প্রতিবছর বাজেট অধিবেশন যে আয়-ব্যয়ের হিসাব উপস্থাপন করা হয় সেখানে সরকারের আয়ের অন্যতম একটি মাধ্যম সরকারের বিভিন্ন উৎস থেকে রাজস্ব আয়। সাধারণত যে সব ভূমি থেকে নিয়মিত ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করা হয় না, সেই সব ভূমি সায়রাত মহলের অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে বালুমহাল, জলমহাল, চিংড়ি মহাল, বাঁশ মহাল, হাটবাজার অন্যতম। সরকারি স্বার্থযুক্ত এ সকল সম্পত্তি থেকে রাজস্ব আদায় কিংবা ইজারা প্রদানের পদ্ধতি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত।
সম্প্রতি রাজশাহী জেলার পবা উপজেলায় বড়গাছি হাটে একসনা দোকান বন্দোবস্ত প্রদান করা হয়। জানা যায় যে পবা উপজেলার ২১টি হাটের মধ্যে বড়গাছি অন্যতম একটি হাট, যা হাটবাজার পেরীফেরিভুক্ত। বড়গাছি হাটে মোট জমির পরিমাণ এক একর তিন শতক। বিগত ২০১৪ সালে রাজশাহীর তৎকালীন জেলা প্রশাসক কর্তৃক অনুমোদিত পেরীফেরি নকশায় হাটের সীমানা, সরকারি সেড, পাকা রাস্তা, তোহা বাজার, চান্দিনা ভিটা, চলমান রাস্তা উল্লেখ করা আছে। কিন্তু নকশায় উল্লেখিত সেডের তুলনায় বিদ্যমান সেডের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি, তোহা বাজার বা ফাঁকা স্থান বলতে কিছু ছিল না। সরকারি নিয়ম নীতি ভঙ্গ করে সম্পূর্ণ জায়গা অবৈধ দখলে রেখে সরকারকে কোন রাজস্ব প্রদান না করে যে যার মত ভোগ করছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি এই হাটের কোন দোকানদার স্বাধীনতার পর বিগত ৫২ বছরে সরকারি কোষাগারে কোন প্রকার অর্থ প্রদান করেননি। এছাড়াও হাটের এক পার্শ্বে যেখানে তোহা বাজারের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা আছে, সেখানে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করে 'বউ বাজার' নামকরণ করেছে। এটি নারীদের জন্য নির্ধারণ করা হলেও সেখানে কোন নারী ব্যবসায়ীকে ব্যবসা করতে দেখা যায়নি। হস্তান্তর চুক্তিতে বর্ণিত সব শর্ত ভঙ্গ করেও অবাধে তারা ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল। নিয়ম ভাঙ্গার এক প্রতিযোগিতায় তারা মেতে উঠেছিল। সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল হাট বাজারের অবৈধ দখল মুক্ত করে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার সুযোগ প্রদানের পাশাপাশি সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধিতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বড়গাছী হাটে প্রায় ৭০ জন ব্যবসায়ীকে একসনা বন্দোবস্ত প্রদান করা হয়েছে। যারা নিজ উদ্যোগে নীতিমালা অনুযায়ী আধা পাকা দোকান ঘর নির্মাণ করছে। ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে নতুন করে ড্রেন পায়খানা নলকূপ স্থাপনের কাজ চলছে। নির্মিত আধা পাকা ঘরগুলো একই সাইজের এবং একই রঙের টিন দিয়ে নির্মাণ করায় দৃষ্টি নন্দন দেখাচ্ছে। এমনকি হার্টের যে সকল পুরাতন গাছ ছিল সেগুলো না কেটে দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে সামগ্রিক পরিবেশের ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে।
বড়গাছি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন সাগর বলেন, হাট-বাজারের উন্নয়নকল্পে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় হাটের কর্মপরিবেশ উন্নয়নকল্পে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এক্ষেত্রে সকল ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে তাদের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বড়গাছি বাজার কমিটির সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, বর্তমান বড়গাছী হাট-বাজারের পরিবেশের যে উন্নয়ন করা হয়েছে তা ব্যবসায়ী বান্ধব। খোলা বাজারের জন্য যে জায়গা রাখা হয়েছে, তা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসার জন্য সুবিধাজনক হবে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) পবা অভিজিত সরকার জানান, সরকারি স্বার্থযুক্ত সম্পত্তি সরকারি হেফাজতে রাখা সরকারি কর্মচারীদের অন্যতম দায়িত্ব। সে উদ্দেশ্যে পবা উপজেলার সকল খাস জমি, জলমহাল, হাট-বাজারের জায়গা সরকারি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এই সকল জায়গা থেকে জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশনা ও সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী অবৈধ দখলদার মুক্ত করে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের কাছে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।
পবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত বলেন, হাট-বাজারের সম্পত্তি সরকারি খাস-সম্পত্তি, এটা দেখভালের দায়িত্ব সরকারের। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী বড়গাছী হাটে একসনা বন্দোবস্ত প্রদান করা হয়েছে এবং ব্যবসায়ীদের উন্নত কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে ড্রেন, টয়লেট ও সংযোগ সড়ক স্থাপন করা হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আনিসুল ইসলাম বলেন, হাট-বাজারের নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী সকল হাটের পেরীফেরিকরণ সহ একসনা বন্দোবস্ত প্রদানের কার্যক্রম গ্ৰহণ করা হয়েছে। প্রকৃত ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসা পরিচালনা সহায়তা করণে প্রতিটি হাটে ৫০ ভাগ ফাঁকা জায়গা রাখা হচ্ছে। বড়গাছী হাট-বাজারে ব্যবসায়ী বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসন কাজ করছে।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান, সরকারি জায়গা থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। সম্প্রতি মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীনদের ঘর প্রদান কার্যক্রমে খাসজমি হতে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা হয়েছে। জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারেও এ ধরনের কার্যক্রম গ্ৰহণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে প্রকৃত ব্যবসায়ীসহ সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। এর মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধিসহ সরকারি সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত হবে।
জানা যায় এ উদ্যোগের ফলে বড়গাছি হাট থেকে প্রতিবছর প্রায় ৫ লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় হবে। যা সরাসরি সরকারি কোষাগারে জমা হবে। এছাড়াও পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার অন্তর্গত 'সিন্দুর কুসুম্বী হাট', হুজুরীপাড়া ইউনিয়নের 'দারুশা হাট' থেকেও সরকার কোন রাজস্ব পায় না, যদিও হাট দুটি পেরীফেরি করা আছে। সকল হাট বাজারে সমন্বিতভাবে এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে, সরকারের কোষাগারে বিপুল অর্থের সংস্থান হবে। প্রতিটি হাটে এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের সুবিধার পাশাপাশি সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত