মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

প্রস্তুত দেশের প্রথম ইউলুপ

ঈদের পরই উন্মুক্ত হবে যান চলাচল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রস্তুত দেশের প্রথম ইউলুপ

ঢাকাবাসীকে যানজটের হাত থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি দেবে রামপুরা টিভি ভবনের সামনে হাতিরঝিল সাউথ ইউলুপ — রোহেত রাজীব

অবশেষে উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে রাজধানীর প্রথম ইউলুপ। ঢাকার রামপুরা ব্রিজ ও হাতিরঝিল সংলগ্ন এলাকার ইউলুপটির নির্মাণকাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। ঈদের পর জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে পরীক্ষামূলকভাবে এই ইউলুপটি খুলে দেওয়া হবে। রাজধানীর অন্যতম প্রধান সমস্যা যানজট। সরকার এই যানজট লাঘবে বিভিন্ন উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় এবার তৈরি করছে ইউলুপ। আশা করা হচ্ছে, ঢাকাবাসীকে যানজটের হাত থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি দিবে ইউলুপ। এরই মধ্যে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকায় দুটি ছাড়াও বিভিন্ন সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ইউলুপ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সাধারণত উন্নত বিশ্বে ইউলুপ চালু থাকলেও ঢাকায় প্রথমবারের মতো এটি নির্মিত হচ্ছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) যানজট কমাতে ২২টি ইউলুপ নির্মাণ করবে। এর ফলে রাজধানীর তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে গাজীপুর যেতে কোনো সিগন্যালে যাত্রীদের ঘণ্টাব্যাপী আটকে থাকতে হবে না। ডিএনসিসি-এলাকায় ইউলুপ তৈরির ফলে যানজট কমলে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনেও তা নির্মাণের ব্যাপারে ভাবা হবে। সেনাবাহিনীর ১৭ ইসিবি কোরের হাতিরঝিলের প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর শাকিল হোসাইন বলেন, রামপুরা ব্রিজসংলগ্ন নর্থ ও সাউথ ইউলুপ দুটির মধ্যে সাউথের কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক। এখন শেষ পর্যায়ের কিছু কাজ বাকি রয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা না হলেও জনগণের ভোগান্তির বিষয়টি মাথায় রেখে এই ঈদের পর দক্ষিণের এই ইউলুপটি পরীক্ষামূলকভাবে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। হাতিরঝিল এলাকার সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বিটিভি ভবনের সামনে সাউথ ইউলুপটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৪ সালে।

 হাতিরঝিলের দক্ষিণ পাশে বিটিভি ভবনের সামনে বনশ্রী এলাকাকে সংযোগকারী সাউথ ইউলুপটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে হলেও মেরুল-বাড্ডা সংলগ্ন নর্থ ইউলুপটির কাজ শুরু হয়েছে চলতি বছর। এর ফলে এই অংশের কাজ শেষ হতে সময় লাগবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। তবে যানজট নিরসনে নতুন নেওয়া এই উদ্যোগ নিয়ে মানুষের মধ্যে যেমন প্রত্যাশা রয়েছে। একইভাবে সময়মতো চালু না হওয়ায় নগরবাসীর ক্ষোভও রয়েছে। রামপুরার বাবুবাজার এলাকার বাসিন্দা ফারহানা রহমান বলেন, আমার অফিস আগারগাঁও এলাকায় যেতে প্রতিদিন কমপক্ষে তিন ঘণ্টা সময় লাগে। ইউলুপটি চালু হলে একদিকে সময় বাঁচবে, অন্যদিকে ভোগান্তি কমবে।

উল্লেখ্য, বনশ্রী থেকে আসা যানবাহনগুলো বামে মোড় নিয়ে খিলগাঁও-মৌচাকের দিকে যায়। আবার পশ্চিম রামপুরা, মীরবাগ, হাজীপাড়া, মৌচাক ও খিলগাঁও থেকে আসা যানবাহনগুলো ব্রিজের পূর্বপ্রান্তে এসে বামে মোড় নিয়ে হাতিরঝিল, ডানে মোড় নিয়ে বনশ্রী প্রধান সড়ক এবং সোজা চলে যায় মেরুল-বাড্ডার দিকে। একইভাবে উত্তর প্রান্তেও হাতিরঝিল থেকে বের হওয়া গাড়িগুলো ডানে মোড় নিয়ে রামপুরার দিকে, বামে মোড় নিয়ে কুড়িল বিশ্বরোডের দিকে যায়। এ ছাড়া এয়ারপোর্ট, উত্তরা, কুড়িল থেকে আসা যানবাহনগুলোকেও রামপুরা ব্রিজ হয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে হয়। ফলে বিভিন্ন রুটের যানবাহনগুলো এই সম্মিলন স্থলটিতে তীব্র যানজট হয়। এর ফলে প্রতিদিন এখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়। এই অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে ঢাকাবাসী ও এই এলাকার মানুষ এখন ইউলুপ দুটির দিকে তাকিয়ে আছেন।

বনশ্রীর বাসিন্দা নাজমুল আলম খান বলেন, ইউলুপগুলো দ্রুত চালু করা উচিত। ধীরগতির নির্মাণকাজের জন্য ৮ মাসের কাজ করতে ২ বছরের বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। ইউলুপ দুটির নির্মাণকাজের সার্বিক অগ্রগতি প্রসঙ্গে হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী জামাল আখতার ভূইয়া বলেন, সাউথ ইউলুপটির ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে। এর সঙ্গে আরও কিছু দৃষ্টিনন্দন ছোটখাটো স্থাপনা যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই বাকি কাজও শেষ হবে বলে আমরা আশাবাদী। অন্যদিকে নর্থ ইউলুপটির কাজ শেষ করতে আরও সময় লাগবে। তবে কাজ শেষ করতে জোর চেষ্টা চলছে। চলতি বছরের মধ্যেই ইউলুপ দুটি যান চলাচলের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর