বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৫ শতাংশ যুবা। এই যুবাদের বয়স ১৮-৩৫ বছরের মধ্যে। বিশাল এই জনগোষ্ঠীর ওপর নির্ভর করছে দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ডে যুবাদের অংশগ্রহণের বিষয়টিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু এ বিষয়ে বাংলাদেশে এখনো বেশ ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে নেতৃত্ব এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তরুণদের অংশগ্রহণকে কখনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠ ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পিএসটিসির যৌথ আয়োজনে ‘বৈশ্বিক কর্মযজ্ঞে যুবাদের সংযুক্তি’ শীর্ষক এক অনলাইন আলোচনাসভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
পিএসটিসির নির্বাহী পরিচালক ড. নূর মোহাম্মদের সঞ্চালনায় অনলাইন আলোচনাসভায় স্বাগত বক্তব্য দেন কালের কণ্ঠ সম্পাদক ও ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের পরিচালক কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আখতারুজ্জামান খান কবির। বিশেষ অতিথি ছিলেন মাশফিকা জামান সাটিয়ার।ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘আমরা যদি বাংলাদেশের দিকে তাকাই, একটি জিনিস লক্ষ্য করি, এ দেশের যা কিছু গৌরবের ইতিহাস তার প্রতিটি যুব শ্রেণির মাধ্যমে হয়েছিল। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন শুরু করেছিল যুবসমাজ। তারপর ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান। এর আগের আন্দোলনগুলোতেও যুব শ্রেণির ভূমিকাটাই বেশি ছিল। জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস রচিত হয়েছিল ১৯৭১ সালে। সেই অর্জনের বেশির ভাগ দায়িত্ব ছিল যুবসমাজের ওপর। একটি রাষ্ট্রের যুবকরা যত বেশি শিক্ষিত ও কর্মে দক্ষ হয়, সেই দেশ তত এগিয়ে যায়।’
আখতারুজ্জামান খান কবির বলেন, ‘একজন শিশুর মননে, শিক্ষায় ও আচার-আচরণে ইতিবাচক বিষয়গুলো বপন করতে না পারলে পরিবর্তন আসবে না। এক দেশে বসবাস করলেও তাদের সংস্কৃতি ভিন্ন হওয়ায় হঠাৎ করে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। সেই বিষয়গুলো মাথায় নিয়ে সরকারের অনেক মন্ত্রণালয় কাজ করছে। ন্যাশনাল ইয়ুথ কাউন্সিল খুব শিগগির গঠিত হবে।’
পিএসটিসির নির্বাহী পরিচালক ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, ২০১১ সালের আদমশুমারি তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৩০ লাখের বেশি। এই জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশ যুবা। বিশাল এই জনগোষ্ঠীকে আমরা কি বোঝা হিসেবে নেব, নাকি সম্পদ হিসেবে রূপান্তর করব-এটিই হলো মুখ্য বিষয়। উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় এই যুবাদের সম্পৃক্ত করতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলেন, ‘যুবাদের কিভাবে আমরা লোকাল ও বৈশ্বিক পর্যায়ে নিতে পারি, নীতি এবং কর্মকৌশল প্রণয়নের ক্ষেত্রে আমাদের তা ঠিক করতে হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অভীষ্ট লক্ষ্যগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে আমাদের যুবাদের নীতি সাজানো উচিত।’
নেদারল্যান্ডস এমবাসির সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজার মাশফিকা জামান সাটিয়ার বলেন, ‘নেতৃত্ব এবং নীতি প্রণয়নে তরুণদের আমরা কেন অন্তর্ভুক্ত করতে পারছি না? আর তরুণরাই বা কেন অংশগ্রহণ করতে পারছে না? তরুণরা কী চায় সেটি জানা খুব জরুরি। এসব বিষয় নিয়ে আমাদের আরো ভাবতে হবে।’
ইউএনভি বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আক্তার উদ্দিন বলেন, ‘যুবরা হচ্ছে একটি দেশের বড় শক্তি। শুধু জাতীয়ভাবে নয়, আন্তর্জাতিকভাবে কিভাবে যুবদের কাজে লাগানো যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে আমাদের।’
অনলাইন আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে সিরাক বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এস এম সৈকত, ইউবিআর প্রোগ্রাম ম্যানেজার কানিজ গোফরানী কোরায়শী, পিএসটিসির নবীন পেশাজীবী নাজমুল কবির আল মেহমুদ, সাবা তিনি শিমু, কামরুন্নাহার কনা, তানভীর ইসলাম, নীলিমা নাসরিন প্রমুখ অংশ নেন।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন