রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শিমুল নামের স্থানীয় এক যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এর মধ্যেই এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে, এ ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যা আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয়রা।
শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর থেকে ৯টা পর্যন্ত বিনোদপুর বাজারে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে এ বিক্ষোভ করা হয়।
বিক্ষোভে স্থানীয় শ্রাবণ হাসান বলেন, শিমুল আমার খুব কাছের বন্ধু। গতকাল রাতে ক্যাম্পাসের ভেতর সময় কাটাচ্ছিল। এ সময় তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং শিক্ষার্থীরা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই এবং প্রক্টরের পদত্যাগ চাই।
নগরীর মেহেরচণ্ডি এলাকার শামীম হোসেন বলেন, শিমুলের হত্যার সঙ্গে জড়িত যারাই হোক, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় আন্দোলন চলবে।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু ভবনের সামনে মেয়ে সহপাঠীসহ বাইক দুর্ঘটনায় মারা যান নগরীর পশ্চিম বুথপাড়া এলাকার জামাল হোসেনের ছেলে শিমুল। তিনি রাজশাহী কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। এ ঘটনায় তার মেয়ে সহপাঠী সুস্থ আছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত সাড়ে ৯টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. কুদরত-এ-খুদা ও স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু অ্যাকাডেমিক ভবনের মাঝে মেয়ে সহপাঠীর সঙ্গে অবস্থান করছিলেন শিমুল। এ সময় প্রক্টরিয়াল বডির গাড়ি এলে দ্রুত ওই স্থান ত্যাগ করার চেষ্টা করেন তিনি। তখন পেছন থেকে একদল ধর ধর বলে চিৎকার করে তাদের ধাওয়া দেয়।
ধাওয়া দিলে বালির ওপর রড বিছানো রাস্তার ওপর দিয়ে দ্রুত গতিতে বাইক নিয়ে পশ্চিম দিকে পালানোর চেষ্টা করেন শিমুল। সেই মুহূর্তে জগদীশ চন্দ্র বসু ভবনের সামনে ব্যাডমিন্টন খেলা ফলিত গণিতের কিছু শিক্ষার্থী ছিনতাইকারী মনে করে পথ রোধ করার চেষ্টা করেন। তবে, এ ভবনের শেষ প্রান্তে রাস্তায় দুই স্তরের রড বিছানো থাকায় ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে অজ্ঞান হন শিমুল। পাশেই ছিটকে পড়েন বাইকের পেছনে থাকা তার সহপাঠী মিষ্টি। তিনিও হালকা আঘাত পান। অজ্ঞান যুবকের জ্ঞান ফেরাতে মাথায় পানি দেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু জ্ঞান না ফেরায় প্রক্টরিয়াল বডি তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. গিয়াসউদ্দিন আহমদ ও ড. আবু সাঈদ জুয়েল উপস্থিত ছিলেন।
শুক্রবার এ ঘটনায় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দীনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। দ্রুত কমিটিকে প্রতিবেদন জমার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে ড. গিয়াস উদ্দিন বলেন, ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য প্রতিদিনের মতো টহলে বের হই। চারুকলা থেকে টহল শেষে গাড়ি নিয়ে তুঁত বাগানের পাশ দিয়ে জগদীশ চন্দ্র বসু ভবনের পেছনে আসি। তখন গাড়ি দেখে অন্ধকার থেকে বেরিয়ে দ্রুত বাইক নিয়ে চলে যাচ্ছিল তারা। আমরা গাড়ি থেকে নেমে পেছনে হেঁটে এসে দেখি দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাকে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
শিমুলের সহপাঠী মিষ্টি বলেন, ক্যাম্পাসে অবস্থানকালে একদল আমাদের পেছন থেকে ধর ধর বলছিল। তখন ও (শিমুল) বলছিল বাইকে ওঠো। এ বলেই নতুন রাস্তা দিয়ে জোড়ে বাইক চালাতে থাকে। তখন পেছনে একদল ধর ধর বলে দৌড়াচ্ছিল। পাশেই আরেক দল ব্যাডমিন্টন খেলছিল। তারাও ছুটে আসছে। ব্যাট দিয়ে আঘাত করলে দুর্ঘটনা ঘটে।
জানতে চাইলে ফলিত গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী শোয়াইব বলেন, পেছনে ধর ধর বলে চিৎকার হচ্ছিল, তারা বাইক নিয়ে তারা দ্রুতগতিতে আসছিল। ছিনতাইকারী ভেবে আমাদের কয়েকজন এগিয়ে যায়। কিন্তু রাস্তার রডে লেগে বাইক থেকে তারা পড়ে যায়। তাদের আঘাত করার ঘটনা দেখিনি।
এ ব্যাপারে নগরীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মালেক বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/কেএ