‘সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকা’র অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হল শাখা ছাত্রলীগের তিন নেতাকে তাদের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর পিছনে রয়েছে চাঁদাবাজি ও এ নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা।
জানা যায়, গত শুক্রবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ২নং গেটের সামনে একটি ডাবের দোকানে চাঁদাবাজি কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই দোকানের কর্মচারীকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তুলে নিয়ে হুমকি ও মুক্তিপণ দাবি করার অভিযোগও পাওয়া গেছে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ওই তিন নেতাকে তাদের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
অব্যাহতি পাওয়া নেতারা হলেন, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি শিকদার সাজ্জাদ হোসেন তুষার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল আলম নয়ন ও সাংগাঠনিক সম্পাদক বুলবুল আহমেদ। এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে তাদের স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে সুপারিশও করা হয়েছে।
এদিকে, ওই সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িতরা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী বলে জানা গেছে। তবে, উভয়পক্ষই মারামারিতে অংশ নিলেও অব্যাহতি পাওয়াদের সবাই সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক মাস আগে ঢামেকের ২নং গেটের সামনে শহীদুল্লাহ হলের সহসভাপতি শিকদার সাজ্জাদ তুষারের আশ্রয়ে ডাবের দোকান বসান ঢাকা কলেজের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইমন। গত বুধবার রাতে দোকানে গিয়ে ১০ হাজার টাকা চাঁদার দাবিতে হুমকি দেয় বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি বেলায়েত হোসেন রকি। পরের দিন আবার এসে চাঁদার দাবিতে হুমকি দেয় সে। এরপর শুক্রবার দোকানের কর্মচারী পারভেজকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিয়ে চড়, লাথি, কিল-ঘুষি দেয়। পরে মেডিকেলের সামনে এনে তুষার ফোন দেয়। তুষার এলে তাকেও মারধর করে। এ নিয়ে পরে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
এদিকে, তুষারকে মারধর করায় শহীদুল্লাহ হলে কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দামের অনুসারীরা এসে রকি, মাস্টারদা সূর্যসেন হলের উপ-প্রচার সম্পাদক নাহিদ হাসানসহ ছাত্রলীগ নেতাদের মারধর করে। এরপর সাদ্দামের অনুসারীদের মারধর করতে শহীদুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মেহেদী হাসান সোহেল ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম আকাশের নেতৃত্বে সৈকতের অনুসারীরা সংগঠিত হয়। পরে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাজ্জাদ তুষার বলেন, ‘আমার গ্রামের এক পরিচিত ছেলে দোকান বসিয়ে পরিবারের হাল ধরছে। তার কাছে রকি ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছিলো। এ বিষয়ে কথা বলায় তারা আমাকে মারধর করেছে।
বেলায়েত হোসন রকি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ওইদিকে দুই বন্ধু ও জুনিয়র মিলে খেতে গেছি। তখন দেখি এক দোকানির কাছে চাঁদা চেয়ে জিনিসপত্র তারা ফেলে দিচ্ছে। বাধা দেওয়ায় আমার শার্টের কলার ধরে তুই তোকারি করে, মারধর করে। আমরা নিজ থেকে মারধর করিনি।’
অন্যদিকে, সংঘর্ষে অংশ নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে মেহেদী হাসান সোহেল বলেন, তুষার ও রকি উভয়েই আমাদের পরিচিত। তাদের কোন একটা বিষয় নিয়ে বাকবিতণ্ডা হচ্ছিলো। আমরা গিয়ে থামিয়েছি।’
এ বিষয়ে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'সংগঠনের সার্বিক শৃঙ্খলা ও ছাত্রলীগের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে তিন জনকে অব্যাহতি দিয়েছি’। শুধু এক পক্ষের নেতাকর্মীদেরই কেন অব্যাহতি দেওয়া হলো - এমন প্রশ্নের জবাবে সৈকত বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে যতটুকু পেয়েছি ততটুকু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় আরও বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত আসতে পারে।’ চাঁদাবাজির বিষয়টিও আমলে নেওয়া হবে জানান তিনি।
ঘটনার সার্বিক বিষয়ে খতিয়ে দেখার কথা বলেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন