এক সময়ের খরস্রোতা নদী ইছামতী ছিল স্থানীয় কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ। এই নদীর পানি দিয়ে সেচ দেওয়া হতো আশপাশের এলাকার ফসলি জমিতে। ইছামতী তার যৌবন হারিয়েছে। শুকনো মৌসুমে একেবারে পানিশূন্য হয়ে পড়ে নদী। চাষিরাও আর তাদের খেতে সেচ দিতে পারছেন না। এক সময়ের আশীর্বাদ এখন কৃষকের জন্য ‘কান্না’র কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরেজমিনে দেখা দেখে, নদীর বুকজুড়ে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। ধানের খেত দেখলে বোঝার উপায় নেই এটা নদী না সমতল ভূমি। নদীতে পানি না থাকায় শুকনো মৌসুমের ফসলে সেচ কর্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। নদীর মধ্যেই শ্যালো মেশিন বসাতে হয় পানি তোলার জন্য। আবার বর্ষা মৌসুমে নদীর দুই পাড় উপচে পাশের জমি নিমজ্জিত হয়ে যায়। নদী ভরাট হয়ে পানি ধারণক্ষমতা কমে যাওয়া লোকালয় প্লাবিত হয় বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের ভাষ্য, নাব্য হারানো ইছামতী নদী রয়েছে অস্তিত্ব সংকটে। এ নদী বাঁচিয়ে রাখতে এখনই যথযথ পরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন।
দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ জানান, জেলায় ছোট-বড় মিলে ৩৪টি নদী রয়েছে। পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে ইতোমধ্যে পূর্ণভবাসহ ছয়টি নদী খনন করা হয়েছে। ইছামতী ও ছোট যমুনা নদীও খননের প্রস্তাব করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, চিরিরবন্দর উপজেলার নশরতপুর, আলোকডিহি, সাতনালা এলাকা দিয়ে বয়ে গেছে ইছামতী। এ নদীতে চলত বড় বড় পালতোলা নৌকা ও জাহাজ। ব্যবসাবাণিজ্যের সুবিধার জন্য নদীতীরে গড়ে উঠেছিল রানীরবন্দর। এখন এসবই ইতিহাস।
গছাহার গ্রামের প্রবীণ শিক্ষক বাবু নন্দীশ্বর দাস, নশরতপুরের সাবেরউদ্দিন, জোত সাতনালা গ্রামের মজিবর রহমানসহ কয়েকজন জানান, ইছামতী এখন আর নদী নেই। হঠাৎ কেউ দেখলে মনে করবেন সমতল ভূমি। নদীর বুকে কিছু কিছু জায়গায় দুই-একটি গর্ত দেখা যায়। সেগুলোতেও আছে সামান্য পানি। নদীটিতে বছরের বেশির ভাগ সময়ই পানি থাকে না। নাব্য হারানো ইছামতী এখন ধান খেত। শুকনা মৌসুমের আগেই নদী শুকিয়ে যাওয়ায় হারিয়ে গেছে অনেক দেশি প্রজাতির মাছ ও জলজপ্রাণী। জেলেরা পেশা বদল করে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। তাদের দাবি, নদীটি খনন করলে আশপাশের কৃষকরা চাষাবাদে উপকৃত হবেন। নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন জেলেরা।
বিডি প্রতিদিন/এমআই