অর্থনৈতিক উন্নয়ন টেকসই হবে না, যদি না সাংস্কৃতিক উন্নয়ন হয়- এ বিষয়টি বঙ্গবন্ধু অনুধাবন করেছিলেন এবং সে লক্ষ্যে পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছিলেন। এজন্য বঙ্গবন্ধু শুধু চলচ্চিত্রকে উৎসাহিত করেছেন, উদ্যোগ নিয়েছেন, তা-ই নয়, তিনি নিজে চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেছেন।
বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইন্সটিটিউট ফর পিস অ্যান্ড লিবার্টির উদ্যোগে ‘বঙ্গবন্ধু বক্তৃতামালা’র ২৪তম পর্বে এসব কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ জে এম শফিউল আলম ভুঁইয়া। প্রবন্ধের শিরোনাম ছিল ‘বঙ্গবন্ধু সিনেমা অ্যান্ড ন্যাশনাল আইডেন্টিটি: এ মাল্টিডাইমেনশনাল পার্সপেক্টিভ’।
অনুষ্ঠানে ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. ফকরুল আলমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। প্রবন্ধের উপর আলোচনা করেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. মতিন রহমান।
চলচ্চিত্রের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে অধ্যাপক শফিউল আলম ভুঁইয়া বলেন, বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয় তখন যারা হিন্দি ফিল্ম আমদানি করতেন, তাদের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুকে অনুরোধ করা হল যেন হিন্দি ফিল্ম বাংলাদেশের সিনেমা হলে প্রদর্শনের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেটার অনুমতি দেননি। তিনি বলেছিলেন, আমাদের সিনেমা তৈরি করতে হবে। শুধু তাই না, তিনি তার পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাতে তৎকালীন ৪ কোটি টাকারও বেশি চলচ্চিত্র খাতে বরাদ্দ দিয়েছিলেন। এবং ১০০টি সিনেমা হলের প্রকল্পের কথা চিন্তা করছিলেন। কিন্তু ঘাতকেরা ৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন ভিশনারি। চলচ্চিত্রের প্রতি তার ভীষণ অনুরাগ ছিল। ভারতের পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউটের মতো ইনস্টিটিউট করার পরিকল্পনা করেন। এছাড়া প্রতিবছর দু’জন শিক্ষার্থী পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে পড়াশোনা করে এসে দেশে সিনেমা তৈরি করবেন, সে আশা নিয়ে স্কলারশিপেরও ব্যবস্থা করেন বঙ্গবন্ধু। তিনি তার জীবদ্দশায় ফিল্ম ইনস্টিটিউট করে যেতে পারেননি। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটি করেছেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শুধু সিনেমাকে উৎসাহিত করেছেন, উদ্যোগ নিয়েছেন তা-ই নয়, তিনি নিজেও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। ‘সংগ্রাম’ ছবিতে কামরুল আলম খান খসরু এবং চাষী নজরুল ইসলামের অনুরোধে বঙ্গবন্ধু অভিনয় করেছেন বলে উল্লেখ করেন শফিউল আলম ভুঁইয়া।
প্রবন্ধের উপর আলোচনাকালে মতীন রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা হয়তো কম-ই হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর অন্তর্ভুক্তি নিয়ে, নানা ক্রিয়া নিয়ে তার ভাষণ, ফটোগ্রাফ, ফ্যাশন নিয়ে এত ছবি পৃথিবীর অন্য কোনও রাজনৈতিক নেতাকে নিয়ে হয়েছে কি না সেটাতে আমার সন্দেহ আছে। আমরা যদি ইতিহাস পর্যালোচনা করি, লেনিন তার দেশে চলচ্চিত্র প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করেছেন, কিন্তু তার উপরে এত সিনেমা হয়েছে কি না আমি জানি না। বঙ্গবন্ধুর অন্তর্ভুক্তি নিয়ে অনেক কাজ হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে অনেকগুলো আমাদের হাতে নেই। সেগুলো আমাদের খুঁজে বের করতে হবে, নতুনভাবে কাজ করতে হবে বলে মন্তব্য করেন মতীন।
অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল বলেন, জিয়ার আমলে, এরশাদের আমলে বঙ্গবন্ধুর ছবি আসলে এফডিসিতে কেটে দেওয়া হত। একজন ব্যক্তি যিনি একটি জাতির স্থপতি, সারাবিশ্ব জানে বাংলাদেশ শেখ মুজিবুর রহমানের দেশ, তাকে হত্যা করার পরে তার যত রিল, ডকুমেন্টারি আছে সব ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। একটি আইডোলজিকে হত্যা করার জন্য এ কাজ করা হচ্ছে। শেখ মুজিবকে হত্যা করার মাধ্যমে জাতিরাষ্ট্রের যে আদর্শ, যে বিশ্বাস সে আদর্শ ও বিশ্বাসকে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা পড়ে তো অনেক কিছু জানি, কিন্তু ডকুমেন্টারিতে যখন বঙ্গবন্ধু কথা বলছে তখন তার মুখের এক্সপ্রেশনটা কী, কথা যখন বলছেন তখন তার বিশ্বাস কেমন ছিল? সেসব দিক মুখে কীভাবে ফুটে উঠেছে তা দেখতে হবে, তা বিচার বিশ্লেষণ করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিডি প্রতিদিন/কালাম