১৪ আগস্ট, ২০২০ ১৯:০২

ত্যাগী আয়েশার শেষ নিঃশ্বাসটিও ছিল ত্যাগের

রোমান চৌধুরী সমুন, নারায়ণগঞ্জ

ত্যাগী আয়েশার শেষ নিঃশ্বাসটিও ছিল ত্যাগের

২০০৬ সালে রাজপথে পুলিশের হাতে বিবস্ত্র আয়েশা (বামের ছবিতে) ও চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু শয্যায় (ডানে)।

আওয়ামী লীগের ত্যাগী তৃনমূল কর্মী ছিলেন আয়েশা আক্তার। রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের হাতে বিবস্ত্র হন আয়েশা। রাজপথের তৃনমূল কর্মী আয়েশা ত্যাগী ছিলেন প্রথম থেকেই। কিন্তু ত্যাগী কর্মীর আয়েশা, অনাদর ও অবহেলায় শেষ নিঃশ্বাসটি যেন ছিল ত্যাগের। 

স্ত্রীর আয়েশার বিবস্ত্র হওয়ার সেই ছবি ভাইরাল গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পরেই স্বামীও তালাক দিয়েছিল তাকে। কিন্তু দমে যাননি তিনি। তবে যে দলের হয়ে আয়েশা আক্তার তার জীবনের বেশি সময় কাটিয়েছেন সেই দল আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়। তবে তার জন্য কিছুই করেনি। চিকিৎসার অভাবে অবশেষে মারা গেলেন আওয়ামী লীগের সেই নিবেদিত কর্মী আয়েশা আক্তার। 

২০০৬ সালে রাজপথে বিবস্ত্র হওয়া তরুণীর ছবিটি সেই সময় আলোচিত হয়েছিল। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের চানমারি বাবার বাসায় মারা গেছেন তিনি। রাত ১০টার দিকে মাসদাইর কেন্দ্রীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

আয়েশা আক্তারের ভাই মোক্তার হোসেন জানান, ‘সোমবার শারীরিক যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল তার বোন আয়েশা। বলতে লাাগলো, ভাই আমারে নিয়ে হাসপাতালে চল। যন্ত্রণায় কান্না করতেছিল। পরে তাকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে যাই। ডাক্তার বললো তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যেতে। কিন্তু আমি কিভাবে নিব, আমার কাছে কোনো টাকা ছিল না। একসময় বোনকে যারা হেল্প করতো তাদের অনেককে ফোন দেই, কেউই আমার ফোন ধরেনি।’

চোখের পানি মুছতে মুছতে মোক্তার হোসেন জানান, ‘টাকার অভাবে বোনের চিকিৎসা না করাতে পেরে বাসায় নিয়ে আসি। মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে আমার বোন আমাদের ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে যায়।’

তিনি জানান, ‘আমার আরেক দুলাভাই এবং একজন অ্যাডভোকেট আমার মৃত বোনের দাফন কাপড়ের খরচ বহন করে।’

মোক্তার হোসেন জানান, ‘আমার বোন রাজনীতি করতো তাই তার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গেছে। তার একমাত্র কন্যা সন্তান তৃষাকে নিয়ে আমাদের কাছে ছিল। আমাদের আটজনের সংসার। আমি আগে ঘুরে ঘুরে পান-সিগারেট বিক্রি করতাম। করোনার কারণে এখন আর করতে পারি না।’

আয়েশার মা রহিমা বেগম জানান, ‘আওয়ামী লীগের রাজনীতি কইরা মাইয়্যা মাইর খাইছে। জামাইয়ে ছাইরা দিছে। তিন বছর অসুস্থ হয়ে ভুগে মারা গেছে। তার চিকিৎসা হয় নাই টাকার অভাবে। আমার মেয়ে কিছুই পায় নাই।’

আয়েশার বড় বোন ময়না আক্তার জানান, শেষ সময় আয়েশার বাঁচার জন্য খুবই আকুতি ছিল। কিন্তু টাকার অভাবে আমরা চিকিৎসা করাতে পারিনি। আওয়ামী লীগের জন্য আমার বোন অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে।’

পরিবারের অভিযোগ, ২০০৬ সালে পুলিশি নির্যাতনে মাথায় আঘাত পান আয়েশা। সেই থেকে প্রায়ই যন্ত্রণায় ছটপট করতেন। এছাড়া কিডনি সমস্যা, চোখে ছানি পড়েছিল তার।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের তৃনমূল কর্মী নেতারা আয়েশার এই মৃত্যু নিয়ে বলেন, কষ্ট হয় যারা আওয়ামী লীগ করেছে শুধু দলকে ভালোবাসে। তারা কখনো টাকা উপার্জনের দিকে তাকায়নি। ত্যাগী নেতারা এমনই হয়। আর হাইব্রীডরা আজ আওয়ামী লীগের ঘাড়ে চেপে বসে ফল খাচ্ছে। আর আয়েশার মতো কর্মীরা মরছে ধুকে ধুকে।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর