অটোমেটিক সুইং মেশিনে লোকবল ছাড়াই চলছে টি-শার্ট কাটিং ও সেলাই। এভাবে কোথাও তৈরি হচ্ছে জিন্সের প্যান্ট। আবার তৈরি পোশাক আয়রন (ইস্ত্রি) করার কাজটিও হচ্ছে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে। হাতে নয়, মেশিনেই লাগানো হচ্ছে পোশাকের বোতাম বা জিপার। তৈরি এসব পোশাক সামগ্রী প্যাকেজিংয়ের কাজটিও করে দিচ্ছে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র। চমক সৃষ্টিকারী এসব কর্মযজ্ঞ নিয়ে জমেছে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) চার প্রদর্শনী। গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া চার দিনব্যাপী পোশাক খাতের এ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে আনা হয়েছে আধুনিক নানা প্রযুক্তি ও মেশিনারি। সব মিলিয়ে ১০টি হলে ২৪টি দেশের ৪৫০টি প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যসামগ্রী তুলে ধরেছে প্রদর্শনীগুলোয়। এসব যন্ত্রপাতি দেখতে গতকাল ছুটির দিনে হুমড়ি খেয়ে পড়েন স্থানীয় পোশাক ব্যবসায়ীরা। সকাল থেকেই দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে আইসিসিবির প্রতিটি হল। বেলা ৩টার দিকে সরেজমিন মেলা ঘুরে দেখা গেছে, দর্শনার্থীর ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন স্টলগুলোর কর্মীরা। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে প্যাকেজিংসহ পোশাক তৈরির বিভিন্ন ধাপ দেখতে প্রতি স্টলে ভিড় করছেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ। প্রদর্শনীতে এসে দেশি-বিদেশি স্টল ঘুরে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের পোশাক খাতের আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে খোঁজখবরও নিতে দেখা যায় অনেক দর্শনার্থীকে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ব্যাপক আগ্রহ দেখে দারুণভাবে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া দেশি-বিদেশি অংশগ্রহণকারীরা। মেলায় আসা দর্শনার্থীদের ক্যালেন্ডার, মগ, কলম, প্যাডসহ বিভিন্ন উপহার প্রদানের ব্যবস্থাও করেছে নানা প্রতিষ্ঠান।
প্রদর্শনীতে জাপানি বিভিন্ন অটো ও সেমি অটো ইন্ডাস্ট্রিয়াল সুইং মেশিন নিয়ে হাজির হয়েছে ইয়ামাটো সিঙ্গাপুর প্রা. লি.। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি কর্মীকেই ব্যস্ত দেখা গেছে পোশাক তৈরি করে দেখানোর পাশাপাশি দর্শনার্থীদের মেশিনের বিভিন্ন সুবিধা বোঝাতে। ইয়ামাটোর অ্যাসিস্ট্যান্ট টেকনিক্যাল ম্যানেজার শাহিন ফকির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের কিছু মেশিন সম্পূর্ণ অটোমেটিক। কিছু সেমি অটো। এসব মেশিন দিয়ে গার্মেন্ট কারখানায় স্বল্প জনবল দিয়ে দ্রুত নিখুঁতভাবে সেলাই কাজ করা সম্ভব। দর্শনার্থী সমাগম প্রসঙ্গে বলেন, দুপুরের আগে স্টলের ভিতরে দাঁড়ানোর জায়গাই ছিল না। শুক্রবার দিনের শুরুতে এত মানুষ আসবে ভাবতেই পারিনি। দর্শনার্থীদের জন্য যেসব উপহার সামগ্রী আনা হয়েছিল, দুপুরের মধ্যেই সব শেষ হয়ে যায়। পরে জরুরি ভিত্তিতে আবার আনানো হয়।
আয়োজকরা জানান, গত বছরের মেলায় প্রায় ৫০ হাজার দর্শনার্থীর সমাগম হয়েছিল। এবার তার চেয়ে বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। মেলার প্রথম দিন প্রায় পাঁচ হাজার দর্শনার্থীর সমাগম হয়। দ্বিতীয় দিনে সাত হাজারের মতো দর্শনার্থী আসেন। তবে গতকাল জুমার নামাজের আগেই ছয় হাজারের মতো দর্শনার্থী মেলা ঘুরে যান। সারা দিনে ১৫-২০ হাজার দর্শনার্থী মেলায় আসেন। শনিবার শেষ দিনেও প্রচুর দর্শনার্থী আশা করা হচ্ছে।
প্রদর্শনীতে পোশাক খাত-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি যেমনÑ ডায়িং মেশিন, পণ্য বহনের ট্রলি, হিট এক্সচেঞ্জার, মিক্সচার ট্যাংক, ইন্ডাস্ট্রিয়াল র্যাক, কাটিং রিলাক্সজেশন র্যাক, হাইড্রো এক্সটেকটার, জ্বালানি সাশ্রয়ী বয়লার, গার্মেন্টে ব্যবহৃত সুতা, স¦য়ংক্রিয় সেলাই ও কাটিং মেশিন, আয়রন মেশিন, ইলেকট্রনিক আইলেট বাটন হোল মেশিন, লে গোল্ড ইলাস্টিক জয়েনিং মেশিন, অটোমেটিক রিব কাটিং মেশিন, আয়রন উইথ টেবিল মেশিন, ডিজিটাল টেক্সটাইল ময়েশ্চার মিটার মেশিন, মলিকুলার সিভ, অ্যাকটিভেটেড কার্বন ওডর বা অ্যান্টি স্মেলের মতো পণ্য প্রদর্শিত হচ্ছে। প্রদর্শনী উপলক্ষে আইসিসিবির বিশাল হলগুলো ছাড়াও অস্থায়ী বেশ কয়েকটি টেন্ট বানানো হয়েছে। আজ সন্ধ্যা ৭টায় শেষ হবে প্রদর্শনী।