দালালের খপ্পরে পড়ে সাগর পথে ইতালি যেতে চেয়েছিলেন তারা। কিন্তু সাগরে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩৯ জন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই বাংলাদেশের সিলেটের। তবে এই দুর্ঘটনায় পড়া ৭৫ জনের মধ্যে ভাগ্যের জোরে বেঁচে ফিরেছেন ১৪ জন। এরমধ্যে আছেন সিলেটের কয়েকজন। সরকারি উদ্যোগে তিউনিসিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন তারা।
এদেরই একজন ফেঞ্চুগঞ্জের কটালপুর মোহিদ পুরের বেলাল আহমদ। সম্প্রতি বাড়িতে ফিরে স্বপ্নের ইতালি যাত্রার রোমহর্ষক বর্ণনা শুনিয়েছেন তিনি।
বেলাল আহমদ বলেন, দালাল এনামুল হকের সাথে তিনিসহ ফেঞ্চুগঞ্জের ৪ জন চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। কথাছিল বাংলাদেশ থেকে ভারতে নিয়ে সেখান থেকে সরাসরি ফ্লাইটে তাদের ইতালি পৌছে দেবে দালালরা। এমন চুক্তিতে স্বপ্নের ইতালির উদ্দেশ্যে বাড়ি ছাড়েন তারা।
যাত্রার শুরুতে তাদের নেয়া হয় কলকাতায়। কলকাতা থেকে দিল্লী এবং পরে দিল্লী থেকে নেয়া হয় মুম্বাইতে। বেশকিছুদিন তাদেরকে ভারতের এই যায়গাগুলোতে রেখে নেয়া হয় শ্রীলংকায়। শ্রীলংকায় কয়েকদিন থাকার পর তাদের নিয়ে যাওয়া হয় কাতারে। কাতার থেকে তাদের নেয়া হয় লিবিয়া। তখনও তারা বুঝতে পারছিলেন না তারা বিপদের মুখে পড়তে যাচ্ছেন।
পরে লিবিয়া থেকে যখন দালালরা তাদের বলে তিউনিসিয়ার মিশরাতা এয়ারপোর্টে নিয়ে যাবে, তখন তারা বুঝতে পারেন যে তাদের সামনে মহাবিপদ। পরে তাদের তিউনিসিয়ার মিশরাতা এয়ারপোর্টে নেয়া হয় এবং সেখানে তাদের পাসপোর্ট জিম্মি করে ফেলা হয়। এয়ারপোর্ট থেকে তাদেরকে বের করে তাদেরকে একটি ছোট কক্ষে আটকে রাখা হয় এবং দেশ থেকে এনামকে টাকা দেয়ার জন্য তাদের মারধর করা হয়। পরে তাদের পরিবারের লোকজন এনামের সাথে টাকা লেনদেন করেন।
পরে সেখান থেকে আরো প্রায় ৪০জন লোকসহ তাদেরকে দালালরা নিয়ে যায় ত্রিপোলিতে। প্রায় একমাস সেখানে রেখে তাদেরকে নানাভাবে নির্যাতন করা হয়। এসময় তাদেরকে মারধর করে সাথে থাকা মোবাইল, টাকা ও অন্যান্য জিনিষপত্র লুটে নিয়ে যায়। এসময় বেলাল আহমদের মাথাও ফেটে যায় বলে জানান তিনি।
কিছুদিন পরে তাদের নেয়া হয় জোয়ারা নামক একটি স্থানে। ভ্যানে করে ৮২ জন মানুষকে সেখানে রাখা হয়। ৮২ জনের খাবারের জন্য ১২ কেজি চাল দিত তারা। এরমধ্যে সপ্তাহে দুইদিন না খেয়ে থাকতে হয়েছে। প্রায় চারমাস এভাবে কাটাতে হয় তাদের। কোন সময় খাবার চাইলে বেধড়ক মারধর করত তারা।
৬ মে রাতে তাদের ২০জনকে গাড়িতে করে নেয়া হয় মরুভূমিতে। বিভিন্ন দেশের আরো ৫০ জনকে নেয়া হয় মরুভূমিতে। সেখানে কোন খাবার ছাড়াই তাদেরকে দুই দিন রাখা হয়। বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে সকলকে একসাথে করে মরুভূমি, পাহাড়, জঙ্গলের ভেতর দিয়ে সাগরের তীরে নিয়ে নৌকায় তুলে। কিছুদূর যাওয়ার পর নৌকাটি ডুবে যায়। চোখের সামনে তলিয়ে যান বেশীরভাগ লোক। এসময় তার সামনের সাগরের বুকে হারিয়ে যান তার ভাতিজা লিটন আহমদ।
পরে তাদেরকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে তিউনিসিয়ার জেলেরা। ১৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হয় তারা। বাকিরা বেশীরভাগই তলিয়ে যান সাগরে।
আর যেন কোন লোক এভাবে দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে জীবন না হারান এ জন্য সকলকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানান বেলাল আহমদ। একই সাথে এসব দালালদের রুখতে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন