পিস্তলের ম্যাগজিন, বিভিন্ন ধরনের জিহাদি বই ও লিফলেট। তবে ওই দুজন কোন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত এ বিষয়ে তদন্ত চলাকালে কিছু বলা যাচ্ছে না বলে জানান ডিআইজি নুরুজ্জামান। জঙ্গির এ  গ্রুপটি সম্পর্কে তিনি বলেন, জঙ্গি গ্রুপের সদস্যরা ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়ায়। তারা একেক সময় একেক পেশায় থাকে। কখনো পোশাক কারখানায় চাকরি, কখনো সিএনজি চালক আবার কখনো রিকশাচালক হয়ে যায়। গ্রেফতারকৃত এই দুজনের একজন রিকশাচালক ও পোশাক কারখানার শ্রমিকের ছদ্মবেশ নিয়েছিল। এই ছদ্মবেশেই তারা ডাকাতির আগে মহড়াও করেছে। তিনি বলেন, মিথ্যা পরিচয়ে তারা এত দিন বাসা ভাড়া নিয়ে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। তাই বাড়িওয়ালারা সতর্ক থাকলে এ বিষয়টি প্রতিরোধ করা যাবে। ডিআইজি নুরুজ্জামান বলেন, তদন্ত করতে গিয়ে আমাদের কাছে নিছক ডাকাতি মনে হয়নি। ডাকাতরা ডাকাতির সময় খুনের দিকে যায় না। তাদের উদ্দেশ্য থাকে কীভাবে মালামাল লুট করা যায়। এরপর পালিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে আটককৃতদের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তারা এক সময় শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। বর্তমানে তারা জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। তারা প্রশিক্ষিত। ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় যারা আহত হয়েছেন তাদের আঘাত প্রাপ্তির স্থান একই। তিনি আরও বলেন, ঘটনার সময় যে বোমাগুলো বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে তার উপকরণ দেশের বাইরে থেকে আনা। গত তিন মাস দেশে একটি অস্থিতিশিল পরিস্থিতি ছিল। বর্তমানে দেশে স্থিতিশীল অবস্থা চলছে। এই স্থিতিশীল অবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে নষ্ট করতে এবং দেশের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতেই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকার এসপি হাবিবুর রহমান, এডিশনাল এসপি আশরাফুল আজিমসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এদিকে ব্যাংক ডাকাতির এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সাইফুলকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে গাজীপুর জেলা নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যরা গতকাল আশুলিয়া থানা এলাকায় অবস্থান নেয়। শ্রমিকদের দাবি গ্রেফতার সাইফুল গাজীপুর জেলা নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি। পরে অবশ্য সাইফুলকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আশুলিয়া থানার ওসি মোস্তফা কামাল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ডাকাত দলের সদস্যদের সঙ্গে সাইফুল জড়িত নয়। তবে সে ওই বাড়ির কেয়ারটেকার ছিল, তাই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ডাকাতদের গুলি, বোমা ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়েছে কমপক্ষে ২০ জন। এ ছাড়া জনতার গণপিটুনিতে এক ডাকাত প্রাণ হারান।
আরও একজনের মৃত্যু : সাভার প্রতিনিধি জানান, আশুলিয়ায় কমার্স ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনায় ডাকাতদের হামলায় আহত আরও একজনের গতকাল রাতে মৃত্যু হয়েছে। তার নাম আয়ুব আলী (৭০)। সাভার এনাম মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর