২৬ অক্টোবর, ২০২১ ১৬:৩৩

অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ কালো ধান চাষে সাফল্য

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ
কালো ধান চাষে সাফল্য

ব্লাক রাইস চাষ করে সবার দৃষ্টি কেড়েছেন সোহাগ

কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে বিভিন্ন জাতের উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন ধান চাষ হচ্ছে। এর সাথে যোগ হচ্ছে ভিন্ন প্রজাতিরও ধান। এমনই এক প্রজাতির ব্লাক রাইস নামে ধান চাষ করে সবার দৃষ্টি কেড়েছেন সিঙ্গাপুর ফেরত রেজওয়ানুল সরকার ওরফে সোহাগ।

এই রাইস ধান সাধারণ ধানের মত চাষ হলেও এ ধান চাষে অতিরিক্ত সার বা পানির প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন হয় না আলাদা কোনো পরিচর্যারও। এটি একটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ধান। এ ধানের চাল উৎপাদন করে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া গেলে তা দেশের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন খানসামা উপজেলা কৃষি অফিসার বাসুদেব রায়। 

কৃষি প্রধান জেলা দিনাজপুরের খানসামায় অন্যান্য আধুনিক ধান চাষের মতই প্রথমবার এই ব্লাক রাইস চাষ করেছেন। রেজওয়ানুল সরকার ওরফে সোহাগ দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার খামারপাড়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে বাড়ীর পাশে ৫২ শতক জমিতে গত ৩০ জুলাই এই ধান রোপন করেন। গত সপ্তাহে এ ধান কেটে মাড়াই এবং শুকাচ্ছেন। তার এই কালো ধানের চাষ এবং উপকারিতা শুনে অনেক কৃষকই এ ধানের বীজ সংগ্রহে ছুটছেন তার কাছে। 

রেজওয়ানুল সরকার ওরফে সোহাগ খানসামার খামারপাড়া ইউপির ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের মৃত জোনাব আলী সরকারের ছেলে। তিনি সাড়ে ৪ বছর সিঙ্গাপুরে ছিলেন। দেশে ফিরে আসার পর তার পিতা মারা যান। এরপর আর সিঙ্গাপুর ফিরে যাওয়া হয়নি তার। পিতার রেখে যাওয়া জমি দেখাশোনা ও চাষাবাদ করছে। শাহ্ আলম নামে এক বন্ধুর মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়া থেকে এ কালোধানের ২ কেজি বীজ সংগ্রহ করেন তিনি। ধানের শীষও সাধারণ ধানের চেয়ে বড়। অন্যান্য ধানের মতোই এ ধানের পরিচর্যা করতে হয়। ধানগুলো দেখতে যেমন কালো, চালও দেখতে তেমন কালো। এ চালের ভাতও কালো এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। বাড়িতে পরিবার নিয়ে খাওয়ার এবং উৎপাদন কেমন হয়, তা জানতে প্রথম ব্লাক রাইস বা কালোধান চাষ করেছেন বলে জানায় রেজওয়ানুল সরকার ওরফে সোহাগ।

সোহাগ জানান, ব্লাক রাইসের উপরে প্রামাণ্য চিত্র দেখে কেনেছি কালো চাল ডায়াবেটিস, স্নায়ুরোগ ও বার্ধক্য প্রতিরোধক। এতে ভিটামিন, ফাইবার ও মিনারেল রয়েছে। তাই কালো চাল উৎপাদনে উদ্যোগী হয়েছি। এই ধানের উৎপাদনের পরিমাণ এবং মূল্য নির্ধারণ এখনই করা যাচ্ছে না। ধান ঘরে তুলে চাল করার পর পরিমাণ বোঝা যাবে। আর বাজারজাত করার মাধ্যমে জানা যাবে আর্থিক মূল্য। এ জন্য কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে।

তিনি ধারণা করছেন, বিঘাপ্রতি জমিতে ১৫-১৭ মণ ধান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মূল্য যদি আকর্ষণীয় হয় এবং চাহিদা যদি থাকে তাহলে আগামীতে ব্লাক রাইসের চাষ আরো বৃদ্ধি করবো। তিনি আরো জানান, সিঙ্গাপুরে অবস্থানকালে আমি দেখেছি সেখানকার মানুষ, বিশেষ করে চীনের মানুষ ব্লাক রাইস বেশি দামে কিনে তার ভাত খেত। আমারা ৫ কেজি সাধারণ চাল কিনতাম ১২ থেকে ১৬ ডলারে। আর তারা ৫ কেজি ব্লাক রাইস কিনত ২০ ডলারে। তারা বলত ব্লাক রাইস শরীরে চর্বি জমতে দেয় না ধীরে ধীরে হজম হয়। এ কারণে ক্ষুধা কম লাগে।

খানসামা উপজেলা কৃষি অফিসার বাসুদেব রায় জানান, ব্লাক রাইস একটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ধান। রোগ প্রতিরোধী এ ধানের চাল উৎপাদন করে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া গেলে তা দেশের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন। 

বিডি প্রতিদিন/এএ

সর্বশেষ খবর