বরিশালের বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপনের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এই প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থের সিকিভাগও খরচ না করে নিম্নমানের সামগ্রী স্থাপন করে এই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ জনপ্রতিনিধিদের। অনিয়মের কারণে সৌর বিদ্যুৎ স্থাপন প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
বরিশাল জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা প্রকাশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেছেন, সৌর বিদ্যুৎ স্থাপন প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ না দিয়ে চাল দেয়ায় কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠান ‘ইটকল’ বরাদ্দকৃত চাল নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে পারেনি। তাই পুরনের জন্য কাজে অনিয়ম করেছে ইটকল।
২০১৫-১৬ অর্থ বছরে গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষন (টিআর) এবং গ্রামীন অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) কর্মসূচীর আওতায় বরিশাল সদর উপজেলায় সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপনের দায়িত্ব পায় ‘ইটকল’ নামে একটি সংস্থা। ওই সংস্থা প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলায় সাব ঠিকাদার নিয়োগ করেছে। নিযুক্ত সাব ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো সৌর বিদ্যুত স্থাপনের নামে লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করেছে। বরিশাল সদর উপজেলায় ইটকলের সাব ঠিকাদার হিসেবে কাজ করে ‘গ্রীন ব্রাইট এনার্জি ফাউন্ডেশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
সদর উপজেলা পরিষদ সূত্র জানায়, সদর উপজেলায় ১৮৪টি প্রতিষ্ঠানে সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ৫৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা (সম মূল্যের চাল)।
সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শাহিন বলেন, সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের চরহোগলা চৌধুরী বাড়ি জামে মসজিদে ৮৭ হাজার ৫০০ টাকার প্রকল্পের সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপন কাজেও ১০ হাজার টাকাও ব্যয় হয়নি। নিম্নমানের সামগ্রী স্থাপন করে সব টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। বিষয়টি তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।
সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আরিফুর রহমান মুন্না জানান, তিনি ইউনিয়ন পরিষদ, স্কুল এবং মসজিদে সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপনের জন্য ১০টি প্রকল্প দিয়েছিলেন। এর বিপরীতে ইউনিয়ন পরিষদে ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকার প্রকল্প দেয়া হয়। কিন্তু ইটকল ও ব্রাইট নামে দুটি প্রতিষ্ঠান যে মালামাল দিয়েছে তা একেবারে নিম্নমানের। এতে সর্বাধিক দেড় লাখ টাকা খরচ হতে পারে। বিষয়টি তিনি সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এবং সাব ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ব্রাইটের ম্যানেজারকে অবহিত করলেও তারা সৌর বিদ্যুৎ প্যানেলের কোন পরিবর্তন করেনি।
জাগুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আলম চৌধুরী জানান, তার ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপনের জন্য ৮৪ হাজার টাকার প্রকল্প পাশ হয়। এই বরাদ্দ দিয়ে ৩০০ ওয়াট বিদ্যুতের সৌর প্যানেল স্থাপন করা সম্ভব। কিন্ত ওই প্রতিষ্ঠান যে প্যানেল স্থাপন করেছে তাতে সর্বোচ্চ ১০০ ওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। একই অবস্থা জাগুয়ার খয়েরদিয়া জসিম তালুকদার বাড়ি জামে মসজিদে। সেখানে ৮৭ হাজার ৫০০ টাকার প্রকল্পে ১০০ ওয়াটের বেশী বিদ্যুৎ পাওয়া যাবেনা। এই দুটি প্রতিষ্ঠানে যে সৌর প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে তাতে ২০ হাজার টাকার বেশী খরচ হতে পারেনা।
সদর উপজেলার টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়নের বিশরাদ গ্রামের মেছের আলী সিকদার বাড়ি জামে মসজিদে সৌর বিদ্যুত প্যানেল স্থাপনের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু ওই মসজিদে এখন পর্যন্ত কাজই শুরু হয়নি। টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ড হুমায়ুন কবির কামাল বলেন, মসজিদটির টিনের চালা ও বেড়া নেই। তাই সভাপতি মাওলানা মো. আলতাফ সৌর প্যানেলটি তার কাছে রেখেছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে সাব ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ব্রাইট গ্রীন এনার্জি ফাউন্ডেশনের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মো. ইব্রাহিম উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) উপর পুরো দায় চাপিয়ে বলেন, তার (পিআইও) দিক নির্দেশনায় তারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছেন। এখানে কোন অনিয়ম হয়নি বলে তার দাবি।
সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মুজাহিদুল ইসলাম জানান, বিগত অর্থবছরেগুলোতে জনপ্রতিনিধিরা নিজেরাই সৌর বিদ্যুৎ স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতেন। আগামী ৫ বছরের জন্য সারা দেশে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ পেয়েছে ইটকল। স্থানীয় জনপ্রতিধিদের দেওয়া চাহিদা অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ করা হচ্ছে। এতে কোন অনিয়ম হয়নি।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা প্রকাশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, চাল বরাদ্দ দেয়ায় ঘাটতি পূরনের জন্য নিম্নমানের সামগ্রী স্থাপন করেছে ইটকল। ইটকল সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল সরবরহের নামে দ্বিগুন অর্থ নিয়েছে। জনপ্রতিনিধিরা দ্বিগুন দামে ইটকলের কাছ থেকে সৌর প্যানেল নিতে চাচ্ছেন না। এ কারণে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ায় উপজেলায় ৮৬ লাখ টাকার প্রকল্পের কাজই শুরু হয়নি। সেই বরাদ্দ ফেরত যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। চাল বরাদ্দ দেয়ায় অনিয়মের কারণে আগামীতে এই প্রকল্পের অনুকূলে নগদ অর্থ বরাদ্দের চিন্তাভাবনা চলছে বলে তিনি জানান।
বিডি প্রতিদিন/২৭ জানুয়ারি ২০১৭/হিমেল