১০ মার্চ, ২০২৩ ১৩:২১

জনগণের পকেট কেটে নিচ্ছে সরকার : সিলেটে মির্জা ফখরুল

সিলেট ব্যুরো :

জনগণের পকেট কেটে নিচ্ছে সরকার : সিলেটে মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘দেশের অর্থনীতি, বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা ও শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রে জনগণের পকেট কেটে টাকা নিচ্ছে।’ শুক্রবার সিলেট মহানগর বিএনপির সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সকাল সাড়ে ১০টায় নগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠে এই সম্মেলন শুরু হয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়েছে। এমনভাবে ধ্বংস করেছে, যেটাকে টেনে অত্যন্ত তোলা কঠিন। আজকে শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থে, দুর্নীতির স্বার্থে, চুরি করার স্বার্থে তারা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ফোকলা করে দিয়েছে। তারা অনেক বড় বড় কথা বলে, তারা নাকি অনেক উন্নয়ন করেছে। এই উন্নয়নটা কার জন্যে? এই উন্নয়ন গুটিকতক মানুষের জন্য। তারা পাতাল রেল  করছে, মেট্রোরেল করেছে, কতো টাকা খরচ হয়েছে? যা খরচ হওয়ার কথা তার চেয়ে তিনগুণ খরচ করেছে। পদ্মা সেতু করে খুব বাহবা নেয় তারা। সেই পদ্মাসেতু বানাতে ১০ হাজার কোটি টাকা ছিল বাজেট, তার প্রকল্প, যেটা আমাদের সময় করা হয়েছিল ১০ হাজার কোটি টাকার মতো। সেটা আজকে ৩০ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। চট্টগ্রামে টানেল তৈরি করেছে, যে টানেলের প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা আমরা জানি না। অথচ হাসপাতালে আমার রোগীরা ঠিকমতো বেড পায় না, ওষুধ পায় না, তারা ডাক্তার পায় না। হাসপাতালে ঢোকার মতো কোনো পরিবেশ থাকে না। আজকে স্বাস্থ্যসেবার জন্য বেশিরভাগ মানুষকে বাইরে চলে যেতে হচ্ছে, ভারতে যেতে হচ্ছে, দেশে কোনো চিকিৎসা পাওয়া যায় না বন্ধুগণ।’

তিনি বলেন, ‘শিক্ষাব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। আজকে প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় আওয়ামী সন্ত্রাসী, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। আপনারা দেখুন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কতো খারাপ হয়েছে। প্রকাশ্যে দিনের বেলায় চড়-থাপ্পড় মেরে ১১ কোটি টাকা নিয়ে যায়! পরে আবার ওরাই খোঁজে পায়, তার মধ্যে আবার দুই কোটি টাকা পাওয়া যায় না! আইনশৃঙ্খলা এমন খারাপ হয়েছে, আজকে আমাদের মা-বোনদের নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নাই। তারা নিরাপদ বোধ করেন না এই দেশে। আজকে কোথাও কোনো আইনের শাসন নেই।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বিচার ব্যবস্থাকে তারা সম্পূর্ণ নিজেদের করায়ত্ত করে নিয়েছে। এইভাবে তারা আজকে দেশ পরিচালনা করছে শুধুমাত্র শক্তি দিয়ে, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে অন্যায়ভাবে। তারা বিদ্যুৎ সেক্টরকে বেছে নিয়েছে তাদের টাকা আয় করার জন্য, চুরি করার জন্য। বিদ্যুতের দাম এতো বাড়তো না, যদি চুরি বন্ধ করা যেতো। আজকে তাদের বিশেষজ্ঞরাই বলছেন, এটা হচ্ছে বাস্তব কথা।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধিতে একেবারে অসহায় হয়ে পড়েছে। কথা দিয়েছিল, তারা ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেবে। ১০ টাকা কেজি দরে চাল খেতে পারেন এখন? না, ৭০ টাকা কেজি মোটা চাল এখন। এখন পত্রিকায় দেখলাম, মিহি চাল যেটা সেটা ১৭০ টাকা! ডালের দাম বেড়েছে, তেলের দাম বেড়েছে। ডিম সাধারণ মানুষের প্রোটিনের উৎস, সেটার দাম তিন-চারগুণ বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে এক লাফে ৬০ টাকা। মানুষ কোথায় যাবে? এরকম একটা অবস্থা এই সরকার তৈরি করেছে। আর তাদের কথার বাগাড়ম্বর যে এখন নাকি দেশ সবচেয়ে ভালো আছে। তারাই নাকি আসলে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়। আরে উন্নয়ন ধুয়ে খাবে মানুষ, যদি ভাত খেতে না পারে? আর কোথায় উন্নয়ন? উন্নয়ন হলে তো কর্মসংস্থান থাকতো। বলেছিল ঘরে ঘরে চাকরি দেবে, চাকরি পায়? সরকারি হিসেব মতে প্রায় তিন কোটি বেকার।’

‘নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে দিয়েছে সরকার’ এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, গত দুটো নির্বাচন করেছে, আপনারা দেখেছেন, যারা একটিতে কোনো ভোটই হয় নাই, ১৫৪ জনকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করিয়ে তারা সরকার গঠন করেছিল। ২০১৮ এর যে নির্বাচন, সে নির্বাচনে আগের রাতেই তারা সব ভোট দিয়ে চলে গেছে। আর ভোটের দিন যেটুকু বাকি ছিল, সেটুকু করে, কাউকে কাছেও ভিড়তে দেয়নি। তার আগে পুলিশকে ব্যবহার করে তারা এমন একটা অবস্থার তৈরি করেছিল, আমাদের নেতা-কর্মীদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার মতো অবস্থাও ছিল না।

সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এম এ জাহিদ, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা তাহসীনা রুশদী লুনা, খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, ড. এনামুল হক চৌধুরী, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ইমরান আহমদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকী ও সদস্যসচিব মিফতাহ সিদ্দিকী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর