ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিনতাইকারী চক্রের মূল হোতা বিপুল হোসেন ওরফে বিপ্লব ওরফে অস্ত্র বিপ্লবকে মদদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এছাড়া অবৈধভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা।
জানা যায়, গত ৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসি এলাকা থেকে বিপ্লবের নেতৃত্বে একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এসময় তাদের শারীরিকভাবেও লাঞ্ছিত করা হয়। এঘটনায় বিপুল ও তার দুই সহযোগী আশরাফুল ও নুরুজ্জামান সাগরকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে বিশ্ববিদ্যালয় থানা পুলিশ। তবে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা হালিম তার ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে আশরাফুল ও সাগরকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
একাধিক চার্জশিটভুক্ত মামলার আসামি বহিরাগত এই সন্ত্রাসী ক্যাম্পাসে ছিনতাই, ইভটিজিং, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায় জড়িত বলে জানিয়েছে ছাত্রলীগের একটি অংশ। কিন্তু এত কিছুর পরেও সে সর্বদা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকে। জানা যায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা হালিম ও কুষ্টিয়া সদর থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজুর ছত্রছায়ায় নির্বিঘ্নে এসব অপকর্ম করেও পার পেয়ে যাচ্ছে এই সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে পাবনার ঈশ্বরদী থানায় অস্ত্র ও ইবি থানায় চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে।
ছাত্রলীগ ও থানা সূত্রে জানা যায়, বিপুল হোসেন বিপ্লব ঝিনাইদহ শৈলকুপা থানার ত্রিবেনী ইউনিয়নের আনন্দ নগর গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে। একাধিক মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানার আসামি সে। সেসব মামলায় পুলিশের খাতায় পলাতক বিপুল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা হালিমের ছত্রছায়ায় পুলিশের নাকের ডগায় ঘুরে বেরিয়ে এসব অপকর্ম করে থাকে।
এ চার্জশিটভুক্ত আসামি পুলিশি গ্রেফতার এড়াতে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নিয়ন্ত্রিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ১১৩ (আন্তর্জাতিক) নং রুমে দীর্ঘ দিন ধরে অবস্থান করছে। আবাসিক হলগুলোতে মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রকও এই বিপুল বলে অভিযোগ। মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জিয়াউর রহমান হলে মাদক সরবারহকারী আরেকটি গ্রুপের সাথে দ্বন্দ্বের জেরে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
এছাড়াও এই বিপুল হালিম ও মিজুর অস্ত্র ব্যবসায় সহায়তা করে আসছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। ২০১৪ সালে সিরাজগঞ্জে অস্ত্র বহন করার সময় সে পুলিশের হাতে আটক হলেও ছাত্রলীগ নেতাদের হস্তক্ষেপে মুক্তি পায়। ২০১৫ সালের শেষের দিকে তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ সভাপতি মিজানুর রহমান মিজুর সহায়তায় বিপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার ম্যানেজারের দায়িত্ব পান। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই এই সন্ত্রাসী ছাত্রদের সাথে ক্ষমতার দাপটে দুর্ব্যবহার করতে থাকে।
গত বছরের ৩০ জানুয়ারী ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক তৌকির মাহফুজ মাসুদের সাথে কথাকাটাকাটির জের ধরে বিপুল ও তার সহযোগীরা চাপাতি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাকে ধাওয়া করে। এঘটনায় তিনি ক্যাফেটেরিয়ার ম্যানেজার পদ হারালেও তার দাপট যেন বেড়ে যায় বহুগুণ। এবছর ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে মিজু গ্রুপের হালিম সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পরে বিপুল ও তার বহিরাগত সহযোগীরা ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে শুরু করে। ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা কিশোর-কিশোরী, প্রেমিক-প্রেমিকা, ক্যাম্পাসের কপোত-কপোতী কেউই রক্ষা পায় না এ বিপুলের কাছ থেকে। সাথে থাকা মোবাইল, টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ এ সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে।
গত ১৬ মে চাঁদা না পেয়ে নির্মানধীন রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের প্রজেক্ট ম্যানেজর আব্দুর রহমানকে বেধড়ক মারধোর করে এই বিপুল। কিন্তু তারপরেও ক্যাম্পাসে হালিমের মদদপুষ্ট হওয়ায় কেউ তার টিকিটিও ছুঁতে পারেনি। সর্বশেষ বন্ধ ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা দুই দর্শনার্থীর কাছে টাকা ও মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনায় তাকে আটক করে পুলিশ। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বিপুল এবং তার সহযোগী গ্রেফতারের পরে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ থেকে তাকে ছাড়িয়ে নিতে তৎপর হয়ে উঠেছে।
এদিকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা হালিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে কেউ অপকর্ম করলে তার দায়ভার ছাত্রলীগ নেবেনা। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করছি এবং সেই সাথে ছাত্রলীগও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করবে।
এসব বিষয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রতন শেখ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চাঁদাবাজি, দস্যুতাসহ একাধিক মামলার আসামি এই বিপুল। ক্যাম্পাসে সে নানা অপকর্মের হোতা। কিন্তু কিভাবে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকে সেটাই আমার প্রশ্ন ! তার হয়তোবা শক্তিশালী কোনো পক্ষের সঙ্গে আঁতাত রয়েছে।’
বিডি প্রতিদিন/৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭/হিমেল