মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা
বোর্ডে উত্তরপত্র জালিয়াতি

তদন্তে বেরিয়ে আসছে থলের বিড়াল

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় উচ্চতর গণিত প্রথম পত্রের উত্তরপত্র জালিয়াতির ঘটনা তদন্তে বেরিয়ে আসছে থলের বিড়াল। এ ঘটনায় বোর্ড কর্তৃপক্ষ ১৮ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিলসহ পরবর্তী তিন বছরের জন্য বহিষ্কার করেছে। আর বোর্ডের প্রধান সহকারী গোবিন্দ চন্দ্র পালকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ঘটনায় বোর্ডের আরও অনেকে জড়িত বলে সন্দেহ করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। এদিকে এ ঘটনা অধিক তদন্তের জন্য গত রবিবার বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (বরিশাল) ড. মো. মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. মো. লিয়াকত হোসেন ও বিদ্যালয় পরিদর্শক অধ্যাপক আব্বাস উদ্দিন খান। বোর্ডের কে বা কারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের খুঁজে বের করে পরবর্তী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় উচ্চতর গণিত (প্রথম পত্র) পরীক্ষায় উত্তরপত্র জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ১৮ শিক্ষার্থীকে আগেভাগেই বোর্ডের অসাধু একটি চক্র সাদা উত্তরপত্র সরবরাহ করেছে। তা না হলে তাদের পক্ষে অতিরিক্ত উত্তরপত্র সংগ্রহ করা সম্ভব হতো না। এ ঘটনার সঙ্গে বোর্ডের আর কারা জড়িত তাদেরও খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে। পাশাপাশি ওই পরীক্ষার্থীদের অন্যান্য বিষয়ের উত্তরপত্রও জব্দ করার প্রক্রিয়া চলছে। জানা যায়, গত ১৭ জুলাই চলতি বছরের এইচএসসির ফল প্রকাশিত হয়। তবে বিজ্ঞান বিভাগের ১৮ পরীক্ষার্থীর ফল স্থগিত করে বরিশাল শিক্ষা বোর্ড  কর্তৃপক্ষ। ওই পরীক্ষার্থীদের ফলাফল প্রকাশ না করার কারণ হিসেবে বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানায়, উচ্চতর গণিত প্রথমপত্র বিষয়ে প্রধান পরীক্ষকের তৈরি উত্তরপত্রের সঙ্গে ১৮ পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্র হুবহু মিলে যাওয়ায় তাদের ফল প্রকাশ করা হয়নি। পরবর্তীতে বোর্ডের শৃঙ্খলা কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ওই ১৮টি উত্তরপত্র যাচাই-বাছাইয়ের জন্য বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল আজিমকে প্রধান করে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি দেখতে পায় উচ্চতর গণিতের প্রথমপত্র বিষয়ে ওই ১৮টি খাতায় বিশেষ চিহ্ন দেওয়া ছিল এবং প্রধান পরীক্ষকের উত্তরপত্রের সঙ্গে হুবহু মিল পাওয়া যায়। উত্তরপত্র জালিয়াতির বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় গত ৮ আগস্ট ওই ১৮ পরীক্ষার্থীর এবারের পরীক্ষা বতিলসহ আগামী ৩ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়।

বোর্ডের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এসএসসি কিংবা এইচএসসি পরীক্ষার আগে বোর্ডের প্রশাসনিক শাখা থেকে প্রবেশপত্র, উত্তরপত্র, অতিরিক্ত উত্তরপত্রসহ ২৬ প্রকার সরঞ্জামাদি পরীক্ষা কেন্দ্রে পাঠানো হয়। পরীক্ষা শেষে উত্তরপত্র আসে বোর্ডের পরীক্ষা শাখায়।

বরিশাল বোর্ডের পরীক্ষা শাখায় তিনজন কর্মকর্তাসহ ১৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। পরীক্ষকদের কাছে উত্তরপত্র বিতরণের দায়িত্বে ছিলেন বরখাস্ত হওয়া প্রধান সহকারী গোবিন্দ চন্দ্র পাল। পরীক্ষা শাখার একজন সেকশন অফিসার (এসও) ও উচ্চমান সহকারীর তত্ত্বাবধায়নে পরীক্ষকদের উত্তরপত্র বিতরণের নিয়ম রয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রধান অফিস সহকারী গোবিন্দ চন্দ্র পাল কোনো অনিয়ম করে থাকলে ওই কর্মকর্তাদেরও যোগসাজশ রয়েছে বলে সন্দেহ কর্মকর্তাদের।

এর আগেও বরিশাল বোর্ডে একাধিকবার উত্তরপত্র জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। তবে তখন বিষয়গুলো ধামাচাপা দেওয়া হয়েছিল।

উত্তরপত্র জালিয়াতির বিষয়ে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ইউনুস বলেন, বহিষ্কার হওয়া ১৮ পরীক্ষার্থীকে অবশ্যই বোর্ড থেকে সাদা উত্তরপত্র সরবরাহ করা হয়েছিল। পরীক্ষা শেষে চুরি করে নেওয়া খাতাগুলোই পরীক্ষকের কাছে পৌঁছেছে। ওই ১৮ পরীক্ষার্থীর অনেকেই স্বীকার করেছেন, জালিয়াতি করে নেওয়া উত্তরপত্রগুলোতে তারা নিজেরাই প্রধান পরীক্ষকের নমুনা উত্তরপত্র হুবহু লিখেছে। ১৮ জনের অন্যান্য বিষয়ের খাতাও জব্দ করা হচ্ছে বলে জানান বোর্ড চেয়ারম্যান।

তিনি আরও বলেন, উত্তরপত্র জালিয়াতির রহস্য উদ্ঘাটন করতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। এ ঘটনায় কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেড়িয়ে আসতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।

তদন্ত কমিটির সদস্য বরিশাল বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক অধ্যাপক আব্বাস উদ্দিন খান বলেন, বোর্ড চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। জালিয়াতির সঙ্গে যারা জড়িত কমিটি তাদের সবাইকে চিহ্নিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।

সর্বশেষ খবর