জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ফয়সাল আহমেদ শান্তর মা বলেন, ‘শান্ত ছোটবেলা থেকেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করত। ন্যায় এর প্রশ্নে থাকত দ্বিধাহীন। শান্ত আর আমাদের মাঝে নেই। তার হত্যার বিচার হোক এই দেশে।’ শহীদ জামালের স্ত্রী বলেন, ‘শহীদ পরিবার হিসেবে আমাদের যেভাবে মূল্যায়ন করার কথা তা হয়নি।’ শহীদ শহীদুলের মা বলেন, ‘শহীদুল মরে গিয়ে প্রমাণ করে গেছে দেশে আজ লক্ষ শহীদুল। এই লক্ষ শহীদুল নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে।’ শহীদ ইউসুফের মা বলেন, ‘যতক্ষণ ইউসুফের খুনির বিচার হচ্ছে না, ততক্ষণ দেশ স্বাধীন নয়।’
এভাবে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদরে মা ও পরিবারের স্বজনরা অকপটে বললেন নিজেদের না বলা মনের কথা। সোমবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের জামালখান মোড়ে ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজ এর উদ্যোগে আয়োজিত ‘শহীদের মায়ের গল্প’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে জুলাইয়ের বীরত্বগাঁথার পাশাপাশি নতুন বাংলাদেশে শহীদ পরিবারদের চাওয়া-পাওয়ার কথা তুলে ধরেন। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে আন্দোলনের সম্মুখভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলনের দিনগুলোর গল্প তুলে ধরেন। এরপর একে একে শহীদদের মায়েরা ও পরিবারের সদস্যরা আন্দোলনের সময়ের বিভীষিকার কথা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাব্বির ইকবাল। ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজ এর পরিচালক সাইদ খান সাগরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিস সভায় বক্তব্য রাখেন তাহাসিন বি চৌধুরী, রিনভী নুসরাত প্রাপ্তি, হিমাদ্রি দে, আবু নাছের আলিফ, ইসলাম জিশাদ প্রমুখ। এ সময় শহীদদের মায়েদের লাল-সবুজ রঙের উত্তরী পড়িয়ে দেন ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজ এর সহকারী পরিচালক প্রাপ্তি, সম্মাননা তুলে দেন প্রধান অতিথি। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে আয়োজন করা হয় মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই আন্দোলনের নিরিখে বিভিন্ন প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর। এ সময় পুরো জামাল খান মোড় জুড়ে দর্শনার্থীর ভিড় তৈরি হয়।
প্রধান অতিথি জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাব্বির ইকবাল বলেন, ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজ ইতোমধ্যেই জুলাইকে ঘিরে যত উদ্যোগ হাতে নিয়েছে সবই প্রশংসার যোগ্য। চট্টগ্রামে এই অভ্যুত্থানের স্মৃতি ধরে রাখতে তাদের অবদান একদিন মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। চট্টগ্রামের শহীদদের তারা নতুন করে মানুষের সামনে পরিচয় করিয়ে দিলো।
সভাপতির বক্তব্যে ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজের পরিচালক সাইদ খান সাগর বলেন, আমাদের সাতচল্লিশ, একাত্তর এবং চব্বিশ এক সূত্রে গাঁথা। একাত্তরকে বাদ দিয়ে চব্বিশ হয় না, তেমনই একাত্তরকে স্বীকার করলে চব্বিশকেও স্বীকার করতে হবে। আমরা একাত্তরের বিজয় উদযাপনের সঙ্গে সঙ্গে চব্বিশের বিজয় যাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে তাদের পরিবারের গল্প শুনতে চেয়েছি। শহীদদের চিনতে তাদের মায়েদের চেয়ে আর বড় কে বা থাকতে পারে। চব্বিশকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে চব্বিশের যোদ্ধাদের ধারণ করতে হবে।
বিডি প্রতিদিন/এএম