সময় এক প্রতারণার খেলা! মহাকালের অতলান্ত গভীরে হারিয়ে যায় সময়, সুযোগ ও সক্ষমতা! মহান আল্লাহ বলেন, ‘(ওয়াল আসর) মহাকালের শপথ। মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত...।’
(সুরা : আসর, আয়াত : ১)
মহান আল্লাহ বলেন, ‘সত্কর্ম ও ধর্মভীরুতায় তোমরা পরস্পর সহযোগিতা করো। মন্দকর্ম ও সীমা লঙ্ঘনে পরস্পরের সহযোগিতা কোরো না...। ’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ২)
মুমিনের বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা সৎ কাজে প্রতিযোগিতা করত। আর আমাকে আশা ও ভীতি সহকারে ডাকত। আর তারা ছিল আমার প্রতি খুবই বিনয়ী।’
(সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৯০)
ইবনে উমার (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) (একদা) আমার দুই কাঁধ ধরে বলেন, তুমি এ দুনিয়ায় একজন মুসাফির অথবা পথচারীর মতো থাকো। আর ইবনে উমর (রা.) বলতেন, তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হলে আর ভোরের অপেক্ষা কোরো না এবং ভোরে উপনীত হলে সন্ধ্যার অপেক্ষা কোরো না...।’ (বুখারি)
মহান আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাতি আমলে অগ্রসর থাকা এবং প্রতিযোগিতা করা ঈমানি পূর্ণতার পরিচায়ক। মহান আল্লাহর নির্দেশ—‘তোমরা ভালো কাজে প্রতিযোগিতা করো।’
(সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৪৮)
এখানে ‘প্রতিযোগিতা’ ও ‘অগ্রসর’ শব্দের ব্যাখ্যা হলো—‘অন্যের চেয়ে এগিয়ে থাকা’ এবং ‘ভালো কাজ শিগগিরই সম্পন্ন করা’ ইত্যাদি।
জীবন ক্ষণস্থায়ী, মানুষের সাধ্য-সামর্থ্য দ্রুত ফুরায়, তবু হাদিসের ভাষায় ‘সুস্থতা ও অবসরের ব্যাপারে মানুষ খুবই উদাসীন।’ (বুখারি)
কাজেই সত্কর্মে বিলম্ব নয়। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, সাতটি বিষয়ের আগে দ্রুত সত্কর্ম করো :
ক) তোমরা কি এমন দারিদ্র্যের অপেক্ষা করছ, যা তোমাদের সব কিছু ভুলিয়ে ফেলবে?
খ) নাকি ওই ঐশ্বর্যের, যা তোমাদের অহংকারী বানিয়ে ছাড়বে?
গ) নাকি এমন অসুস্থতার, যার আঘাতে তোমরা জরাজীর্ণ হয়ে পড়বে?
ঘ) নাকি ওই বার্ধক্যের, যা তোমাদের অথর্ব-অপদার্থ বানিয়ে ছাড়বে?
ঙ) নাকি মৃত্যু, যা শিগগিরই এসে যাবে?
চ) নাকি দাজ্জালের, অনুপস্থিত যা কিছুর জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে, দাজ্জাল হচ্ছে সেসবের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট?
ছ) নাকি কিয়ামতের অপেক্ষা করছ, যে কিয়ামত সর্বাপেক্ষা বিভীষিকাময় ও সর্বাপেক্ষা তিক্ত? (তিরমিজি)
অন্যদিকে প্রিয় নবী (সা.) বিশেষ তিনটি কাজে বিলম্ব করতে নিষেধ করে বলেন, ‘তিন কাজে বিলম্ব করবে না। সময় হয়ে গেলে নামাজ আদায়ে, লাশ এসে গেলে জানাজা আদায়ে এবং পাত্রপাত্রীর ‘কুফু’ (পারস্পরিক সামঞ্জস্যতা) পাওয়া গেলে বিবাহে।’ (তিরমিজি)
অপর এক হাদিসে আছে—‘পাপ কাজের জন্য তাওবা করা ও ঋণ পরিশোধে বিলম্ব না করা।’
ইসলামের দৃষ্টিতে সত্কর্মকে আমলে সালেহ বলে। ঈমান ছাড়া আমলে সালেহ বা ভালো কাজ মূল্যহীন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে কেউ ঈমান আনবে এবং আমলে সালেহ করবে, তার জন্য থাকবে সর্বোত্তম পুরস্কার...।’
(সুরা : কাহফ, আয়াত : ৮৮)
মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘ঈমান এনে যেকোনো পুরুষ বা নারী আমলে সালেহ করবে, আমি তাকে দান করব উত্তম পবিত্র জীবন এবং তাদের পুরস্কার দেব তাদের সবচেয়ে ভালো কাজগুলোর ভিত্তিতে।’ (সুরা : আন-নাহল, আয়াত : ৯৭)
আমলে সালেহের ন্যূনতম ভিত্তি
১. ইলম (এ কথা জানা যে এ কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও হুকুম আছে)
২. সবর
৩. নিয়ত ও
৪. ইখলাস।
ভালো কাজে বিলম্ব করা উচিত নয়। কেননা মানুষের জীবন বয়সসীমা ও মৃত্যুফ্রেমে বাঁধানো। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন তাদের নির্ধারিত (মৃত্যুর) সময় উপস্থিত হয়, তখন তারা আর এক মুহূর্তও বিলম্ব করতে পারে না এবং এর চেয়ে একটু এগিয়েও আসতে পারে না।’
(সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৪৯)
পরিশেষে কবির ভাষায় নিবেদন
‘...ও তোর আশালতা পড়বে ছিঁড়ে,
হয়তো রে ফল ফলবে না।
আসবে পথে আঁধার নেমে, তাই বলেই কি রইবি থেমে—
ও তুই বারে বারে জ্বালবি বাতি,
হয়তো বাতি জ্বলবে না।
শুনে তোমার মুখের বাণী আসবে ঘিরে বনের প্রাণী
হয়তো তোমার আপন ঘরে
পাষাণ হিয়া গলবে না।
বদ্ধ দুয়ার দেখলি বলে অমনি কি তুই আসবি চলে...।’
লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ
কাপাসিয়া, গাজীপুর
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ