কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, শুধু ফসল উৎপাদন বাড়ালেই হবে না, নিরাপদ ও রপ্তানি উপযোগী ফসল উৎপাদন করতে হবে। আর এটা করতে পারলে আমাদের রপ্তানি আয় অনেক বেড়ে যাবে।
গতকাল শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) ‘অভ্যন্তরীণ গবেষণা পর্যালোচনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ সব কথা বলেন কৃষি সচিব।
ইনস্টিটিউটের কাজী বদরুদ্দোজা মিলনায়তনে এ কর্মশালার উদ্বোধন করেন কৃষি সচিব।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি সচিব বারি’র বিজ্ঞানীদের গবেষণা কার্যক্রম পরিকল্পনা তৈরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
এ সময় তিনি বলেন, কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ না করতে পারলে কৃষির উন্নয়ন সম্ভব হবে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে, আমরা যে সকল কৃষি যন্ত্রে ৩০-৭০% পর্যন্ত ভর্তুকি দিচ্ছি তার অধিকাংশই আমদানি নির্ভর। এই আমদানি নির্ভর কৃষি যন্ত্র ব্যবহার করে টেকসই কৃষি উন্নয়ন সম্ভব নয়। কৃষি খাতে সরকার বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে কিন্তু এর সঠিক ব্যবহার আমরা করতে পারছি না।
তিনি প্রতিকূল পরিবেশ উপযোগী উচ্চ পুষ্টিমান সমৃদ্ধ ফসলের জাত উদ্ভাবন ও আগামীর কৃষির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষমতা অর্জনে বিজ্ঞানীদের আহ্বান জানান।
বারি’র মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকারের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান এ এফ এম হায়াতুল্লাহ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. বেনজীর আলম, বারি’র পরিচালক (সেবা ও সরবরাহ) ড. মো. কামরুল হাসান, পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. তারিকুল ইসলাম, পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও যোগাযোগ) ড. ফেরদৌসী ইসলাম।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন পরিচালক (পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন) ড. অপূর্ব কান্তি চৌধুরী, পরিচালক (কন্দাল ফসল গবেষণা কেন্দ্র) ড. সোহেলা আক্তার, পরিচালক (তৈলবীজ গবেষণা কেন্দ্র) ড. মো. আব্দুল লতিফ আকন্দ এবং পরিচালক (ডাল গেবেষণা কেন্দ্র) ড. মো. মহি উদ্দিন।
কর্মশালায় জানানো হয়, বারি’র বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত বিভিন্ন ফসলের ৬২২টি উচ্চ ফলনশীল (হাইব্রিডসহ), রোগ প্রতিরোধক্ষম ও বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশে চাষোপযোগী জাত এবং ৬০২টি অন্যান্য উৎপাদন প্রযুক্তিসহ এযাবৎ মোট ১২২৪টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এ সকল প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে দেশে তেলবীজ, ডালশস্য, আলু, সবজি, মসলা এবং ফলের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব প্রযুক্তির উপযোগিতা যাচাই বাছাই ও দেশের বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কর্মসূিচ গ্রহণ করাই এ কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য। কর্মশালার কারিগরি অধিবেশনসমূহ আগামী ১৮ জুলাই হতে শুরু হয়ে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।
অনুষ্ঠানে বারি কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন “কৃষি যন্ত্রপাতি ও লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন ব্যবস্থাকে লাভজনক করা (এফএমডিপি)” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় কৃষি যন্ত্রপাতি ও লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনে ‘প্রতিভা অন্বেষণ’ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের ‘কৃষি যন্ত্রপাতি প্রতিভা অন্বেষণ ও বিকাশ পুরস্কার ২০২২’ প্রদান করা হয়।
এ প্রতিযোগিতায় ৩টি ক্যাটাগরিতে মোট ১০ জনকে তাদের উদ্ভাবনের জন্য পুরস্কৃত করা হয়। যার মধ্যে ছিল প্রথম পুরস্কার ১টি (৫০ হাজার টাকা, ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট); দ্বিতীয় পুরস্কার ৩টি (প্রতিটি ৩০ হাজার টাকা, ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট) এবং তৃতীয় পুরস্কার ৬টি (প্রতিটি ২০ হাজার টাকা, ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট)।
উদ্বোধনস্থলের পাশে উন্মুক্ত স্থানে প্রতিযোগিতায় বিজয়ীরা তাদের উদ্ভাবিত উদ্ভাবনসমূহ প্রদর্শন করেন। উদ্ভাবনের প্রকৃতি অনুযায়ী পরবর্তীতে তাদের সময়াবদ্ধ কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে এবং এসব উদ্ভাবনী থেকে কোনো প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হলে তা বারি ও উদ্ভাবকের যৌথ নামে প্যাটেন্ট করা হবে বলেও জানানো হয়। প্রকল্প চলাকালীন সময়ে প্রতি বছর এ প্রতিভা অন্বেষণ কার্যক্রম চলমান থাকবে।
গত ২০২১-২০২২ সনে যে সকল গবেষণা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছিল সেগুলোর মূল্যায়ন এবং এসব অভিজ্ঞতার আলোকে আগামী ২০২২-২০২৩ সালে গবেষণা কর্মসূচি প্রণয়নের উদ্দেশ্যে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, নার্সভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিএডিসি ও কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বারি’র বিভিন্ন বিভাগের বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তাগণ অংশগ্রহণ করেন।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন