এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নগরবাসীকে ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষা দিতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী বছরব্যাপী মশকনিধন কার্যক্রমের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ডিএনসিসি। এরই অংশ হিসেবে কয়েকটি পর্যায়ে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযানের (চিরুনি অভিযান) সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
গত ৬-১৫ জুন প্রথম ও ৪-১৪ জুলাই দ্বিতীয় পর্যায়ের সফল চিরুনি অভিযান শেষে ৮ আগস্ট থেকে তৃতীয় পর্যায়ের ১০ দিনব্যাপী চিরুনি অভিযান শুরু হয়েছে। চিরুনি অভিযান চলাকালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ডিএনসিসি কর্তৃক জনসাধারণের জন্য বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য গত ৯ আগস্টে সংগৃহীত ১০৩ টি নমুনা পরীক্ষা করে ৩ জনের শরীরে ডেঙ্গু রোগ শনাক্ত করা হয় এবং ১০০ জনের রিপোর্ট নেগেটিভ পাওয়া যায়।তৃতীয় পর্যায়ের ১০ দিনব্যাপী বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযানের তৃতীয় দিনে আজও সকাল ১০টা থেকে ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডে একযোগে বিশেষ এই পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালিত হয়েছে। আজ মোট ১৩ হাজার ৬৫৬ টি বাড়ি, স্থাপনা, নির্মাণাধীন ভবন পরিদর্শন করে মোট ৭৫ টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এছাড়া ৭ হাজার ৯৫৯ টি বাড়ি/স্থাপনায় এডিস মশা বংশবিস্তার উপযোগী পরিবেশ পাওয়া গেলে সেসকল স্থানে কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়েছে। এসময় ২৬ টি মামলায় মোট ৬২ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয় এবং অন্যান্য বাড়ি ও স্থাপনার মালিককে সতর্ক করা হয়েছে।
আজ উত্তরা অঞ্চল-১ এর অধীনে মোট ১ হাজার ২২৪টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ১০টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেলে ৩টি মামলায় মোট ১৩ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এছাড়া ১ হাজার ২৩টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
মিরপুর অঞ্চল-২ এর অধীনে মোট ২ হাজার ৮৩৮টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ১টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায় এবং ৩৫০ টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। এসময়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বাসার বাহিরে মাস্ক ব্যবহার না করার অপরাধে ১৯টি মামলায় মোট ১ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে এবং করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
মহাখালী-অঞ্চল-৩ এর অধীনে মোট ১ হাজার ৭০৫ টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ৩৩টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায় এবং ১ হাজার ৬৫টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। এসময়ে ২টি মামলায় মোট ৪২ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
মিরপুর-১০, অঞ্চল-৪ এর অধীনে মোট ১ হাজার ৩৭৭টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ৮টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়, তবে কোন জরিমানা করা হয়নি। এছাড়া ৭১৪টি বাড়ি/স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
কারওয়ান বাজার, অঞ্চল-৫ এর অধীনে মোট ২ হাজার ৩৯৮টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ৯টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এছাড়া ১ হাজার ৯৩১টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
হরিরামপুর, অঞ্চল-৬ এর অধীনে মোট ১ হাজার ১৫০ টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ৬টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেলে ২টি মামলায় মোট ৫ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এছাড়া ৮১৪ টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
দক্ষিণখান অঞ্চল-৭ এর অধীনে মোট ৯৬৬টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ৫ টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এছাড়া ৭৪২টি বাড়ি/স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
উত্তরখান অঞ্চল-৮ এর অধীনে মোট ৭৩৪ টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ১টি স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এছাড়া ৪৩৫ টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
ভাটারা অঞ্চল-৯ এর অধীনে মোট ৪৮৯ টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ২ টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এছাড়া ২৭৮ টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
সাঁতারকুল অঞ্চল-১০ এর অধীনে মোট ৭৭৫টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে কোন এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়নি। তবে ৬০৭ টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। উল্লিখিত সকল সম্ভাব্য এডিস মশার প্রজনন স্থলে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনাপূর্বক কীটনাশক ছিটানো হয়েছে এবং জনসাধারণকে এবিষয়ে পরবর্তীতে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
তৃতীয় ধাপে চিরুনি অভিযান পরিচালনার লক্ষ্যে এবারও প্রতিটি ওয়ার্ডকে ১০টি সেক্টরে ভাগ করে প্রতিটি সেক্টরকে ১০টি সাবসেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিদিন প্রতিটি ওয়ার্ডের ১টি সেক্টরে অর্থ্যাৎ ১০টি সাবসেক্টরে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি ও আধুনিক মশক নিধন ব্যবস্থাপনার অংশ হিসাবে বিগতবারের ন্যায় এবারও এডিসের লার্ভা প্রাপ্তির স্থানসমূহ এবং প্রজনন উপযোগী পরিবেশসমূহের তথ্য অ্যাপে সংরক্ষণ করে ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে।
তৃতীয় পর্যায়ের অভিযানের এই তিন দিনে মোট ৩৯ হাজার ৭৭৬টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ২৪৪ টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায় এবং তিন দিনে মোট ২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নগরবাসীকে ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষা দিতে ডিএনসিসির চিরুনি অভিযান আগামীকালও অব্যাহত থাকবে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন