চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের প্রধান বাহন শাটল ট্রেনে হাত পড়েছে জার্মান গ্রাফিতি লুকাস জিলিঞ্জারের। এই শিল্পীর শখ, চিত্রকর্মের কাছে নয় বরং চিত্রকর্ম নিজেই শহর-গ্রামে নিজের দর্শকদের কাছে ধরা দিবে। যেখানে থাকবে না ধনী-দরিদ্রের জন্য কোনো বাঁধা। তাই নিজস্ব অর্থায়নেই শাটলে এঁকেছেন দেশের ঐতিহ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। সাথে ছিলের চিত্রকরের স্ত্রী লিভিয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার একদল শিক্ষক-শিক্ষার্থী।
গত বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) থেকে পাঁচদিন কাজ শাটলের সাথে ছুটে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন স্টেশনে জার্মানির আরইউএসবি আর্ট গ্রুপের প্রধান এ চিত্রশিল্পী। বিভিন্ন স্টেশনে দাঁড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে এঁকেছেন সুনিপুণ হাতের রংতুলিতে দেশের ঐতিহ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানের দারুণ সব দৃশ্য। যা শিক্ষার্থীদের চিন্তা-ভাবনায় প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন চিত্রকর নিজেই।
এখন শহর থেকে ক্যাম্পাসের প্রায় ২২ কিলোমিটারের পথজুড়েই ঘুরে দিনভর ঘুরে বেড়াচ্ছে জাতীয় সংসদ ভবন, চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন, সুন্দরবন, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চট্টগ্রামের সিআরবি, চট্টগ্রাম বন্দরের জাহাজ এবং সূর্যাস্ত এবং সমুদ্রসহ নানান দৃশ্য।
১৯৮০ সালের দিকে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে চালু করা হয় শাটল ট্রেন। শিক্ষার্থীদের বাহনে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাত জোড়া ট্রেন চলাচল করে। এটি চবির অনন্য বৈশিষ্ট্য যা শিক্ষার্থীদের জীবনের আনন্দঘন ইতিহাসের সাক্ষী। প্রতিদিন ১২ থেকে ১৩ শিক্ষার্থী ভ্রমণ করে ক্লাসে আসে শহর হতে। কখনোবা শাটলের ছাঁদে চড়তেও দ্বিধা করেননা তারা। নান্দনিক এ শিল্পকর্ম শিক্ষার্থী এবং সংশ্লিষ্টদের মাঝে এক আমেজ সৃষ্টি করেছে৷ নিজেকে শাটলের কাছে বিভিন্ন ভঙ্গিতে নিমিষেই হচ্ছেন ক্যামেরাবন্দি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান বলেন, গত ২৮ মার্চ জার্মান শিল্পী লুকাস জিলিঞ্জার আমাদের শাটল ট্রেনের বগিগুলো শিল্পকর্মের মাধ্যমে সাজানোর প্রস্তাব দেন। আমাদেরও শাটল ট্রেন সাজানোর পরিকল্পনা ছিল। আমরা তাঁর প্রস্তাবটি বিবেচনা করে তাঁকে শিল্পকর্মের অনুমতি দেই।
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন বেছে নেওয়ার কারণ নিয়ে শিল্পী লুকাস বলেন, বাংলাদেশের সৌন্দর্য মুগ্ধ আমায় করেছে। আর ট্রেন হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ ক্যানভাস। তাই গ্রাফিতির জন্য ট্রেন একটা আদর্শ জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয় শাটলকে আমরা গ্রাফিতির জন্য নির্ধারণ করেছি এর কারণ হলো আমরা কিছু শিক্ষামূলক প্রকল্প নিয়েছি। আমরা চাই, মানুষ যাতে এখান থেকে শিখতে পারে। তরুণেরা সব সময় নতুন কিছু শিখতে চায়। তারা গ্রাফিতি দেখবে, চিন্তা করবে ও এটা নিয়ে গবেষণা করবে। এ জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনকে গ্রাফিতির মিডিয়াম হিসেবে নিয়েছি।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর