চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাটল ট্রেনের ছাদে করে ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় আহতদের মধ্যে তিন শিক্ষার্থীকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার পর বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাতে আহত শিক্ষার্থীদের একজনের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে পুরো ক্যাম্পাসে। পরে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসা, পরিবহন দপ্তর, শিক্ষক ক্লাব ও পুলিশ বক্সে হামলা করে, ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি প্রশাসনের।
বৃহস্পতিবার রাতে শাটল ট্রেনে করে ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার পর থেকে উত্তপ্ত হয়ে উঠে চবি ক্যাম্পাস। বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা মূল ফটক অবরুদ্ধ করে অবস্থান নিয়ে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এসময় শিক্ষার্থীরা নিরাপদ শাটল ভ্রমণ ও বগি বৃদ্ধি'সহ বিভিন্ন দাবি জানান। এরমধ্যে দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে থেকে একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর রব উঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। জিরো পয়েন্ট এলাকায় শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন। এরপর রাত রাত সোয়া ১১টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনে গিয়ে ভাঙচুর করেন। বাসভবনে গ্যাসের সঞ্চালন লাইন ভেঙে ফেলেন। যদিও উপাচার্য শিরীণ আখতার ওই বাসভবনে থাকেন না। তবে, বিক্ষুদ্ধরা ভিসি বাংলোর প্রায় প্রত্যেকটি কক্ষে ঢুকে ভাঙচুর করে। এ সময় ফুলের টব থেকে শুরু করে বিভিন্ন আসবাব, ফ্রিজ, টিভি, এসি, ওয়াশিংমেশিন, কক্ষ, লকার, জানালা ভাঙে এবং আসবাবপত্র বের করে বাসভবনের উঠানে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ ছাড়াও ভাঙচুর চালানো হয়েছে চবির পরিবহন দপ্তরে। সেখানে বাস, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস'সহ প্রায় ৬০ টি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়েছে।
কারা ছিলেন এই বিক্ষোভে:
মূলত বিক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করে আহত এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর গুজবে। এতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপপক্ষের নেতা-কর্মীরা একত্রিত হয়ে আন্দোলন শুরু করেন। জিরো পয়েন্ট, উপাচার্যের বাসবভন, শিক্ষক ক্লাব এবং পরিবহন দপ্তরে থাকা যানবাহনে ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপগ্রুপের নেতাকর্মীদের সাথে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এসব ভাঙচুরে অংশ নেন বলে প্রত্যক্ষদর্শী এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভিডিও বিশ্লেষণ করা দেখা গেছে। তবে রাত একটার দিকে বিক্ষোভ চলাকালেই ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপ গ্রুপের নেতা-কর্মীরা নিজেদের মধ্যে মারামারিতে জড়ালে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে চলে যান। এরপরে ধীরে ধীরে বিক্ষোভ কমে যায়। দুর্ঘটনার পর থেকেই বন্ধ রয়েছে শাটল চলাচল। তবে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অসতর্কতা ও অদক্ষতার কারণে এতটা ক্ষতি হয়েছে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের। চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল হক বলেন, কোনো একটা ঘটনা ঘটলে শিক্ষার্থীরা প্রতিক্রিয়া দেখায়। কিন্তু প্রশাসনকে এসব মোকাবিলা করতে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকতে হয়। প্রশাসনের অসতর্কতা ও যথাযথ প্রস্তুতির অভাবে এতো ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। ভাঙচুর হয়েছে এটা মোকাবেলায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রশাসন কোনরূপ পদক্ষেপ নেয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর এসে বলতেছে আমরা আহতদের নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। এটা অত্যন্ত হাস্যকর এবং মনে হচ্ছে যেন তাদের মধ্যে কোন সমস্যা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এটা তাদের অযোগ্যতা হোক, অদক্ষতা হোক সমস্যা তাদের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে। কারণ তারা নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েই চাকুরি করছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শিরিন আখতার আক্ষেপ করে বলেছেন, শাটলের জন্য রেলওয়েকে আমরা বলতে বলতে শেষ। গত বছর রেলমন্ত্রী আমাদের ট্রেন দেওয়ার কথা বলেছিলেন, কিন্তু আমরা পাইনি। তবে তারা চেষ্টা করছে আরও দুই-তিনটি বগি দেওয়ার জন্য। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে তিনটি মামলা হয়েছে, আরো মামলা হবে। আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করে বিস্তারিত ব্যবস্থা নিব।
চবি প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার বলেন, অত্যন্ত ন্যক্কারজনকভাবে উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালানো হয়েছে। পরিবহনের কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়েছে। শিক্ষক ক্লাবে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। রেলের বগিতে আগুন জ্বালানো হয়েছে, পুলিশ বক্স ভাঙচুর করা হয়েছে। আমার সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখানে নিশ্চয়ই জননেত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী চক্র জামায়াত-শিবির ও বিএনপির অ্যাজেন্ডা ছিল। দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য একটা ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছে তারা।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ বক্সের ইনচার্জ নুরে আলম আশেক বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত অবস্থায় ১৬ জন শিক্ষার্থীকে আনা হয়েছিল রাতে। তারমধ্যে শুক্রবার সকালে আমজাদ হোসেন সোহাগ, খলিলুর রহমান ও অংসইনু মারমার অবস্থা অবনতি হলে তাদের আইসিইউতে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল