রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ওয়াহিদা সিফাত হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। আজ বুধবার সকাল ১১টার দিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির উপ-পরিদর্শক আহমদ আলী এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে সিফাতের স্বামী মো. পিসলী, শ্বশুর মোহাম্মদ হোসেন রমজান ও শাশুড়ি নাজমুন নাহার নাজলীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির উপ-পরিদর্শক আহমদ আলী জানান, গত বছরের ২৯ মার্চ সিফাতকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করা হয়। এ ঘটনায় সিফাতের চাচা মিজানুর রহমান খন্দকার বাদী হয়ে মামলা করেন। পুলিশ এক বছর তদন্ত শেষে ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় আজ অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হলো।
সিফাত হত্যামামলার বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছরের ৪ জুন রাজশাহী চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক জয়ন্ত রাণী দাশ সিফাতের লাশ কবর থেকে তুলে পুনরায় ময়না তদন্তের আদেশ দেন। আদালত রংপুর মহানগরীর মুন্সিপাড়া কবরস্থানে দাফন করা সিফাতের লাশ উত্তোলন করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, রংপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সমন্বয়ে কমিটি করে পুনরায় ময়নাতদন্তের আদেশ দেন। আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে গত বছরের ২১ জুন রংপুরের নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে পুলিশ কবরস্থান থেকে সিফাতের লাশ উত্তোলন করে। পরদিন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের গঠিত তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড ময়না তদন্ত সম্পন্ন করেন। বোর্ডের তিন সদস্যের মধ্যে ছিলেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলাম ও মেডিকেল অফিসার ডা. হরেন্দ্রনাথ গোস্বামী।
সিফাতের দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত বোর্ডের প্রধান ও রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. রফিকুল ইসলাম তার রিপোর্টে উল্লেখ করেন, ‘লাশের মাথার পেছনে ডান দিক থেকে বাম দিক পর্যন্ত বড় ধরনের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে এবং মস্তিস্কে রক্ত জমাট বেঁধেছিল। এর ফলেই তার মৃত্যু হয়েছে। এটি একটি হত্যাকাণ্ড।’
উল্লেখ্য, গত ২৯ মার্চ রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত অবস্থায় নিয়ে আসা হয় গৃহবধূ ওয়াহিদা সিফাতকে। পাঁচ বছর আগে সিফাত ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন মোহাম্মদ হোসেন রমজানের ছেলে মো. পিসলীকে। বেকার পিসলী ব্যবসা করার জন্য সিফাতের বাবার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা যৌতুক এনে দিতে তাকে চাপ দেয়। এতে সিফাত রাজি না হওয়ায় দিনের পর দিন তার ওপর চলতে থাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। নগরীর রাজপাড়া থানায় দায়ের করা মামলায় এমনই অভিযোগ করেছিলেন ওয়াহিদা সিফাতের চাচা মিজানুর রহমান খন্দকার। মামলার পর পুলিশ সিফাতের স্বামী মো. পিসলীকে আটক করে। পলাতক সিফাতের শ্বশুর মোহাম্মদ হোসেন রমজান ও শাশুড়ি নাজমুন নাহার নাজলী পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন।
বিডি-প্রতিদিন/ ২৩ মার্চ, ২০১৬/ রশিদা