পড়া লেখা শেষে একে একে বিপনী বিতান, কসমেটিকস, জুয়েলার্স, মোবাইল ফোন ও স্টেশনারীর ব্যবসা করেও সুবিধা করতে পারেননি তিনি। বিফলে যায় যুক্তরাজ্য পাড়ি দেয়ার দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টাও। তবুও হাল ছাড়েননি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার উদ্যমী তরুণ মো. মামুনুর রশীদ। অবশেষে ‘কোয়েল’ পালনেই সাফল্যের মুখ দেখেন তিনি। চেষ্টা-ধৈর্য আর পরিশ্রমে তিনি এখন কোয়েল পাখির সফল খামারি।
সরেজমিন উপজেলার সদর ইউনিয়নের মজলিস ভোগশাইল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নিজ বসত ঘরের পাশেই রয়েছে তার ‘মা কোয়েল ফার্ম’। উঠোনের এক পাশে অতিরিক্ত দু’কামরার একটি ঘরকেই তিনি বানিয়েছেন খামার। একটিতে রয়েছে ডিম ফোটানোর ‘হ্যাচার’ (বাচ্চা উৎপাদন যন্ত্র) ও সদ্য ফোটা বাচ্চা পাখি রাখার বিশেষ শেড। অন্যটিতে রয়েছে ১৫ দিন বয়সি পাখিদের আরও দু’টি শেড। কাছে আলাদা ঘরে রেখেছেন ডিমপাড়া ও বিক্রি উপযোগী পাখি। এছাড়াও খামারে টার্কি, তিতির ও দেশি মোরগও পালন করছেন তিনি।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে কোয়েল পালন শুরু করেন মামুনুর রশীদ। ভাগ্নের কাছ থেকে শিখেন কলাকৌশল। নেন যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণও। পরে দেড় লক্ষ টাকা নিয়ে যাত্রা শুরু হয় তার। ‘হ্যাচারি’সহ প্রয়োজনীয় উপকরণের সাথে কিনে আনেন ১ হাজার ডিম দেয়া ‘কোয়েল’। এগুলো রোজ ৮০০-৯০০ ডিম দিতে শুরু করে। প্রতি চৌদ্দ দিন অন্তর অন্তর ডিম থেকে একসাথে ৬ হাজার করে বাচ্চা উৎপাদন করেন হ্যাচারের মাধ্যমে। ফোটানো বাচ্চা ২২ দিনের মাথায় বিক্রি করেন তিনি। পাইকারী ২২ টাকা দরে বিক্রি করা হয় প্রতি পিস। বিক্রি উপযুক্ত পাখির মূল্য দাঁড়ায় ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা। আর ডিম বিক্রি হয় ২০০ টাকা শ দরে। এভাবেই প্রায় দেড় বছর ধরে মাস প্রতি খরচ বাদে অর্ধলাখ টাকা আয় করছেন তিনি।
মো. মামুনুর রশীদ জানান, আত্মবিশ্বাস, ইচ্ছা, ধৈর্য আর চেষ্টা থাকলে সাফল্য ধরা দেবেই। কোয়েল পাখি পালনে পরিশ্রম কম, লাভ বেশি। স্বল্প পুঁজি ও জায়গা ব্যবহার করে এ থেকে লাভবান হওয়া সম্ভব।
উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবদুস শহীদ বলেন, কোয়েল পালন অনেক লাভজনক। এর ডিম থেকেও প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। তার এ সাফল্যে অমরা খুশি। খামারের এ অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে তাকে টেকনিক্যালি সাপোর্ট দেয়া হবে।
এ বিষয়ে কথা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. কামরুজ্জামান ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’কে বলেন, মামুনুর রশীদের এ সাফল্য প্রশংসার দাবীদার। কোয়েল পাখির মাংস খুবই সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর হওয়ায় দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। তার মতো অন্যরাও এগিয়ে এলে নিজে সাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে দেশও।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা