বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় মরিচ গাছে পচারি রোগ দেখা দেওয়ায় আতঙ্কে স্থানীয় কৃষকরা। টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ক্ষেতে পানি জমে থাকায় এ রোগ দেখা দিয়েছে। ফলে মরে যাচ্ছে মরিচের গাছ। এতে করে বড় ধরনের ক্ষতির মুখেও পড়েছেন তারা। তাদের ক্ষতি কিছুট পুষিয়ে দিতে কৃষকদের ৫০ হাজার কোকোপিটের মরিচের চারা সরবরাহ করবে বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমি।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে বগুড়া জেলায় মরিচ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে। এ পর্যন্ত অর্জন হয়েছে ৩ হাজার ৮৯২ হেক্টর।
জানা যায়, বগুড়ার মরিচ দেশজুড়ে বিখ্যাত। বগুড়া থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় মরিচ নিয়ে যাওয়া হয়। যে কারণে জেলার বিভিন্ন উপজেলার মাঠ জুড়ে কৃষকরা মরিচের আবাদ করে থাকেন। বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুটন উপজেলায় সবচেয়ে বেশি মরিচ উৎপাদন হয়ে থাকে। এই তিন উপজেলার চরাঞ্চলের কৃষকরা সারা বছর চরে মচির চাষ করে থাকেন। কিন্তু গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে এসব মরিচ গাছে পচারি রোগ দেখা দিয়েছে।
অনেক কৃষকের মরিচ গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। কয়েক দফায় লাগাতে হয়েছে মরিচের চারা। চারা সংগ্রহ করতেও বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাদের। এতে করে আগাম মরিচ বাজারজাত করতে পারছেন না স্থানীয় কৃষকরা। ফলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা। এসব সংকট মোকাবিলায় কৃষকদের ৫০ হাজার কোকোপিটের মরিচের চারা সরবরাহ করবে বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমি।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও কৃষকরা আগাম জাতের হাইব্রিড মরিচ জমিতে রোপণ করেছেন। রোপণের সময় অনুযায়ী কৃষকরা সঠিক সময়ে কাঁচা মরিচ বাজারজাত করতে পারছেন না। কারণ অসময়ে টানা বৃষ্টিতে তাদের রোপণকৃত মরিচের চারাগাছগুলো ঠিকমতো বেড়ে উঠতে পারেনি। সঠিক সময়ে মরিচ গাছে মরিচও ধরেনি। এ ছাড়া বৃষ্টির কারণে বেশিরভাগ মরিচ গাছে পচারি রোগ দেখা দেওয়ায় নষ্ট হয়ে গেছে। পরে নতুন করে কয়েকবার মরিচ গাছ রোপণ করতে হয়েছে কৃষকদের।
উপজেলার চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, বেশ কয়েকজন কৃষক তাদের নষ্ট হওয়া মরিচ ক্ষেত ভেঙে দিয়ে আবারও নতুন করে মরিচ গাছ রোপণ করছেন। কেউবা ২ থেকে ৩ বারও মরিচ গাছ রোপণ করেছেন। এ ছাড়া অতিবৃষ্টির কারণে কৃষকদের মরিচ গাছে বিভিন্ন ধরনের রোগের আক্রমণ হয়েছে। এতে মরিচ গাছে অনেক বেশি পরিমাণে কীটনাশক স্প্রে করতে হচ্ছে। মরিচ চাষে কৃষকের উৎপাদন খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে বারবার মরিচের চারা লাগানোর ফলে এলাকায় এখন হাইব্রিড জাতের মরিচের চারার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ সংকট থেকে উত্তরণে বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমি কৃষকদের মাঝে ৫০ হাজার উন্নত জাতের কোকোপিটের মরিচের চারা সরবরাহ করার পদক্ষেপ নিয়েছে।
উপজেলার হাটশেরপুর ইউনিয়নের নয়া পাড়া গ্রামের কৃষক খাজা আকন্দ জানান, অতি বৃষ্টির কারণে দুই দফায় তার মরিচের গাছ নষ্ট হয়েছে। নতুন করে আবারও জমি তৈরি করছেন মরিচ চাষের জন্য। ৩০ শতক জমিতে প্রতিবার মরিচ চাষ করতে তার ১৫ হাজার টাকা করে লোকসান গুনতে হয়েছে। পুনরায় শেষবারের মতো তিনি মরিচ চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন। তবে ফলন ভালো হবে কিনা, এ নিয়ে সঙ্কায় আছেন তিনি। এ ছাড়া সঠিক সময়ে তিনি কাঁচা মরিচ বাজারজাত করতে না পারায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর এ উপজেলায় ৩ হজার ১১০ হেক্টর জমিতে ৪ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন শুকনা মরিচ উৎপাদন হয়েছিল। এ বছর মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম জানান, মরিচ গাছের পচনরোধ করতে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।
বগুড়া জেলা পল্লী উন্নয়ন একাডেমির চর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক ড. মো. আব্দুল মজিদ জানান, চরের কৃষকদের উন্নয়নে ক্ষতিগ্রস্তদের ৫০ হাজার মরিচ চারা বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে পল্লী উন্নয়ন একাডেমি। বন্যা পরবর্তী সঙ্কট মোকাবিলায় ফসল নষ্ট হওয়া জমিগুলো দ্রুত চাষের আওতায় আনতে কোকোপিটে উচ্চফলনশীল মরিচ চারা উৎপাদন করছেন তারা।
বিডি প্রতিদিন/এমআই