বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভ্যাট বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি

অহেতুক বিতর্ক না করতে নির্দেশনা

মানিক মুনতাসির

নতুন ভ্যাট আইন-২০১২ বাস্তবায়নে সম্মতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ নিয়ে আর কোনো বিরূপ মন্তব্য না করার নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এটি বাস্তবায়ন করার পর যদি কোনো অসঙ্গতি ধরা পড়ে তাহলে প্রয়োজনে আগামী বছর তা সংশোধন করা হবে।

অর্থবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী বিরূপ মন্তব্যের ব্যাপারে ব্যবসায়ী, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের তার উপরোক্ত নির্দেশনা জানাতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে পরামর্শ দিয়েছেন। এর পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী।

সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রী অর্থমন্ত্রীকে বলেছেন, যেহেতু আইনটি অনেক দিন ধরে বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে, এমনকি সঙ্গত কারণে ২০১৭ সালে শেষ মুহূর্তে এসে দুই বছরের জন্য স্থগিতও করা হয়। এরই মধ্যে বিতর্কিত বিষয়গুলোর সমাধান করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী, বহু স্তর ভ্যাটের ব্যবস্থার বিধানও রাখা হয়েছে। বাজেটের আকার বাড়ার সঙ্গে প্রতি বছর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও বাড়াতে হচ্ছে। এ বছর আইনটি বাস্তবায়নের আর কোনো বিকল্প নেই। ফলে কোনো অসঙ্গতি থাকলেও বাস্তবায়নকাল আর পেছানো ঠিক হবে না। সবাইকে আগেভাগে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য দুই বছরের সময়ও দেওয়া হয়েছিল। সে সময় এ নিয়ে যথেষ্ট আলাপ-আলোচনা পর্যালোচনা করা হয়েছে। আর মূল্যস্ফীতিও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। ফলে ভ্যাট আইনটি বাস্তবায়নের এটাই উপযুক্ত সময় বলে মনে করে সরকার।

এ ছাড়া নতুন এই ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (্আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকেরও চাপ রয়েছে। যে ১০টি শর্ত পূরণ সাপেক্ষে প্রায় ১০ বছর পর বিশ্বব্যাংক বাজেট সহায়তায় ফিরেছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নতুন ভ্যাট আইনের বাস্তবায়ন। ফলে আবারও শেষ মুহূর্তে এসে ভ্যাট আইন নিয়ে যেন অহেতুক বিতর্কের সৃষ্টি            না হয় সেদিকে তীক্ষè নজর রাখছে এনবিআর। সূত্র জানায়, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করলে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাবে। এতে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। যা মূল্যস্ফীতির চাপকে উসকে দেবে। এতে নাগরিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে সম্প্রতি এফবিসিসিআই এনবিআরকে চিঠি দেয়। যা প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শে এর প্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী এফবিসিসিআই, বিজিএমইএসহ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে সম্মতি দিয়েছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজেটের আকার বাড়ছে। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও বাড়ছে। ফলে রাজস্ব আদায় বাড়াতে সরকার নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করতে চাইবে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু একই সঙ্গে ভোক্তাদের কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদিও অর্থমন্ত্রী এরই মধ্যে বলেছেন, কোথাও কোনো ভ্যাট বাড়বে না। তবে ভ্যাটের আওতা বাড়বে। করযোগ্য মানুষকে করের আওতায় আনা হবে। বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ অফিসের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এটি একটি পুরনো ইস্যু। দেশ এগোচ্ছে। রাজস্ব বাড়াতে হলে নতুন আইনটি বাস্তবায়ন করা জরুরি। তবে এখানে ব্যবসায়ীসহ ভোক্তাদের দাবি আমলে নিতে হবে। যদিও সরকার এরই মধ্যে আইনটি বাস্তবায়নে অনেক সময় পিছিয়েছে।

সর্বশেষ খবর