বিজয়ের মাসে বসুন্ধরা শুভসংঘ রায়পুরা উপজেলা শাখার মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক আয়োজন ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল পাতায় বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানের অবদান ও বীরত্ব সম্পর্কে এই প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা তাদের বক্তব্যে তোলে ধরেন।
রবিবার (১ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় নরসিংদীর রায়পুরায় বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর নগর কলেজ মিলনায়তনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন রায়পুরা উপজেলা বসুন্ধরা শুভসংঘের সাবেক সদস্য ফরহাদ আলম। উপজেলা বসুন্ধরা শুভসংঘের সাবেক উপদেষ্টা এম আর মামুনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বীরশ্রেষ্ঠ মতিউরনগর কলেজের অধ্যক্ষ এম এ আব্দুল লতিফ।
সভার শুরুতে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের অবদান ও বীরত্ব তুলে ধরে বক্তব্য প্রদান করেন একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সামিয়া আক্তার, সানজিদা আক্তার একা, জিদনী আক্তার ও তামান্না আক্তা।
শিক্ষার্থী সামিয়া আক্তার বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান দেশেপ্রেমে বলীয়ান অমরত্ব এক বীর। মুক্তিযুদ্ধে চরম সাহসিকতা ও অসামান্য বীরত্বের জন্য বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব পান তিনি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পৈতৃক নিবাস রায়পুরা উপজেলার রামনগর বর্তমানে মতিউরনগরে এসেছিলেন মতিউর রহমান। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করতে স্থানীয় যুবকদের ঐক্যবদ্ধ করে দৌলতকান্দিকে সভা করেন এবং ভৈরবে মিছিল নিয়ে যান তিনি। সেখানে তিনি কিছুদিন প্রশিক্ষণও দেন। পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর একজন পাইলট হয়েও জীবন ঝুঁকি নিয়ে দেশের পক্ষে কাজ করেন। ছুটিশেষে সপরিবারে কর্মস্থল করাচি ফিরে যান। দেশের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পাকিস্তানের একটি জঙ্গি বিমান ছিনতাই করে দেশের ফেরার পথে বিধ্বস্ত হয়ে শহীদ হন মতিউর রহমান। তারপর সেখানে তাকে কবর দেওয়া হয়। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। মতিউর রহমানের বীরত্ব জাতি চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।
শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম। তিনি যে বিমানটি ছিনতাই করে দেশে ফিরছিলেন তাতে আরেকজন পাইলট ছিলেন। রাশেদ মিনহাজ নামে ওই পাইলটের সঙ্গে বিমানের ভেতর তার ধ্বস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে রাশেদ ইজেক্টর সুইচ চাপলে মতিউর রহমান বিমান থেকে ছিটকে পরে শহীদ হন এবং ভারত সীমান্ত থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।
রায়পুরা উপজেলা বসুন্ধরা শুভসংঘের সাবেক উপদেষ্টা এম আর মামুন বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানে আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা স্বাধীন একটি দেশ পেয়েছি। বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে আমরা সামনে আরেকটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করব। এতে করে মতিউর রহমানের বীরত্বগাথা ইতিহাস তার পরিবারের কাছ থেকে জানতে পারবে এই প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা।
বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানকে নিয়ে বসুন্ধরা শুভসংঘের এমন আয়োজনের প্রশংসা করেন বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর নগর কলেজের অধ্যক্ষ এম এ আব্দুল লতিফ। তিনি বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। মাত্র ২৯ বছর বয়সে তিনি শাহাদৎ বরণ করেছেন। দেশের স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগ করেছেন, এখান থেকে আমাদেরকেও শিক্ষা দিতে হবে। মতিউর রহমান যে ভাবে দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন প্রয়োজন পড়লে আমাদেরকেও জীবন দিতে হবে। আমাদেরকে দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের প্রতি আনুগত, দেশের প্রতি ভালবাসা, দেশপ্রেমের মতন গুনাগুন অর্জন করতে হবে। সেই সাথে মতিউর রহমানের ইতিহাসকে জানাতে হবে বুঝতে হবে এবং ইতিহাসের শিক্ষনীয় দিকগুলো আমাদেরকে গ্রহন করতে হবে।
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন- দৈনিক কালের কন্ঠ পত্রিকার রায়পুরা উপজেলা প্রতিনিধি মো. আব্দুল কাদির, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর নগর কলেজের প্রভাষক তোশতায়ী আলম, হাসান মিয়া, রহুল আমিন, বৃষ্টি আক্তার, শারমিন আক্তার। এ ছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন- মো. আয়ুব হাসান, নাহিদ হাসান, সাংবাদিক ফরহাদ আলম, আল আমিন ও সাদ্দাম উদ্দিন প্রমুখ।
বিডি প্রতিদিন/আশিক