এক দম্পতির ছিনতাই হওয়া ঘড়ি ও ব্যাগ উদ্ধারে নেমে ছিনতাইয়ে জড়িত ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাংয়ের সন্ধান পেয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এই গ্যাংয়ের নাম ‘ভাইব্বা ল কিং’। সোমবার (২২ নভেম্বর) রাতে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যানে ছিনতাইয়ের এই ঘটনায় ফোন পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী এলাকায় অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় এই গ্যাংয়ের চারজনকে। উদ্ধার করা হয় ছিনতাই হওয়া ঘড়ি ও ব্যাগ।
এরপরই জানা যায় প্রায় তিন বছর ধরে মোহাম্মদপুরে চুরি-ছিনতাই ও চাঁদাবাজি করে আসছে তারা। এই গ্রুপের আরও ১৫-২০ জন সদস্য রয়েছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে মধ্যরাতে গ্যাংয়ের প্রধানসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়।
র্যাব জানায়, এ গ্রুপের সদস্যরা নিজেদের কিং ভাবে। তারা অপরাধ কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজেদের কিং হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়। এই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের। স্কুলের গণ্ডি পার হতে না পারলেও নিজেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক ভাষায় পারদর্শী হিসেবে পরিচয় দিত। তারা পেশাগতভাবে কেউ লেগুনা, কেউ অটোচালক। আবার কেউ দোকানের কর্মচারী ও নির্মাণকর্মী। প্রাথমিকভাবে কারও সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তবে তাদের কিছু পৃষ্ঠপোষকের তথ্য পাওয়া গেছে, শিগগির তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করে র্যাব।
মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে ছিনতাই-চুরি বেড়ে যাওয়ার কিছু হটস্পট চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান, বসিলা ও আশপাশের এলাকায় র্যাবের গোয়েন্দা কার্যক্রম ও টহল জোরদার করা হয়। সোমবার (২২ নভেম্বর) রাতে র্যাব-২ কন্ট্রোল রুমে ফোন আসে ছিনতাইয়ের। ফোন পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় র্যাবের টহল দল।
পরে ভুক্তভোগীর তথ্যের ভিত্তিতে রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থান এলাকায় অভিযান চালিয়ে মো. নাঈম (১৪), মো. রুমান (১৮), মো. তামিম খাঁন (১৪) ও মো. সজীবকে (১৭) আটক করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র, খেলনা পিস্তল ও মাদক উদ্ধার করা হয়।
পরে তাদের তথ্যের ভিত্তিতে মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যানের সাতমসজিদ হাউজিং এলাকায় অভিযান চালিয়ে ‘ভাইব্বা ল কিং’র নেতা শরীফ ওরফে মোহন (১৮), সদস্য মো. উদয় (১৯), মো. শাকিল (১৯), মো. নয়ন (১৮) ও মো. জাহিদকে (১৮) আটক করা হয়।
এসময় তাদের কাছ থেকে লোহার তৈরি চারটি ছুরি, একটি স্টিলের হাতলযুক্ত কুঠার, ৫০ পুরিয়া গাঁজা, দুটি স্টিলের তৈরি ছোরা, একটি স্টিলের তৈরি হোল্ডিং চাকু, একটি প্লাস্টিকের পিস্তল, ৬৫ পিস ইয়াবা ও ইয়াবা খাওয়ার সরঞ্জামাদি এবং তিনটি মোবাইল জব্দ করা হয়।
এই কিশোর গ্যাংটি মোহাম্মদপুর এলাকায় চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, চুরি-ডাকাতি আধিপত্য বিস্তার করে আসছিল। এছাড়া ভাড়ায় বিভিন্ন স্থানে হুমকি ও মারপিটে অংশগ্রহণ করে তারা। ইভটিজিংসহ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল