মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালীন সেশন চার্জসহ অন্যান্য ফি মওকুফ করার দাবিতে বরিশালে বিক্ষোভ এবং সড়ক অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। বরিশাল সরকারি বিএম কলেজের বিভিন্ন বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এই বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা করোনাকালীন সময়ে অযৌক্তিক ফি প্রত্যাহারের দাবি জানান। শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে এই সমস্যার সমাধান করার কথা বলেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. গোলাম কিবরিয়া।
করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালীন সেশন চার্জসহ অন্যান্য ফি মওকুফ করার দাবিতে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিএম কলেজের বিভিন্ন বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের কয়েক শ’ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহীদ মিনার গেট সংলগ্ন বিএম কলেজ সড়কে বসে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ব্যানার প্রদর্শন করে দাবির স্বপক্ষে নানা শ্লোগান দেয়।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, করোনায় অনেক শিক্ষার্থীর বাবা-ভাই চাকরি হারিয়েছে। তাদের আয় রোজগার বন্ধ। আয় রোজগার বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থীর পরিবারে চুলা জ্বলে না। তারা অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। এ অবস্থায় অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ফরম পূরণে একগাদা (৫৫০০ থেকে ৬০০০ টাকা) ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। যা করোনাকালে শিক্ষার্থীদের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনাকালে এত টাকা দিয়ে ফরম পূরণ করা তাদের পক্ষে অসম্ভব।
তারা আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো করোনাকালে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফি মওকুফ করে দিচ্ছে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে সরকার অনেক ভর্তুকি দিচ্ছে। অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর কাঁধে অযৌক্তিক ফি চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষা সফর, সেশন চার্জ, ছাত্র সংসদ, খেলাধুলা, সংস্কৃতি, ছাত্র পরিবহন ও লাইব্রেরি ফিসহ ২৮ টি খাতে অযৌক্তিক ফি ধরা হয়েছে। তারা অযৌক্তিক এসব ফি মওকুফের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান। এই দাবি আদায় না হলে অন্যান্য কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার হুশিয়ারি দেন তারা।
সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিএম কলেজ সড়ক অবরোধ থাকায় এই সড়কে চলাচলকারীরা পড়েন দুর্ভোগে। এক পর্যায়ে বিএম কলেজ অধ্যক্ষ এবং কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মো. নুরুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করানোর চেষ্টা করলেও কর্তৃপক্ষের সুস্পষ্ট ঘোষণা ছাড়া অবরোধ প্রত্যাহার করতে অপারগতা প্রকাশ করেন তারা।
এ সময় অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. গোলাম কিবরিয়া বলেন, যাবতীয় ফি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারণ করেছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো বাড়তি ফি আরোপ করেনি। শিক্ষার্থীরা কোনো ফি না দিলে ফরম পূরণ কীভাবে হবে? শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে সমাধান করার কথা বলেন তিনি।
এ বিষয়ে সমাধান করার জন্য দুপুর দেড়টার পর অবরোধ প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল কলেজ অধ্যক্ষের সাথে বৈঠক করেন। বৈঠকে অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের আরোপিত ফি থেকে ৬শ’ টাকা মওকুফের ঘোষণা দেন বলে জানান আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বিজন সিকদার।
অপরদিকে অধ্যক্ষের সাথে আলোচনা করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগ নামধারী কিছু উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী ওই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের বিজন সিকদার এবং বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামানের উপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেন বিজন সিকদার। তবে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাননি বলে জানান কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মো. নুরুল ইসলাম।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা